ইন্টার মিলানের বিপক্ষে দারুণ এক জয়ে লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। বুধবার রাতে ইংলিশ ক্লাবটি শেষ ষোলোর প্রথম লেগের লড়াইয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে ২-০ গোলে জয় পেয়েছে। স্যান সিরোতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে রবার্তো ফিরমিনো ও মোহাম্মদ সালাহ গোল করেছেন। দুটো গোলই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে।
যদিও অ্যাওয়ে ম্যাচের গোলের সুবিধা কোনো কাজে লাগবে না তবে দুই গোলের জয় লিভারপুলকে হোম ম্যাচে অনেকটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রাখবে। ঠিক বিপরীত অবস্থায় ইন্টার মিলান। বাদ পড়ার শঙ্কাটা জোরালো হয়েছে। আগামী ৮ মার্চ অ্যানফিল্ডে ফিরতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
ম্যাচের ফলটা গোলশূন্য ড্র হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। বরং সেদিকেই এগুচ্ছিল। দুই দলই সেভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ইন্টার মিলানের সব স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। ধাক্কা খায় দীর্ঘ এক দশক পর নক আউট পর্বে খেলার সুযোগ পেয়ে আরও দূরে যাওয়ার স্বপ্ন।
এদিকে লিভারপুলের এ সাফল্য মোটেও হঠাৎ করে পাওয়া নয়। বরং ইংলিশ ক্লাবটি এ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে অ্যাওয়েতে প্রথম লেগের ম্যাচে ষষ্ঠবারের মতো জয় পেলো। আগের পাঁচবারই তারা এ সাফল্যকে পরবর্তী রাউন্ডে টেনে নিয়েছে।
এদিকে এ রাতটা ছিল মিডফিল্ডার হার্ভে ইলিয়টের জন্য স্মরণীয় এক রাত। লিভারপুলের ক্লাব ইতিহাসে সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার কীর্তি গড়েছেন। ১৮ বছর ৩১৮ দিন বয়সে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার গৌরব অর্জন করেছেন।
অ্যান্ড্রু রবার্টসনের করা কর্ণার কিকেই বোনা ছিল ইন্টার মিলানের ধ্বংসের বীজ। তার করা কর্ণার কিকের বলে রবার্তো ফিরমিনোর চমৎকার হেড ইন্টার মিলানের জালে ঠিকানা খুঁজে নেয়। ইন্টার গোলরক্ষক সামির হান্দানোভিচ দলকে রক্ষা করার কোনো সুযোগই পাননি। ফিরমিনোর করা এই হেডই যেনো লিভারপুলকে ইন্টার মিলানের জালের ঠিকানাটা জানিয়ে দেয়। আর সে পথেই মাত্র আট মিনিটের ব্যবধানে মোহাম্মদ সালাহ হান্দানোভিচকে দ্বিতীয়বারের মতো জাল থেকে বল খুঁজে আনতে বাধ্য করে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ মৌসুমে এটা ছিল সালাহ’র অষ্টম গোল। ফলে গোল সংখ্যায় তিনি তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন। তার আগে রয়েছেন আয়াক্সের সেবাস্তিয়েন হ্যালের ও বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভানদোভস্কি। তাদের গোলসংখ্যা যথাক্রমে ১০ ও ৯।
লিভারপুল জোড়া গোল পেলেও প্রথম অর্ধেই গোলের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিল ইন্টার মিলান। ১৬ মিনিটের সময় ইভান পেরিসিচজের কাছ থেকে বল পেয়ে লিভারপুলের ছোট বক্সের বাম কোনা থেকে যে শটটা হোকান কালহানোগলু নিয়েছিলেন তা গোলরক্ষককে পরাভূত করলেও ক্রসবার তাকে হতাশ করে।
অন্যদিকে লিভারপুল খুব বেশি সহজ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ফলে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ দ্বিতীয়ার্ধে একাধিক পরিবর্তন আনেন। তার একটি পরিবর্তন ছিল ফিরমিনো। আর এ পরিবর্তনই ক্লপকে সাফল্য এনে দেয়।
লিভারপুলের এ জয় অন্য দলকে কিছুটা সতর্কও করেছে। ২০১৯ সালের চ্যাম্পিয়ন দলটি যে এবারের প্রতিযোগিতায় অন্যতম ফেভারিট তা আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে। গ্রুপ পর্ব থেকে এ পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই তারা পয়েন্ট হারায়নি। সাত ম্যাচের সবকটিতে জয় পেয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুলের ক্লাব ইতিহাসে এটাই তাদের সবচেয়ে বেশি টানা জয়।
দলের এমন পরিস্থিতিতেও নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না কোচ ক্লপ। কাউকে হালকা করেও দেখতে চান না। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম লেগের খেলায় জয় পেয়েছি। কিন্তু বিপদমুক্ত হইনি। এখনও বিপদের মধ্যে রয়েছি। কেননা একটা মাত্র অর্ধ শেষ হয়েছে। তাছাড়া লক্ষ্যের অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়েছি এমনটাও ভাবতে পারছি না। আমাদের পরবর্তী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কেননা ইন্টার মিলান শক্তিশালী দল। তারা শারীরিকভাবেও অনেক শক্তিশালী। এ ম্যাচে তারা সত্যিকারভাবে ভালো খেলেছে। তাদের শুরুটা ভালো ছিল। যাহোক এখন আমাদের ফিরতি ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়।
মন্তব্য