শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়লেন তিনি। একই ছন্দে, চার-ছক্কায় আলোড়ন তুলে। শেষটা তো আরো মোহময়। ৬ বলে দরকার ৪ রান। প্রথম বলেই গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন বল, ছক্কা। মিরপুরে উইল জ্যাকস খেললেন দারুণ এক ঝলমলে অপরাজিত ঝড়ো ইনিংস। তার ব্যাটেই বিপিএলে প্লে অফ নিশ্চিত হয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের।
শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিলেট সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ম্যাচটি চট্টগ্রামের জন্য ছিল মহা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হারলেই বিদায় ছিল সুনিশ্চিত। এমন ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে সিলেট করে ৬ উইকেটে ১৮৫ রান। জবাবে জ্যাকস ঝলকে পাঁচ বল হাতে ৪ উইকেটের দারুণ জয় পায় চট্টগ্রাম।
এই জয়ে বরিশাল ও কুমিল্লার পর তৃতীয় দল হিসেবে প্লে অফ নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম। ১০ ম্যাচে সমান পাঁচটি করে জয় ও হারে ১০ পয়েন্ট দলটির। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বরিশাল। ৯ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে কুমিল্লা। ১০ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে শনিবার সন্ধ্যায় মুখোমুখি হয় কুমিল্লা ও খুলনা। এই ম্যাচ জিতে থাকলে চতুর্থ দল হিসেবে প্লে অফে চলে গেছে খুলনা। তবে হেরে গেলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফে চলে গেছে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা।
বড় টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রামের হয়ে ভালোই শুরু করেন দুই ওপেনার উইল জ্যাকস ও জাকির হোসেন। দলীয় ২৫ রানে এই জুটি ভাঙেন সিলেটের স্পিনার সোহাগ গাজী। ৯ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান করা জাকির হোসেনকে শফিউল হায়াতের হাতে ক্যাচ বানান তিনি।
দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হাল ধরতে পারেননি অধিনায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব। দলীয় ৩৯ রানে ফেরেন তিনি। তিনিও সোহাগ গাজীর শিকার হন। সাত বলে এক চারে সাত রান করে তিনি ক্যাচ দেন স্বাধীনের হাতে। এরপর অবশ্য দলকে স্বস্তি এনে দেন তৃতীয় উইকেট জুটিতে উইল জ্যাকস ও চাডউইক ওয়ালটন। এই জুটি পার করে ১০০ রান। জয়ের আশা উজ্জ্বল হয় চট্টগ্রামের।
দলীয় ১০৮ রানের মাথায় এই জুটি বিচ্ছিন্ন হয়। দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হয়ে ফেরেন ওয়ালটন বোপারার থ্রোয়ে। যাওয়ার আগে খেলে যান ২৩ বলে ৩৫ রানের দারুণ কার্যকরী ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও দুটি ছক্কার মার। এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন ওপেনার জ্যাকস। ৩৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি, সমান তিনটি করে ছক্কা ও চারে।
তার সঙ্গে জমেনি হার্ড হিটার বেনি হাওয়েলের জুটি। ঝলসে উঠতে পারেননি বেনি। দলীয় ১৪৩ রানের মাথায় ৮ বলে এক চারে মাত্র ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন হাওয়েল। আলাউদ্দিন বাবুর বলে কলিনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। একই ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেন চট্টগ্রামের হার্ড হিটার শামীম হোসেন।
১৭তম ওভারে বোপারাকে দুই চার হাঁকান শামীম। জ্যাকস মারেন এক বাউন্ডারি। রান আসে এই ওভারে ১৪। ম্যাচ তখন অনেকটাই হেলে পড়ে চট্টগ্রামের দিকে। শেষ তিন ওভারে চট্টগ্রামের দরকার তখন পড়ে ১৯ রান। হাতে উইকেট ছয়টি।
১৮তম ওভারে বল করতে আসেন আলাউদ্দিন বাবু। প্রথম বলেই চার হাঁকান শামীম। কিন্তু দ্বিতীয় বলেই খেই হারান তিনি। সোহাগ গাজীর হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শামীম সাত বলে ২১ রান করে। তিন চারের পাশাপাশি তিনি হাঁকান একটি ছক্কা। এই ওভারে আসে সাকুল্যে মাত্র ছয় রান।
উইল জ্যাকসের সঙ্গী তখন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১২ বলে দরকার তখন ১৩ রান। খুবই সহজ সমীকরণ। সিমন্সের দ্বিতীয় বলে চার হাঁকান জ্যাকস। চতুর্থ বলে বিদায় নেন মিরাজ। ৪ বলে তিনি করেন মাত্র দুই রান। এই ওভারে আসে এক উইকেটে ৯ রান। শেষ ওভারে দরকার মাত্র ৪ রান। ২০তম ওভারে আলাউদ্দিনের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে চট্টগ্রামকে দারুণ জয় উপহার দেন উইল জ্যাকস।
ব্যাট হাতে জ্যাকস থাকেন ৯২ রানে অপরাজিত। ৫৭ বলের ইনিংসে জ্যাকস হাঁকান আটটি চার ও চারটি ছক্কা। নয়নকাড়া এমন ইনিংসের সুবাদে অনুমিতভাবে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ইংলিশ এই ওপেনার। এই ম্যাচে হার দিয়ে বিপিএলে ব্যর্থতার মিশন শেষ করল সিলেট। ১০ ম্যাচে দলটির জয় মাত্র একটি। সবার নিচে দলটির অবস্থান।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে সিলেট বড় স্কোর গড়লেও ফিফটির দেখা পায়নি কেউ। তবে রানের দেখা পান পাঁচজন। সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন সিলেট অধিনায়ক রবি বোপারা। ২১ বলের ইনিংসে তিনি হাঁকান চারটি চার ও দুটি ছক্কা। ২৭ বলে ৪৩ রান করেন লেন্ডল সিমন্স। তিনি হাঁকান পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কা।
লোয়ার অর্ডারে রানের গতি বাড়িয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেনও। ২২ বলে তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩৫ রানে। তার ইনিংস সাজানো তিন চার ও দুই ছক্কায়। ব্যাট হাতে সিলেটের শুরুটাও ভালো ছিল। ওপেনিং জুটিতে কলিন ইনগ্রাম ও এনামুল হক বিজয় তোলেন ৪১ রান। ১৯ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ২৪ রান করেন কলিন। ২৬ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩২ রান করেন বিজয়। বল হাতে চট্টগ্রামের হয়ে সব বোলারই মার খেয়েছেন। ৪ ওভারে ৩৭ রানে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন আসরের একমাত্র হ্যাটট্রিকম্যান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। মেহেদী হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম নেন একটি করে উইকেট।
মন্তব্য