বল হাতে শুরুতেই কাঁপন ধরালেন আফগান স্পিনার মুজিব-উর রহমান। শেষটা করলেন মেহেদী হাসান রানা। সব মিলিয়ে ফরচুন বরিশালের সামনে খেই হারিয়ে ফেলল খুলনা টাইগার্স। মাঝে মুশফিক, ইয়াসির ও পেরেরা দলকে জয়ের আশা দেখালেও শেষটা তাদের প্রবল হতাশার। ১৭ রানের দারুণ জয়ে বিপিএলের লড়াইয়ে ফিরল সাকিবের বরিশাল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার আগে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৪১ রান করে বরিশাল। জবাবে ১৯ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট খুলনা। বল হাতে দারুণ নৈপুণ্য দেখানো বরিশালের মেহেদী হাসান রানা জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। চার ম্যাচে বরিশালের এটি দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে সমান ম্যাচে খুলনার এটি দ্বিতীয় হার।
১৪২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে খুলনা। বল হাতে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ঝলক দেখান বরিশালের আফগান স্পিনার মুজিব-উর রহমান। তৃতীয় বলে ফেরান ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারকে। তিন বলে চার রান করা ফ্লেচার ক্যাচ দেন জিয়াউরের হাতে। পরের বলেই আউট সৌম্য সরকার। মারেন গোল্ডেন ডাক। দলীয় ৫ রানে ২ উইকেট হারানো খুলনাকে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন রনি তালুকদার ও মেহেদী হাসান। খণ্ড জুটিতে দলের সাময়িক বিপদ কাটে। কিন্তু দলীয় ৪০ রানের মধ্যে এ দুজনই ফেরেন সাজঘরে। মেহেদী হাসানকে ফেরান বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। স্টাম্পিংয়ের শিকার হন মেহেদী ব্যক্তিগত ২৩ বলে ২১ রানের মাথায়। তার ইনিংসে ছিল সমান একটি করে চার ও ছক্কা। এর কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন রনি তালুকদার। ১৬ বলে এক ছক্কায় ১৪ রান করে লিনটটের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ৪০ রানে চার উইকেট হারানো খুলনা তখন অনেকটাই বেসামাল। বিরূপ পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও ইয়াসির আলী।
এ জুটি দলকে নিয়ে যান ৮৬ রান পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত এ জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান রানা। বোল্ড করেন ২০ বলে ২৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলা ইয়াসির আলীকে। তার ইনিংসে ছিল সমান একটি করে চার ও ছক্কা। এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। এ জুটিই অনেকটা বল-রানের ব্যবধান অনেকটা কমিয়ে আনে। ৩০ বলে খুলনার দরকার ছিল ৫৩ রান। ১৬তম ওভারে মুজিব-উর রহমানকে এক চার ও এক ছক্কা হাঁকান পেরেরা। সব মিলিয়ে এ ওভারে আসে ১২ রান। ২৪ বলে দরকার তখন ৪১ রান। ১৭তম ওভারে লিনটটের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন পেরেরা। ৯ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ১৯ রান করে পেরেরা। পরের ওভারে দুই বলে তিন রান করে লিনটটের বলে বিদায় নেন সেকুজে প্রসন্ন। এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলছিলেন মুশফিক। ১২ বলে দরকার তখন ২১ রান। ম্যাচ দুলছে পেন্ডুলামের মতো। মুশফিকের সঙ্গী তখন ফরহাদ রেজা। ১৯তম ওভারে মেহেদী রানার দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ফরহাদ রেজা। রিভিউ চেয়েও কাজ হয়নি। একই ওভারের পঞ্চম বলে খুলনা হারায় নবম উইকেট। দুই বলে এক রান করে সাজঘরে ফেরেন শরিফুল্লাহ।
১৯তম ওভারের শেষ বলে চমক দেখান মেহেদী রানা। উইকেট কিপারের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মুশফিক ক্যাচ দেন নুরুল হাসানের গ্লাভসে। এক ওভার হাতে থাকতেই খুলনা অলআউট হয়ে যায়। ইনিংস সর্বোচ্চ রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে। ৩৬ বলে সমান এক চার ও ছক্কায় ৪০ রান করেন তিনি। বল হাতে ৩ ওভারে ১৭ রানে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন বরিশালের মেহেদী রানা। মুজিব ও জ্যাক লিনটট নেন দুটি করে উইকেট। শফিকুল ও সাকিব পান একটি করে উইকেট। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বেশ মারমুখি ছিলেন বরিশালের দুই ওপেনার জ্যাক লিনটট ও ক্রিস গেইল। উদ্বোধনী জুটিতে দুজনে তোলেন ২৬ রান। ৬ বলে দুই চারে ১১ রান করে শরিফুল্লার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন লিনটট। জিয়াকে সঙ্গে করে রানের চাকা সচল রাখেন ক্যারিবীয়ন তারকা গেইল। দলীয় ৬৪ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন। গেইল রান পেলেও জিয়া ফেরেন ১৩ বলে এক ছক্কায় ১০ রান করে। কামরুলের বলে মেহেদীর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। বরিশালের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ রান গেইলেরই।
জিয়ার বিদায়ের পর টিকতে পারেননি গেইলও। ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে তিনি প্রসন্নর শিকার। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন সৌম্যর হাতে। ৩৪ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান ক্যারিবীয়ন হার্ড হিটার। এরপর দ্রুত ফেরেন কিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানও। ১১ বলে ৮ রান করে তিনি মেহেদীর বলে ক্যাচ দেন সৌম্যর হাতে। এরপর রানের চাকা ঘুরান নাজমুল হাসান শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। দলীয় ১২২ রানে সাজঘরে ফেরেন হৃদয়। ফরহাদ রেজার বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ২১ বলে ২৩ রান। ক্রিজে আসা অধিনায়ক সাকিব ব্যাট হাতে এদিনও ব্যর্থ। ৬ বলে দুই চারে করেন তিনি ৯ রান। পেরেরার বলে ক্যাচ দেন ফ্লেচারের হাতে। এরপর পেরেরার বলে বোল্ড শান্ত। ১৫ বলে তার রান ১৯, চার দুটি। লেজের সারির ব্যাটাররা তেমন ভালো করতে পারেননি। ইরফান শুকুর করেন ২ রান। আফগান স্পিনার মুজিব ৯ বলে করেন ৭ রান। বল হাতে খুলনার সব বোলারই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। কামরুল ইসলাম, থিসারা পেরেরা, ফরহাদ রেজা নেন দুটি করে উইকেট। মেহেদী হাসান, শরিফুল্লাহ ও প্রসন্ন পান একটি করে উইকেটের দেখা। চার ম্যাচে সমান দুই জয় ও হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে বরিশাল। সমান ম্যাচে দুই হার ও দুই পরাজয়ে খুলনার পয়েন্টও ৪। দলটির অবস্থান চতুর্থ স্থানে।
মন্তব্য