-->
শিরোনাম
হ্যাগলিতে চোখ রাঙাচ্ছে সবুজ উইকেট

দ্বিতীয় টেস্টে রোববার নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, ম্যাচ শুরু ভোর ৪টায়

ক্রীড়া প্রতিবেদক
দ্বিতীয় টেস্টে রোববার নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, ম্যাচ শুরু ভোর ৪টায়

গোটা দল ফুরফুরে। অনুশীলনও হচ্ছে ভালো। প্রথম টেস্ট জয়ের স্মরণীয় কীর্তি ক্রিকেটারদের করেছে প্রবল আত্মবিশ^াসী। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের আগে তাই টগবগে ফুটছে মুমিনুল ব্রিগেড। আগামীকাল ভোরে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস।

নিউজিল্যান্ডের উইকেট মানেই সবুজে ঢাকা, যাতে থাকে দুর্দান্ত বাউন্স। এমন উইকেটে শতভাগ সাফল্য আদায় করে থাকেন কিউই পেসাররা। সেই হিসেবে মাউন্ট মঙ্গানুইতে তেমন উইকেট দেখা যায়নি। ফলে নিউজিল্যান্ডের পেসাররা স্বরূপে ফিরতে পারেননি। কিংবা বলা যেতে পারে, সেই সুযোগটা দেয়নি বাংলাদেশের ব্যাটাসম্যানরাও। তবে দ্বিতীয় টেস্টের আগে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে। কারণ এখানকার উইকেট মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানে পেসাররা রাজত্ব করবে, তা সহজেই অনুমেয়। ফলে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় টেস্ট তাই বেশ চ্যালেঞ্জিং।

ক্রাইস্টচার্চে অবশ্য বোলারদের কাজ সহজ হবে, ব্যাটসম্যানদের কাজ হবে কঠিন। উইকেট দেখে নিউজিল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যান রস টেইলর তেমনই মনে করছেন। হ্যাগলি ওভালের উইকেটে বাউন্স সবসময়ই বেশ। সঙ্গে ঘাসও থাকবে অনেক, গতকাল সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টেইলর বলেন, ‘এই মাঠ আমরা খুব ভালোভাবে চিনি। আমার মনে হয়, মাউন্টে (আগের টেস্টের ভেন্যু) কীভাবে খেলা উচিত, আমরা এখনো তা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু এখানকার উইকেট সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনেক বেশি। আমার মনে হয়, এখানে বাউন্স থাকবে ও বল ভালোভাবে কিপারের কাছে যাবে পুরো সময়ই। অনেক ঘাস থাকবে এখানে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বোলারদের জিভে জল চলে আসবে উইকেট দেখে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের আরো বেশি নিবেদন দেখাতে হবে গত টেস্টের চেয়ে। তবে আমাদের ব্যাটাররা এই কন্ডিশনে অনেক অভ্যস্ত, বোলাররাও।’ এই টেস্ট দিয়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ডে ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে স্পর্শ করবেন টেইলর (১১২)। তবে রেকর্ডটি শুধু নিজের করে নেওয়া হবে না। সিরিজ শুরুর আগেই তিনি ঘোষণা করেছেন, এই সিরিজই শেষ। ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট তাই তার বিদায়ী টেস্ট।

১৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে অনেক আবেগ তার মনে খেলে যেতে পারে। তাতে স্বাভাবিক পারফরম্যান্স বাধাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগও থাকে। দল হেরে যাওয়ায় এখন টেইলরের বিদায়ের চেয়ে দলীয় লক্ষ্যে নজর থাকবে বেশি, এটিকে তিনি মনে করছেন দারুণ ইতিবাচক।

তার মতে, ‘ক্রিকেট আবার জীবনের বড় অংশ। সবসময়ই টেস্ট ক্রিকেট খেলতে উপভোগ করেছি। তবে সিরিজের বাস্তবতার কারণেই হয়তো কাজটা সহজ হবে (আবেগ দূরে রাখা)। আমরা জানি, ১-০তে পিছিয়ে আছি, আমাদের জিততেই হবে, শুধু সিরিজ বাঁচাতে নয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্টের জন্যও। মনোযোগ তাই সেখানে, যা খুব খারাপ ব্যাপার নয়।’

হ্যাগলি ওভালে এ পর্যন্ত আট টেস্ট খেলে মাত্র একটিতে হেরেছে নিউজিল্যান্ড। মাউন্ট মঙ্গানুই ছিল সে তুলনায় নিউজিল্যান্ড দলের জন্যই নতুন মাঠ। এখানকার কন্ডিশনে খেলার ধাঁচটা পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। অথচ সেখানেই স্বপ্নের মতো কেটেছে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট। প্রায় একদিন হাতে রেখে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৮ উইকেটে। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড করেছিল ৩২৮ রান। জবাবে বাংলাদেশ চার ফিফটিতে করে ৪৫৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে বাংলাদেশ ছিল দুরন্ত। বিশেষ করে চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় ইবাদত হোসেনের অবিশ^াস্য এক স্পেলে ম্যাচের লাগাম চলে আসে বাংলাদেশের হাতে। যে ম্যাচ ড্র হওয়ার কথা ছিল সেখানে বাংলাদেশ পায় জয়ের সুবাস। ৫ উইকেটে ১৪৭ রানে চতুর্থ দিন শেষ করা নিউজিল্যান্ড শেষ দিনে বাকি উইকেটে তুলতে পারে মাত্র ২২ রান। বাংলাদেশের জয়ের জন্য টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৪০ রান। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্পর্শ করে মাত্র দুই উইকেটে। জয় আসে ৮ উইকেটে।

এই জয় বাংলাদেশের জন্য ছিল বিশেষ। টেস্টে কিউইদের বিরুদ্ধে প্রথম জয়। সবচেয়ে বড় অর্জন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে প্রথম জয়। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আগের ৩২ ম্যাচে সব কটিতে হারা বাংলাদেশ এবার দীর্ঘদিনের জয়খরা কাটায়। শুধু তাই নয়, টেস্টে এই জয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা জয়গুলোর মধ্যেও একটি।

প্রথম টেস্ট জিতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে না বাংলাদেশ দল। মমিনুলদের লক্ষ্য এখন ক্রাইস্টচার্চে। শেষ টেস্টটি অন্তত ড্র করতে পারলেও প্রথমবারের মতো সিরিজ জয় করে দেশে ফিরতে পারবে বাংলাদেশ দল। এ কারণে অধিনায়ক মমিনুল হক বলেছেন, ‘প্রথম টেস্ট জয়ের স্মৃতি ভুলে যেতে চাই। চোখ রাখতে চাই দ্বিতীয় টেস্টে।’

ক্রাইস্টচার্চে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ দলের। সেটিও আজ থেকে চার বছর আগে। ২০১৭ সালে এই ভেন্যুতে ৯ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে এই ভেন্যুতে একটি টেস্ট ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের, কিন্তু তা হয়নি। ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এক বন্দুকধারীর হামলায় হতাহত হন অনেকে। অল্পের জন্য বেঁচে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। ফলে সেই টেস্ট না খেলেই দেশে ফিরতে হয়েছিল তামিমদের।

দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের স্কোয়াডে আসবে পরিবর্তন। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ইনজুরির কারণে দলের বাইরে। তার পরিবর্তে দলে ঢুকতে পারেন নাঈম শেখ। সব কিছু ঠিক থাকলে সাদমানের সঙ্গে ওপেনও করতে পারেন তিনি। বাংলাদেশের সামনে নতুন ইতিহাস গড়ার হাতছানি। আর তা হলো প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয় করে ফেরা। যদিও সেই কাজটি করা খুবই কষ্টসাধ্য হবে। প্রথমত, হ্যাগলির উইকেট, দ্বিতীয়ত দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের জন্য মরণপণ লড়াই করবেন লাথামরা। কিন্তু তারপরও মুমিনুলদের দিকে সবার আশাভরা চোখ। ভালো কিছু হোক ক্রাইস্টচার্চেও। মাথা উঁচু করে দেশে ফিরুক মুমিনুল ব্রিগেড।

মন্তব্য

Beta version