ব্যাট ও বল হাতে আলো ছড়ালেন মঈন আলী। পাশাপাশি সতীর্থরাও রাখলেন দারুণ অবদান। সব মিলিয়ে মিরপুরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে দেখা গেল দুরন্তরূপে। দলটির সামনে খেই হারাল খুলনা টাইগার্স। ৬৫ রানের দারুণ জয়ে শীর্ষে ফিরল ইমরুল কায়েস শিবির।
আগে ব্যাট করতে নেমে মঈন ঝড়ে কুমিল্লা করে ৬ উইকেটে ১৮৮ রান। জবাবে খুলনা গুটিয়ে যায় ১২৩ রানে, ১৯ দশমিক ৩ ওভারে। ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস ও বল হাতে দুই উইকেট নেওয়ার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন কুমিল্লার ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলী।
এই জয়ে পয়েন্ট তালিকায় বরিশালকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে কুমিল্লা, ৯ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে নেমে গেছে খুলনা। এই হারে প্লে অফে যাওয়ার রাস্তাটা কঠিন হয়ে গেল মুশফিকদের। প্লে অফে যেতে শেষ ম্যাচে এই কুমিল্লার বিরুদ্ধেই জয়ের বিকল্প নেই খুলনার। পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হবে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই ম্যাচের দিকেও।
বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে খুলনার হয়ে শুরুটা ভালো করেন আন্দ্রে ফ্লেচার। তবে অপর প্রান্তে রনি ছিলেন নিষ্প্রভ। মুস্তাফিজের প্রথম বলেই আউট। গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি। পরের বলে বিদায় নেন ফ্লেচার। মুস্তাফিজের বলে তিনি হন এলবিডব্লিউ। সাত বলে দুই ছক্কায় তিনি করেন ১৬ রান।
এরপর আসলে কেউই তেমন দাঁড়াতে পারেননি কুমিল্লার বোলারদের সামনে। ধারাবাহিক বিরতিতে দলটি হারাতে থাকে উইকেট। হার্ডহিটার ইয়াসির আলী মঈন আলীর শিকার হন। ওয়ানডে স্টাইলে ১৯ বলের ইনিংসে ইয়াসির করেন ১৮ রান। ছক্কা একটি।
দলের দুরাবস্থায় টিকতে পারেননি মুশফিকুর রহীম। আবু হায়দারের বলে ক্যাচ দেন সুনীল নারাইনের হাতে। ৪ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি খুলনার কাপ্তান। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ভালো করা সিকান্দার রাজাও হাটেন উল্টো পথে। ৮ বলে এক ছক্কায় ৮ রান করা এই জিম্বাবুয়েন ফেরেন রনির বলে উইকেটের পেছনে অঙ্কনের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে।
এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলছিলেন সৌম্য সরকার। দলীয় ৬৭ রানের মাথায় তাকে সাজঘরে ফেরান মঈন আলী। ২৫ বলে তিন চারে ২২ রান করা সৌম্য ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েসের হাতে।
৬৭ রানে ছয় উইকেট হারানো খুলনাকে এরপর পথ দেখানোর চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান ও থিসারা পেরেরা। দলীয় ৮৮ রানের মাথায় নাহিদুলের জোড়া আঘাত। ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে প্রথমে ফেরান মেহেদীকে সরাসরি বোল্ড করেন। ১৪ বলে এক চারে ১১ রান করেন তিনি। একই ওভারের শেষ বলে নাহিদুল আউট করেন রুয়েল মিয়াকে। তিন বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি রুয়েল।
দলকে ১০০ রান পার করে বিদায় নেন লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় পেরেরাকে বোল্ড করেন কুমিল্লা পেসার আবু হায়দার রনি। ২৩ বলে দুই ছক্কায় ২৬ রান করেন পেরেরা। খালেদকে আউট করে খুলনার ইনিংসে সমাপ্তি টানেন তানভির।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও দারুণ করেন কুমিল্লার মঈন আলী। ৪ ওভারে ২০ রানে নেন দুই উইকেট। আবু হায়দার রনি ৪ ওভারে এক মেডেনে ১৯ রানে নেন তিন উইকেট। নাহিদুল ও মুস্তাফিজ নেন দুটি করে উইকেট। ক্যারিবীয়ন অলরাউন্ডার সুনিল নারাইন ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিলেও পাননি উইকেটের দেখা। তানভির পান এক উইকেটের দেখা।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেন কুমিল্লার দুই ওপেনার লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়। লিটন আগ্রাসী হলেও জয় পাচ্ছিলেন না ছন্দ। দলীয় ৪৩ রানে এই জুটি ভাঙেন নাবিল সামাদ। ইয়াসিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন জয় ১৫ বলে ১১ রান করে।
এরপর ডুপ্লেসিসের সঙ্গে দারুণ জুটির আভাস দিয়েও ফেরেন লিটন। ১৭ বলে চারটি চার ও তিন ছক্কায় ৪১ রান করেন ইনজুরি থেকে ফেরা লিটন দাস। দ্রুত ফেরেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েসও। ৮ বলে ৫ রান করে তিনি খালেদের বলে ক্যাচ দেন তানজিদের হাতে।
তাতে কুমিল্লার বড় স্কোর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ডু প্লেসিসের সঙ্গে ব্যাট হাতে ঝড় বইয়ে দেন মঈন আলী। এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১৫৪ রান পর্যন্ত। ১৬ দশমিক ৫ ওভারে সৌম্যের বলে ইয়াসিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডু প্লেসিস। যাওয়ার আগে করে যান ৩৬ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৮ রান।
এর মধ্যে ২৩ বলে ঝড়ো ফিফটি পূর্ণ করেন মঈন আলী। ফিফটিতে যেতে তিনি হাঁকান সাতটি ছক্কা। ডু প্লেসিসের পর সুনীল নারাইন মাহাদীর বলে বোল্ড। গোল্ডেন ডাক। তবে মঈন ছিলেন নিজের মতোই বিধ্বংসী। তিনি আউট হন ১৯তম ওভারে পেরেরার বলে ফ্লেচারের হাতে ক্যাচ দিয়ে। যাওয়ার আগে করে যান মাত্র ৩৫ বলে ৭৫ রানের ঝলমলে ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল ৯টি ছক্কার মার। চার মাত্র একটি। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৬ বলে থাকেন ১২ রানে অপরাজিত। বল হাতে খুলনার হয়ে পেরেরা দুটি, খালেদ, নাবিল, মাহেদী ও সৌম্য নেন একটি করে উইকেট।
মন্তব্য