-->

শান্ত-জয়ের ব্যাটে উজ্জ্বল দিন

মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
শান্ত-জয়ের ব্যাটে উজ্জ্বল দিন

প্রতিকূল পরিবেশ। তীব্র ঠান্ডা। এর ওপর কিউই পেসারদের আগুন ঝড়ানো বোলিং। নিউজিল্যান্ড সফর মানেই বাংলাদেশের জন্য এক রাশ হতাশা, হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া। ইতিহাস তেমনই বলে। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে চলমান টেস্ট সিরিজে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। তামিম-সাকিবহীন বাংলাদেশও বিদেশের মাটিতে লড়াই করতে জানে, মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় দিনের চিত্র তেমন বার্তাই দিচ্ছে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়ের নির্ভরতার ব্যাটিং স্বস্তির সঙ্গে দিচ্ছে বাড়তি আত্মবিশ্বাস।

বে ওভালে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম দিনে ৫ উইকেটে ২৫৮ রান করা নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেই অলআউট ৩২৮ রানে। প্রথম ইনিংসের ব্যাট করতে নেমে দিনটা বেশ উজ্জ্বল বাংলাদেশের। শান্ত ও জয়ের ফিফটিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৭৫ রান। ১৫৩ রানে পিছিয়ে থাকলেও সফরকারীদের মুখে এক চিলতে হাসি।

ছক্কা হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করে শান্ত সাজঘরে ফিরলেও তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় ধাবিত হচ্ছেন সেঞ্চুরির দিকে। দ্বিতীয় টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির পর ৭০ রানে অপরাজিত তিনি। বল খরচ করেছেন ২১১। নিউজিল্যান্ডে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ওপেনার খেলতে পারল ২০০ বল। মাহমুদুলের সঙ্গে শতরানের জুটির অংশীদার শান্ত ফেরেন ৬৪ রান করে। প্রায় ৪০ ওভার খেলে এই দুজনের জুটিতে রান আসে ১০৪।

মাহমুদুল হাসান জয় অবশ্য অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংসে জীবন পেয়েছেন কয়েকবার। নিউজিল্যান্ডের জন্য হয়তো সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে রিভিউ না নেওয়া। রিভিউ নিলেই ২০ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হতো মাহমুদুলকে। এছাড়া বেশ কবার ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন তিনি। দুয়েকবার বেঁচে যান ‘প্লেড অন’ হতে হতে। তবে তার কৃতিত্বও কম না। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় উইকেট আঁকড়ে রেখে তিনি ধরে রাখেন দলের হাল। ওয়াগনার, বোল্ট, জেমিসনদের বোলিং তোপ তিনি সামলেছেন দৃঢ়-অটল চিত্তে।

নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে গুটিয়ে দেয়ার পর বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ছিল মূলত ব্যাটিংয়ে। সেই শঙ্কা দূর করেন শুরুতে সফল সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয় ধীর স্থিও ব্যাটিংয়ে। ১৯তম ওভারে গিয়ে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পানি পানের বিরতির পর প্রথম বলেই উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন করেন নেইল ওয়াগনার। নিচু ফুলটস বলে ফ্লিক করতে গিয়ে আগেভাগেই ব্যাট ঘুরিয়ে ফেলেন সাদমান। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা বলটিকে ঝাঁপিয়ে তালুবন্দি করেন ওয়াগনার। ৫৫ বলে এক চারে ২২ রান করে ফেরেন সাদমান।

ওপেনিং জুটিতে আসে ৪৩ রান। এর পরপরই আরেকটি উইকেট হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ। ওয়াগনারের ওই ওভারেই একটুর জন্য স্লিপে রস টেইলরের হাতে যায়নি শান্তর ক্যাচ। ওয়াগনারের পরের ওভারে নিউজিল্যান্ড রিভিউ নিলে ফিরে যেতে হতো মাহমুদুলকে।

ভাগ্য ভালো ছিল। সঙ্গে ছিল শান্ত ও জয়ের টেস্ট মেজাজ। ফলে গড়ে ওঠে দারুণ জুটি। দ্বিতীয় সেশনে ৬৫ রান যোগ করা সফরকারীরা তৃতীয় সেশনে শান্তর উইকেট হারিয়ে যোগ করে ১০৫ রান। তৃতীয় সেশনের প্রথম ওভারে বোল্টকে চার মেরে শুরু করেন শান্ত। থিতু হওয়ার পর দারুণ সাবলিল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কাইল জেমিসনকে অন ড্রাইভে মারা তার বাউন্ডারিটি দুই দল মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত এই টেস্টের সেরা শটগুলোর একটি।

রাচিন রবীন্দ্রকে সুইপে ছক্কা হাঁকিয়ে ৯০ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন শান্ত। জুটির রান তিন অঙ্ক স্পর্শ করে ২২৬ বলে। জুটির একশ’ হওয়ার পর ওয়াগনারের ফাঁদে পা দিয়ে শেষ হয় শান্তর পথচলা। দলীয় রান তখন তখন ১৪৭। শর্ট বলের আশায় ব্যাকফুটে থাকা শান্ত পা না বাড়িয়েই বল তাড়া করে ধরা পড়েন গালিতে। ১০৯ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় করেন তিনি ৬৪।

এরপর অবশ্য রবীন্দ্রর বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১৬৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মাহমুদুল। আসে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি। দুয়েকটি নার্ভাস মুহূর্ত যদিও এসেছে ফিফটির পর। তবে জয় ছিলেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মুমিনুল হকের সঙ্গে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন নির্বিঘ্নে। ৭০ রানে জয়ের সঙ্গে দিন শেষে অধিনায়ক মুমিনুল হক অপরাজিত ২৭ বলে ৮ রানে। এর আগে দিনের শুরুতে ৫ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। বাকি পাঁচ উইকেটে দলটি সংগ্রহ করতে পারে ৭০ রান। ৩২৮ রানে দলটির অলআউটের ঘটনা দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন।

আগের দিনে অপরাজিত থাকা হেনরি নিকোলসকে বিদায় করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। ১২৭ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেন তিনি। নিকোলসের ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সৌম্য সরকারের চার ক্যাচের রেকর্ড স্পর্শ করেন সাদমান ইসলাম। প্রথম দিনে কিউইদের হয়ে সেঞ্চুরি করা ডেভন কনওয়েকেও সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন মুমিনুল।

দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন মেহেদী হাসান। হ্যাটট্রিকের আশাও জাগিয়েছিলেন এই স্পিনার। তবে সে সম্ভাবনায় জল ঢালেন ট্রেন্ট বোল্ট। তারপরও দিন শেষে মিরাজের বোলিং চকচকে। ৩২ ওভারে তার মেডেন নয়টি। ৮৬ রানে নিয়েছেন তিন উইকেট। ইকোনমি রেট ২.৬৮। সবচেয়ে ভালো বোলিং ফিগার অবশ্য পেসার শরিফুলের। ২৬ ওভারে ৬৯ রানে তিনিও নেন তিন উইকেট। ইকোনমি রেট ২.৬৫। ভালো বোলিং করেছেন তাসকিনও। ২৬ ওভারে ৭৭ রান দিয়েছেন তিনি। তবে উইকেটের দেখা পাননি তিনি। মুমিনুল দুটি ও ইবাদত হোসেন নেন একটি উইকেট।

বাংলাদেশের হাতে আট উইকেট। স্কোরটা যত সমৃদ্ধ করা যায়, সে দিকেই খেয়াল থাকবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। দ্বিতীয় দিনের টেস্ট মেজাজ যদি তৃতীয় দিনেও অব্যাহত থাকে তাহলে অনুমেয়ভাবে স্কোরটা ফুলেফেঁপে উঠবে। যা বাংলাদেশের জন্য হবে পরম স্বস্তির, সঙ্গে আনন্দেরও।

মন্তব্য

Beta version