বিপিএল শেষ। এবার যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ। কোভিড টেস্টেও রোববার চট্টগ্রামের পথে উড়াল দেবে বাংলাদেশ দল। শনিবার সিলেটে ক্যাম্প শেষ হয়েছে সফরকারী আফগানিস্তানের। তাদেরও রোববারই পৌঁছানোর কথা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। সাগরিকায় দুই দলের লড়াই হবে বেশ জমজমাট, তা সহজেই অনুমেয়। যদিও আফগানিস্তান শিবিরে অস্বস্তির কারণ হিসেবে আছে করোনাভাইরাস। দলের আট ক্রিকেটারসহ প্রায় ১২ জন আক্রান্ত কোভিডে। আজ অনেকটাই জানা যাবে আফগান শিবিরের সার্বিক অবস্থা।
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ওয়ানডে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে যথাক্রমে ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর মিরপুরে ৩ ও ৫ মার্চ দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। প্রায় দুই বছর পর দুই দলের মোকাবিলা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রবল আত্মবিশ^াসী হলেও টি-টোয়েন্টিতে আছে শঙ্কা।
এবার প্রথমবারের মতো সাগরিকায় ওয়ানডে সিরিজে লড়বে দুই দল। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হয়েছে মোট ৮ ম্যাচে। জয়ের পাল্লা ভারি বাংলাদেশের, ৫টি, হার ৩টি। তবে টি-টোয়েন্টিতে হিসাব ভিন্ন। ছয়বারের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জয় সাকুল্যে ২টি, হার ৪টি। তার মানে, এই ফরম্যাটে বরাবরের মতো পিছিয়ে বাংলাদেশ।
প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ানডে মোকাবিলা করেছিল ২০১৪ সালে। এশিয়া কাপের ম্যাচে ফতুল্লায় হেরেছিল টাইগাররা। আফগানিস্তানের করা ৬ উইকেটে ২৫৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ অল আউট হয়েছিল ২২২ রানে। এর শোধটা বাংলাদেশ তোলে পরের বছর ওয়ানডে বিশ^কাপে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম জয় আসে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের করা ২৬৭ রানের জবাবে সেই ম্যাচে আফগানিস্তান অল আউট হয়েছিল মাত্র ১৬২ রানে।
এর এক বছর পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসে আফগানিস্তান দল। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচে জয় ৭ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে হার ২ উইকেটে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল দাপট দেখিয়ে, ১৪১ রানে। মিরপুরে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি আফগানরা।
এরপর আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা হয়নি দুই দলের। তবে লড়াই হয়েছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবুধাবিতে এশিয়া কাপের দুটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল বাজেভাবে, ১৩৬ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচটি হয়েছিল বেশ হাড্ডাহাড্ডি। বাংলাদেশ জিতেছিল রোমাঞ্চ ছড়িয়ে মাত্র ৩ রানে। বাংলাদেশের করা ২৪৯ রানের জবাবে আফগানরা করতে পেরেছিল ২৪৬ রান।
আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে ২০১৯ সালে আইসিসি ওয়ানডে বিশ^কাপে। এই ম্যাচে সাকিব নৈপুণ্যে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬২ রানের ব্যবধানে। বাংলাদেশের করার ২৬২ রানের জবাবে ২০০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। ম্যাচ সেরা সাকিব। ব্যাট হাতে ৫১ রানের দারুণ ইনিংস খেলা সাকিব বল হাতে নিয়েছিলেন ১০ ওভারে ২৯ রানে ৫ উইকেট।
ওয়ানডেতে আফগানদের বিরুদ্ধে হার দিয়ে শুরু করলে টি-টোয়েন্টিতে ছিল ভিন্ন চিত্র। এই ফরম্যাটে দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয় ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ জিতেছিল ৯ উইকেটে। আফগানদের ৭২ রানে গুটিয়ে দেওয়া বাংলাদেশ জিতেছিল ৯ উইকেটে, ৪৮ বল হাতে রেখে।
এর পরের অধ্যায় শুধুই হারের তিক্ততায় ভরা। ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ হয় হোয়াইটওয়াশ। ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খেলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ১-১ ব্যবধানে ড্র। মিরপুরে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ২৫ রানে হারলেও চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ৪ উইকেটে। মিরপুরে তৃতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে হয় পরিত্যক্ত।
আফগান দলে পরিবর্তন এসেছে বেশ। বাংলাদেশ দলেও। ওয়ানডে সিরিজে নতুন দুই মুখ মাহমুদুল হাসান জয় ও এবাদত হোসেন। অনভিষিক্ত ক্রিকেটার আছেন চারজন। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রায় সাত মাস পর মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে খেলেছিল টাইগাররা। হারারেতে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল তামিমরা (৩-০)। এবার ঘরের মাঠে সিরিজ। প্রতিপক্ষও ভিন্ন ও শক্তিশালী। পয়মন্ত ভেন্যু সাগরিকায় ক্রিকেটের প্রিয় ইভেন্টে ভালো করবে বাংলাদেশ, এটাই অনুমেয়। তারপরও প্রতিপক্ষ যখন আফগানরা, হালকা শঙ্কা থেকে যায়।
মন্তব্য