-->
যানজট নিরসন

ঢাকার সড়কে বসছে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
ঢাকার সড়কে বসছে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম

রাজধানী ঢাকার যানজট কমাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই উদ্যোগ চলতি বছর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রস্তুতির কারণে এটি বাস্তবায়নে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার চারটি মোড়ে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে বসবে ট্রাফিক সিগন্যাল। এসব সিগন্যাল তৈরি করছে বুয়েট। আগামী এক মাসের মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের চারটি মোড়ে এসব ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানোর কথা থাকলেও দাপ্তরিক জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লাগবে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ও ড. হাদিউজ্জামানের ছয়টি সুপারিশের ভিত্তিতে রাজধানীর যানজট নিরসনের কাজ করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। এর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার চারটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিগন্যালগুলো তৈরি ও পরিচালনায় প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে বুয়েট।

ছয়টি সুপারিশের পাঁচটি সুপারিশ নিয়ে রাস্তায় কাজ করবে ট্র্যাফিক পুলিশ। আর পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজধানীতে স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক সিগন্যাল ফিরিয়ে আনতে সেগুলো বানানো ও ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে বুয়েট। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার চারটি মোড়ে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে বসবে ট্রাফিক সিগন্যাল। এসব সিগন্যাল তৈরি করছে বুয়েট। আগামী এক মাসের মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের চারটি মোড়ে এসব ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর কথা বলা হয়েছে।

ড. হাদিউজ্জামান বলেন,‘প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনকে দরপত্র আহ্বান, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন এবং আরএসটিপি অনুমোদনের মতো দাপ্তরিক কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ, তবে প্রকল্প শুরু করতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন।

ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, সার্ক ফোয়ারা এবং ফার্মগেট মোড়ে সিগন্যাল স্থাপনের কাজ চলতি তিন মাসে সম্পন্ন হবে। এই সিগন্যাল ব্যবস্থা ম্যানুয়ালি ও স্বয়ংক্রিয় উভয়ভাবেই পরিচালনা করা যাবে। প্রাথমিকভাবে ওয়াকিটকির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তবে ভবিষ্যতে রিমোট কন্ট্রোল সুবিধা যুক্ত করা হবে। বুয়েটের ডিজাইন করা সিস্টেমের মাধ্যমে ডিফল্ট ফেজ টাইম নির্ধারণ এবং প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে। মাটি না খনন করে এইচডিডি পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি সিগন্যালের জন্য সাড়ে ১০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণে মাসে খরচ হবে দেড় লাখ টাকা। দুই সিটি করপোরেশন আলাদা আলাদা প্রকিউরমেন্ট করবে এবং বুয়েট প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে হাইকোর্ট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ২২টি জংশনে চালু হবে। প্রথম ধাপে চারটি মোড়ে কাজ শেষ হলে পরবর্তী তিন মাসে বাকি ১৮টি মোড়ে সিগন্যাল স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি পরিচালনায় বুয়েট থেকে প্রশিক্ষিত একজন অপারেটর থাকবে, যিনি স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

বুয়েটের দুই বিশেষজ্ঞের একজন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, এই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সিটি করপোরেশন। এর জন্য সিটি করপোরেশন থেকে পরিমার্জিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা আরএসটিপি অনুমোদন করতে হবে। সিটি করপোরেশনকে বৈদ্যুতিক লাইন, মাটি খনন করাসহ অন্যান্য বিষয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করতে হবে। বিষয়গুলো অফিশিয়ালি হতে হবে। এই প্রকল্পে বুয়েটকে সম্পৃক্ত করতে হলে তাদের প্রস্তাবনা দিতে হবে। সব মিলিয়ে ছয় মাস সময় লাগবে। তবে যেহেতু প্রধান উপদেষ্টার অগ্রাধিকার রয়েছে সেহেতু তিন মাসের মধ্যে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তিনি জানান, তারা তাদের দিক থেকে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছেন। ট্রাফিক পদ্ধতি চালু করার জন্য মাঠে যে তার (ওয়্যার) বসানো হবে সেটিও ঠিক করে রেখেছেন তারা।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, বুয়েট থেকে পাওয়া আর্থিক প্রস্তাব প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। এই পাইলট প্রকল্প সফল হলে তা ঢাকার যানজট নিরসনে একটি কার্যকরী মডেল হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার সঠিক বাস্তবায়ন পথচারী এবং যানবাহন চলাচলকে সুশৃঙ্খল করতে ভূমিকা রাখবে। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ এবং সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version