সাকিব বলেই হয় এমনটা!

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাকিব বলেই হয় এমনটা!

কখনো ভাসেন উচ্চকিত প্রশংসায়। কখনো সমালোচনার তীর ক্ষতবিক্ষত করে তাকে। তারপরও তিনি নিজের মতোই। চলেন আপন গতিতে। অনেকটা থোড়াই কেয়ার। কে কী ভাবল, তা দেখার অবকাশ নেই তার। তিনি সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয়। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের অলরাউন্ডিং র‌্যাংকিংয়ে এক সময় শীর্ষে থেকে গড়েছিলেন রেকর্ড, যে রেকর্ড আজো সমুন্নত।

ব্যাটে-বলে ঝলকানি অবারিত। তাই পেছনে তাকান কম। ঠোঁটকাটা স্বভাবের বলেও নিন্দুকের অভাব হয় না। তারপরও সাকিব এগিয়ে চলেন আপন মহিমায়। ক্রিকেট মাঠে সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেমন আছে, আছে সমালোচনাও। ম্যাচ ফিক্সিয়ের প্রস্তাব গোপন করায় আইসিসি কর্তৃক শাস্তি পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞার। আবার মাঠে ফিরেছেন, আবার ব্যাট-বল হাতে দেখাচ্ছেন তার কারিকুরি।

বিপিএলের ফাইনালের আগের দিন সাকিব স্বভাবসুলভ ঢঙেই জন্ম দেন এক সমালোচনার। ফটোসেশনে উপস্থিত থাকার কথা ছিল দুুই ফাইনালিস্ট দলের অধিনায়কের। কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল আসলেন, সাকিব আসলেন না। সাকিবের বদলে দেখা গেল নুরুল হাসান সোহানকে। তখন জানা গিয়েছিল, পেটের পীড়ায় ভুগছেন সাকিব। অথচ কারণটা পরিষ্কার হলো গতকাল বিপিএলের ফাইনালের আগে। পেটের পীড়া নয়, ফটোসেশন বাদ দিয়ে সাকিব গিয়েছিলেন একটা বিজ্ঞাপন শুটিংয়ে। সাকিব বলেই হয় আসলে এমনটা।

ফটোসেশনের কিছুক্ষণ আগে বরিশালের মিডিয়া গ্রুপে জানানো হয়, সাকিব উপস্থিত থাকবেন না। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পেটের পীড়ায় ভুগছেন। বরিশালের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।’

আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে পেটের পীড়ার কথা বলা হলেও কারণটা ভিন্ন। একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নিতে ফাইনালের আগের দিন দলের অনুশীলন ও আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে অংশ নেননি সাকিব। অমিতাভ রেজার পরিচালনায় কোমল পানীয় সেভেন আপের বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে দিনভর ব্যস্ত ছিলেন বরিশালের অধিনায়ক।

ধোঁয়াশা তৈরি হয় বরিশালের সহ-অধিনায়ক সোহানের বক্তব্যে। ফটোসেশনের পর সাকিব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমাদের ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল, করেছি। আমার কাছে যেটা মনে হয় উনি (সাকিব) জিম বা অন্য কিছু করছেন। যে কারণে হয়তো আসতে পারেননি। যে কারণে আমার এখানে আসা। আমার কাছে মনে হয়, ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। এর থেকে খুব বেশি আমি জানি না।’

বিষয়টি পরিষ্কার করেননি ফরচুন বরিশালের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও। তিনি বলেছেন, ‘আসলে তেমন কিছু না। কাল অনুশীলন করেছে। আজো জিম-টিম করেছে। আমি আসলে অনুশীলনের জন্য পুশ করি না সেভাবে। সে তার খেলাটা জানে। পুরো বিপিএল যদি দেখেন সাকিব ব্যাট করেছেন তিন থেকে চারদিন। নিজের মতো করে কাজ করেছে। আজ বলল, ভালো লাগছে না, যাব না। আমি বলেছি ঠিক আছে।’

এবারের বিপিএলে জৈব সুরক্ষাবলয় রাখেনি বিসিবি। ম্যানেজড ইভেন্ট এনভাইরনমেন্ট (এমইই) নামের করোনানীতিতে চলছে এবারের বিপিএল। ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে করোনানীতি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে যদি কোনো ক্রিকেটার বা সাপোর্ট স্টাফ টিম হোটেল ছাড়েন, তাকে করোনা নেগেটিভ হয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিতে হবে। সাকিবের ভাগ্য ভালো। করোনায় পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়েই তিনি পুনরায় যোগ দেন দলের সঙ্গে। অংশ নেন বিপিএলের ফাইনালে।

এটা তো ছিল বিপিএলের ফাইনালের আগে ফটোসেশন। সাকিব এমন ফটোসেশন মিস করেছেন জাতীয় দলের হয়েও। ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে জাতীয় দলের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। যা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল প্রচুর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো তুলাধোনা করা হয়েছিল সাকিবকে। কিন্তু সাকিব ছিলেন নির্বিকার। সব সমালোচনার জবাব তিনি দিয়েছিলেন সেই ওয়ানডে বিশ^কাপে। বাংলাশে দল বাজে করলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে সাকিব ছিলেন উজ্জ্বল। আর সেটা ব্যাট ও বল হাতেই।

মন্তব্য