কিলিয়ান এমবাপের নাটকীয় গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগের লড়াইয়ে জয় পেয়েছি প্যারিস সেন্ত জার্মেই (পিএসজি)। মঙ্গলবার রাতে নিজেদের মাঠের খেলায় ম্যাচের শেষ মিনিটে দারুণ এক গোল করে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দলকে জয় এনে দিয়েছেন এমবাপে। তার গোলেই প্রথম লেগে ১-০ তে এগিয়ে থাকলো পিএসজি।
এমবাপের গোল শুধু পিএসজিকে মূল্যবান জয় এনে দিয়েছে তা নয়। রক্ষা করেছে লিওনেল মেসিকে। পেনাল্টি থেকে যে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন বার্সেলোনা থেকে আসা এ আর্জেন্টাইন। ৬২ মিনিটের সময় তার নেওয়া পেনাল্টি শটটি রুখে দেন রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবু কর্তোয়া। একের পর এক আক্রমণ রচনা করে যাওয়া এমবাপেকে রুখতে বাজে ফাউলের আশ্রয় নিয়েছিলেন দানি কার্ভাজল। সঙ্গে সঙ্গে রেফারি ফাউলের বাাঁশি বাজান। কিন্তু গোলের সহজ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি মেসি। তার শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন কর্তোয়া।
মেসির পেনাল্টি শট রুখে দেওয়ার ব্যাপারে কর্তোয়া বলেন, ‘আমি মেসির পেনাল্টি নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি। আমি যখন তার বিপক্ষে লাইনে দাঁড়িয়েছি তখন আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। তাছাড়া তার শট থামানোর জন্য ভাগ্যেরও কিছুটা দরকার হয়।’ ম্যাচে হার সম্পর্কে কর্তোয়া বলেন, ‘এ ম্যাচে আমাদের কাউন্টার অ্যাটাকগুলো কাজে লাগেনি। এমনভাবে হার মেনে নেওয়া কঠিন। তবে ফিরতি লেগের খেলা এখনও আছে। সে ম্যাচে আমাদের জিততে হবে। নিজেদের সমর্থকদের সামনে আমরা সে চেষ্টায় করবো।’
নিজেদের মাঠের এ খেলায় একের পর এক আক্রমণ রচনা করেছে পিএসজি। আর এ আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমবাপে। তার দুরন্ত গতি আর ড্রিবলিংয়ে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছিল। রক্ষণভাগ সামলাতেই তাদের ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। এমবাপে এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছিলেন যে, একাই ১৩বার রিয়াল মাদ্রিদের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। এ ম্যাচে গোলের মাঝ দিয়ে এমবাপে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার গোলের সংখ্যা ১৩ করেছেন।
এমবাপে আর অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার আক্রমণে রিয়াল মাদ্রিদ অসহায় অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল। ম্যাচে স্পষ্ট আধিপত্য ছিল পিএসজির। পরিসংখ্যানে তা আরও পরিস্কার হবে। পিএসজি আটবার রিয়ালের গোলে পরিস্কার আক্রমণ করেছে। সেখানে রিয়াল একবারও পিএসজির জন্য হুমকি হতে পারেনি। রিয়াল মাদ্রিদ একবার কর্নার কিক পেয়েছে, পিএসজি পেয়েছে সাতবার।
একের পর এক আক্রমণ রচনা করেও ম্যাচে যখন গোল হচ্ছে না তখন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার পরিবর্তে নেইমারকে মাঠে নামান পিএসজি কোচ। তার পাস থেকেই রিয়াল মাদ্রিদের হৃদয় ভাঙ্গা গোলটি করেন এমবাপে। নেইমারের কাছ থেকে পাওয়া বলটা নিরীহই ছিল। বাম দিক বল নিয়ে এমবাপে যখন ড্রিবলিং শুরু করেন তখনও তার বিপদ বুঝতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্ডাররা। দ্রুত গতির সঙ্গে মিলিতাও ও লুকাস ভ্যানকুয়েজের মাঝ দিয়ে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের বিপদ সীমানায় ঢুকে পড়ে জোরালো শটে কর্তোয়া পরাভূত করেন।
ম্যাচ শেষে এমবাপে বলেন, আমাদের জন্য এটা ছিল দারুণ এক ম্যাচ। আমি সবসময় আমার দলকে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত। ক্লাবের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমাদেরকে আরও বিনয়ী হতে হবে। কেননা এখনও দ্বিতীয় লেগের খেলা রয়েছে। আর সে ম্যাচটা আরও কঠিন হবে। তবে আমরা প্রথম লেগ জয়ের ফলে এগিয়ে রয়েছি এবং ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী।
ম্যাচ শেষে পিএসজি কোচ মাওরিসিও পচেত্তিনো বলেন, আমরা নূন্যতম ব্যবধানে জয় পেয়েছি। তবে এ ম্যাচ আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। ছেলেদের খেলায় আমি সন্তুষ্ট। আশা করছি এমন পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতে অব্যাহত রাখতে পারবো।
ম্যাচ শেষে এমবাপের প্রশংসা করতে মোটেও কুণ্ঠা করেননি পচেত্তিনো। তিনি বলেন, সে বিশ্ব সেরাদের একজন।’ রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলোত্তি প্রতিপক্ষ কোচের এ মন্তব্যের বিরোধিতা করেননি। বরং তার সঙ্গে যোগ দিয়ে বলেছেন, ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়। যাহোক আমরা এ ম্যাচে ভালো খেলতে পারিনি। তবে আমরা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।’
ফিরতি লেগের ম্যাচটা রিয়াল মাদ্রিদের জন্য একটু কঠিন হয়ে দেখা দিতে পারে। নিজেদের মাঠে খেলা হলেও এ ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ হলুদ কার্ডের কারণে কাসেমিরো ও ফারল্যান্ড মেন্ডিকে পাবে না।
মন্তব্য