৬ বলে দরকার ৯ রান। টি-টোয়েন্টিতে এমন লক্ষ্য আহামরি নয়। হাতেও তখন পাঁচ উইকেট। ক্রিজে হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান থাকতেও এমন সমীকরণ মেলাতে পারেনি মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর ক্যারিশমাটিক বোলিংয়ে শেষ ওভার রোমাঞ্চে ম্যাচ জিতেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তিন ম্যাচ পর তিন রানের দারুণ জয়ে প্লে অফের লড়াইয়ে ফিরে আসল চট্টলা শিবির।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে ঢাকা পৌঁছাতে পারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রানে। ব্যাট হাতে চট্টগ্রামের হয়ে দারুণ ফিফটি করার শামীম হোসেন পাটোয়ারি জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ৯ ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম। আট ম্যাচে তিন জয় ও চার হারে সাত পয়েন্ট পাওয়া ঢাকা নেমে গেছে পঞ্চম স্থানে।
শেষ ওভারে ছিল রোমাঞ্চের ছোঁয়া। ঢাকার দরকার তখন ৬ বলে ৯ রান। ক্রিজে তামিম ও কায়েস। স্ট্রাইকে কায়েসকে প্রথম বলেই বোল্ড করেন দেন চট্টগ্রামের পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। পরের দুই বলে কোনো রানই নিতে পারেননি নতুন ব্যাটার মোহাম্মদ নাঈম। এরপর একটি ওয়াইড। চতুর্থ বলে নাঈম নিতে পারে এক রান। স্ট্রাইকে তখন তামিম। অনেক ভরসার জায়গা। পঞ্চম বল ব্যাটে স্পর্শ করতে পারেননি তামিম। দৌড়ে নেন এক বাই। পরেরটি নো বল। শেষ বলে আসে নাঈমের ব্যাটে এক রান। তিন রানের রুদ্ধশ্বাস জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
অথচ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ঢাকার শুরুটা ছিল বড্ড বাজে। ২০ রানের মধ্যে হারায় তিন উইকেট। একে একে সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ শাহজাদ (৭), ইমরান উজ্জামান (৮) ও মাশরাফি (০)। এরপর দলের হাল ধরেন এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও তামিম। দুজনে দলকে নিয়ে যান ৯২ রান পর্যন্ত। ২৯ বলে ২৪ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।
এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন তামিম। এর মধ্যে পেয়ে যান ফিফটির দেখা, ৩৯ বলে। শুভাগত হোমের সঙ্গে তামিমের এই জুটি দলকে নিয়ে যায় ১৩৫ রান পর্যন্ত। ম্যাচ তখন অনেকটাই ফিফটি-ফিফটি। জিততে পারে যেকোনো দল। শেষ ওভারে দরকার পড়ে ৯ রান। সেই সমীকরণ মেলাতে পারেনি তামিম ও নাঈম। হারতে হয় খুব কাছাকাছি গিয়েও।
৫৬ বলে ছয়টি চার ও তিন ছক্কায় ৭৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। ৫ বলে দুই রান করেন নাঈম। বল হাতে চট্টগ্রামের হয়ে শরিফুল ও মৃত্যুঞ্জয় দুটি, নাসুম ও মিরাজ নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টসের সময় নাটক দেখায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ঢাকা পর্বে প্রথমে অধিনায়ক ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চার ম্যাচ পর তাকে সরিয়ে অধিনায়ক করা হয় নাঈম ইসলামকে। এবার সিলেট পর্বে আবার অধিনায়ক বদল। নাঈমের পরিবর্তে ঢাকার বিরুদ্ধে ম্যাচে দেখা যায় নতুন অধিনায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুবকে।
নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি চট্টগ্রামের। দলীয় ৯ রানে ওপেনার জাকিরকে (১) ফেরান ঢাকার নতুন আফগান বোলার ফজল হক ফারুকি। উইল জ্যাকস ও অধিনায়ক আফিফ হাল ধরেন এরপর।দলীয় ৪৯ রানে এই জুটি ভাঙেন আরফাত সানি। শাহজাদের স্টাম্পিংয়ের শিকার হন ২৪ বলে তিন চারে ২৬ রান করা জ্যাকস। এরপর দ্রুত আরো দুই উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। মাশরাফির বলে সাজঘরে ফেরেন মেহেদী হাসান মিরাজ (২)। আফিফ হোসেনকে ফেরান ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৪ বলে চারটি চারে ২৭ রান করেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক।
এরপর অবশ্য চট্টগ্রামকে মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোরে নিয়ে যান শামীম ও বেনি হাওয়েল। ৩৭ বলে ৫২ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন শামীম। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও একটি ছক্কার মার। ১৯ বলে দুই ছক্কায় ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন হাওয়েল। ঢাকার হয়ে উইকেট পেয়েছেন সব বোলারই। একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি, ফারুকি, আরাফাত, এবাদত, কায়েস ও মাহমুদউল্লাহ।
রাউন্ড রবিন লিগে চট্টগ্রামের রয়েছে আর মাত্র একটি ম্যাচ। প্লে অফ নিশ্চিত করতে হলে সেই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই তাদের। অন্যদিকে প্লে অফে উঠতে শেষ দুই ম্যাচেই জিততে হবে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকাকে। তবে শেষ দুই ম্যাচে ঢাকার প্রতিপক্ষ বেশ শক্তিশালী, সাকিবের বরিশাল ও মুশফিকের খুলনা।
মন্তব্য