ইতিহাস গড়া থেকে আর মাত্র এক পদক্ষেপ দূরে দাঁড়িয়ে ফ্রেঞ্চ ওপেন স্পেশালিস্ট রাফায়েল নাদাল। পুরুষ এককে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী খেলোয়াড় হওয়ার হাতছানি এ স্প্যানিয়ার্ডের সামনে। আর একটা মাত্র ম্যাচ জিততে পারলেই নাদাল হবেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী পুুরুষ টেনিস তারকা। ফ্রেঞ্চ ওপেনের একচ্ছত্র অধিপতি নাদাল সে লক্ষ্যে রোববার দানিল মেদভেদেভের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে কোর্টে নামবেন।
নাদাল শুক্রবার সেমিফাইনালে ইতালির মাতেও বেরেত্তিনিকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে রুশ তারকা মেদভেদেভ সেমিফাইনালে হারিয়েছেন গ্রিক তারকা তিতসিপাসকে। মেদভেদেভ শুক্রবার অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে ৭-৬(৭-৫), ৪-৬, ৬-৪ ও ৬-১ গেমে ম্যাচ জেতেন। অন্যদিকে নাদাল সেমিফাইনাল জিতেছেন ৬-৩, ৬-২, ৩-৬ ও ৬-৩ গেমে।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের স্পেশালিস্ট নাদালের ভান্ডারে এ পর্যন্ত গ্র্যান্ড স্ল্যাম জমা রয়েছে ২০টি। রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচের ভান্ডারেও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যা ২০টি। ফলে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বাদটা এককভাবে পাচ্ছেন না নাদাল। রোববারের ফাইনাল জিতলে আর যুগ্মভাবে নয়, এককভাবে স্বাদটা নিতে পারবেন এ স্প্যানিয়ার্ড।
নাদালের জয় করা ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে ১৩টিই ফ্রেঞ্চ ওপেনে। চারটি জয় করেছেন ইউএস ওপেনে। দুটো উইম্বল্ডনে। আর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সংখ্যা মাত্র একটি। ২০০৯ সালে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপাটি জয় করেন নাদাল। তারপর চারবার ফাইনালে উঠলে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। ২০১৯ সালের পর এবার আবার ফাইনালে উঠেছেন। আবার সম্ভাবনা তৈরি করেছেন শিরোপা উৎসব করার।
ফাইনাল নিশ্চিত করার পর নাদাল বলেন, ‘সেমিফাইনালের প্রথম দুই সেট আমি খুব ভালো খেলেছি। আমার সেরা খেলাগুলোর অন্যতম এটি। প্রতিপক্ষ ছিল খুবই কঠিন, বিশ্বের সেরাদের একজন সে। আমাকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে, অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যাহোক শেষ পর্যন্ত আমি ফাইনালে পৌঁছাতে পেরেছি।’নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে নাদাল আরও বলেন, ‘যে পর্যায়ে আমি যেভাবে খেলছি তা সত্যিই চমৎকার। সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসে বিশ্বের সেরা সেরা খেলোয়াড়দের বিপক্ষে আমি যেভাবে খেলেছি তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
এবার নিয়ে নাদাল ২৯বারের মতো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছেন। জিতেছেন ২০ বার। তবে এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনই তার জন্য সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা। কেননা আর কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামে এত বেশিবার ফাইনালে হতাশায় ডুবতে হয়নি। এর আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চারবার ফাইনালে ব্যর্থ হয়েছেন। উইম্বলডনে তিনবার ফাইনালে হতাশায় ডুবতে হয়েছে। আর ইউএস ওপেনে একবার।
এবার অবশ্য ফাইনালে ওঠার স্বপ্নই দেখেননি নাদাল। কেননা মাত্র কয়েক মাস আগে পায়ের ব্যথা তাকে খুব কাবু করে ফেলেছি। অবস্থা এতটা নাজুক হয়েছিল যে, আর কোর্টে ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে নাদালের শঙ্কা ছিল।
গ্র্যান্ড স্ল্যামের লড়াইয়ে যেমন নাদাল অভিজ্ঞ সে তুলনায় মেদভেদেভকে অনভিজ্ঞ বলা যায়। মাত্র একবারই তিনি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউএস ওপেন জয়ের মাঝ দিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের প্রথম অভিজ্ঞতা পান তিনি। তবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে যথেষ্ঠ অভিজ্ঞ তিনি। গত বছরও এ টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছিলেন। তবে নোভাক জোকোভিচের কাছে হার মানতে হয়েছিল তাকে। জোকোভিচ অবশ্য এবারের টুর্নামেন্টে খেলেননি। করোনাভাইরাসের টিকা না নেওয়ায় আয়োজকরা তাকে খেলার অনুমতি দেয়নি।
নাদালের বিপক্ষে মেদভেদেভের খেলার অভিজ্ঞতাটা তেমন সুখকর নয়। ২০১৯ সালের ইউএস ওপেনের ফাইনালে নাদালের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেদভেদেভ। সে ম্যাচে তাকে হারের তিক্ত স্বাদ উপহার দিয়েছিলেন নাদাল। সে বিচারে এবার মেদভেদেভের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ। আর সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য দারুণ সম্ভাবনাও রয়েছে মেদভেদেভের সামনে। কেননা নাদাল এখন আর সেই নাদাল নাই। তিন বছর পরে নাদালের বয়স ৩৫, আর মেদভেদেভ কেবল পঁচিশে পা দিয়েছেন। তাই অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকলেও তারুণ্যের শক্তিতে নিঃসেন্দেহে মেদভেদেভ এগিয়ে থাকবেন।
মন্তব্য