তীরে এসে তরি ডুবার ব্যবস্থা প্রায় হয়ে গিয়েছিল। ১২ বলে দরকার ১৫ রান। ১৯তম ওভারে খালেদ দেন স্রেফ চার রান। শেষ ওভারে ঢাকার দরকার ১১ রান। পেন্ডুলামের মতো দুলছে তখন ম্যাচ। খুলনার মুখে উল্টো চিলতে হাসি। ঢাকা শিবিরে পিনপতন নিরবতা। তবে প্রথম দুই বলে যা করে দেখালেন শুভাগত হোম, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য দুই ছক্কা। চার বল হাতে রেখে ঢাকার দারুণ জয়। খুলনাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের প্লে অফের দৌড়ে টিকে থাকল মাহমুদউল্লাহ শিবির।
আগের দিন যার বিদায় দিয়েই মূলত ঢাকার পতনের শুরু, সেই শুভাগত এবার দায়মোচন করেন। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলেই অসাধারণ দুটি ছক্কায় শেষ করে দেন খেলা। প্রথম বলটি তিনি আছড়ে ফেলেন সাইটস্ক্রিনে, পরেরটি আরো চোখ ধাঁধানো শটে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১২৯ রান করে খুলনা টাইগার্স। জবাবে ৪ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ঢাকা। ৩ ওভারে এক মেডেনে ১৫ রানে দুই উইকেট নেয়ার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান ঢাকার স্পিনার আরাফাত সানি। ৯ ম্যাচে সমান চার জয় ও হারে পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। প্লে অফ নিশ্চিত করতে হলে শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প নাই তাদের। তারপরও তাকিয়ে থাকতে অন্যান্য ম্যাচগুলোর দিকে। আট ম্যাচে সমান চারটি জয় ও হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে খুলনা টাইগার্স।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১২ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় ঢাকা। দ্বিতীয় ওভারে রুয়েল মিয়াকে তামিম চার ও ইমরান ছক্কা মেরে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে তামিমকে ৬ রানে লেগ বিফোর আউট করেন খুলনার বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদ। অন-ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দেয়ায় রিভিউ নেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিক। তৃতীয় আম্পায়ার তামিমকে আউট দেন। ঐ ওভারটি উইকেট মেডেন নেন নাবিল। পরের ওভারে পেসার খালেদ আহমেদের বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে নাবিলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ইমরান। তামিমের মতো ইমরানও করেন ৬ রান। শুরুর ধাক্কাটা সামলে উঠতে সাবধান ছিলেন ঢাকার জহিরুল ইসলাম ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তাই পাওয়ার প্লেতে ২৯ রানের বেশি পায়নি ঢাকা। পাওয়ার প্লে শেষে রান তোলার গতি বাড়ান জহিরুল ও মাহমুদুল্লাহ। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন তারা। এতে ১২ ওভার শেষে ৬৮ রান পায় ঢাকা। ১৩তম ওভারে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া জহিরুলকে বোল্ড করে খুলনাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন রুয়েল। ৩৫ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩০ রান করেন জহিরুল। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সাথে ৫৫ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তিনি।
জহিরুলের বিদায়ে উইকেটে এসে খালেদ আহমেদের করা ১৪তম ওভারে দুটি ছক্কা মারেন শামসুর রহমান। পেরেরার করা ১৬তম ওভার শামসুরের বাউন্ডারিতে শুরু হলেও শেষটা ভালো ছিল না ঢাকার। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে লং-অফে ইয়াসিরকে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খায় ঢাকা। ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৪ রান করেন অধিনায়ক। মাহমুদুল্লাহ যখন ফিরেন তখন ঢাকার ২৪ বলে ২৯ রান দরকার ছিল। ১৭তম ওভারে ৫ রান আসে। পেরেরার করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই আউট হন শামসুর। তবে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৪ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন শামসুর। শামসুরের বিদায়ের ওভারে ৯ রান আসায়, শেষ ১২ বলে ১৫ রানের প্রয়োজন পড়ে ঢাকার। খালেদের করা ১৯তম ওভার থেকে ৪ রানের বেশি নিতে পারেননি শুভাগত হোম ও আজমতউল্লাহ। এতে শেষ ওভারে জিততে ১১ রানের সমীকরণ পায় ঢাকা। শেষ ওভারে দারুণ দুই ছক্কায় বাজিমাত করেন শুভাগত হোম। ৯ বলে ১৮ রানে শুভাগত ও ৭ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন আজমতউল্লাহ। খুলনার পেরেরা ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বাজে অবস্থা ছিল খুলনার। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার আন্দ্রে ফ্লেচার, সৌম্য সরকার, জাকের আলী ছুতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। অধিনায়ক মুশফিকও রোধ করতে পারেননি এই বিপর্যয়। ১২ বলে ১২ রান করে তিনি ফেরেন সাজঘরে। ১৮ বলে ১৭ রানে ফেরেন মেহেদী হাসান। উইকেট যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলেছেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা। ৫০ বলে তিনি খেলেন ৬৪ রানের ইনিংস মেরামতি ইনিংস। তার ইনিংস সাজানো পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কায়। পেরেরা ১০ বলে করেন ১২ রান। রুয়েল মিয়া ৯ বলে থাকেন ৮ রানে অপরাজিত। বল হাতে ঢাকার হয়ে আরাফাত সানি ও আজমতউল্লাহ দুটি, রুবেল হোসেন, ফারুকি, কায়েস নেন একটি করে উইকেট। এই ম্যাচে চার পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েন মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাইম শেখ, এবাদত হোসেন ও আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ।
মন্তব্য