অসাধারণ দুটো গোল। প্রথমটা করলেন অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের জোয়াও ফেলিক্স। আর দ্বিতীয়টা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অ্যান্থনি এলাঙ্গার। ফেলিক্স ও এলাঙ্গার গোলের সুবাদে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। অ্যাতলেতিকোর ওয়ান্ডা মেট্রোপোলিটানো স্টেডিয়ামের খেলাটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। স্বস্তিতে ঘরে ফিরেছে ম্যানইউ।
নামী ক্লাব হলে দুটো ক্লাবের সেই জৌলুস এখন অনেকটা অনুপস্থিত। তবে নিজেদের মাঠের খেলায় শুরু থেকেই জ্বলে উঠেছিল অ্যাতলেতিকো। একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল ম্যানইউয়ের রক্ষণভাগকে।তারই ফসল তারা তুলে নেয় ম্যাচের সপ্তম মিনিটে। অসাধারণ গোল করেন জোয়াও ফেলিক্স।
বাম দিকে থেকে রেনান লোদির ক্রস আসতে দেখে ম্যানইউয়ের বিপদ সীমানার বাইরে থেকে দ্রুত বেগে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তার গতিতে ম্যানইউয়ের দুই ডিফেন্ডার ছিটকে যায়। বলকে বাতাসে দেখে দ্রুত গতিতে ফেলিক্স নিজেকেও বাতাসে ভাসিয়ে দেন। তার মাথার স্পর্শে বলে আরও গতির সঞ্চার হয়। জ্যামিতিক মাপ অনুসারে সরাসরি বল জালের স্পর্শ পায়নি। বল সরাসরি আঘাত হানে পোস্টে। কিন্তু ফেলিক্সকে হতাশ হতে হয়নি। পোস্টের ভেতরের দিকে আঘাত করে জালে আশ্রয় নেয়।
তবে গোলটা শেষ পর্যন্ত স্বাগতিক দল ধরে রাখতে পারেনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে তাদের হতাশায় ডুবিয়ে দেন ম্যানইউয়ের অ্যান্থনি এলেঙ্গা। ব্রুনো ফার্নান্দেসের লম্বা থ্রু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান দিক থেকে কোনাকুনি প্লেসিং শট বল জালে জড়িয়ে দেন এলেঙ্গা। ম্যাচে এটাই ছিল ম্যানইউয়ের একমাত্র গোলের সুযোগ। ম্যাচের সিংহভাগ সময় বলের নিয়ন্ত্রণ রাখলেও তারা গোলের প্রকৃত সুযোগ তেমন একটা তৈরি করতে পারেনি।
ম্যাচের সিংহভাগ ম্যানইউ বলের নিয়ন্ত্রণ রাখলেও প্রথমার্ধে তাদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছে অ্যাতলেতিকো। এ সময়ে অ্যাতলেতিকোর বিপদসীমানায় তারা একবারের জন্যও বল স্পর্শ করতে পারেনি। অন্যদিকে অ্যাতলেতিকো কোচ এ সময় তার বাজিতে জিতে যান। লুই সুয়ারেজ এবং অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানকে সাইড বেঞ্চে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার পরিবর্তে ফেলিক্সের সঙ্গে আক্রমণে পাঠিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল কোরেকে। তার পুরস্কারও পেয়ে যান তিনি।
অ্যাতলেতিক দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান দ্বিগুন করার সুযোগ পেয়েছিল। সিমে ভালকো সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি।
ম্যাচ শেষে অ্যাতলেতিকোর জোসেমা গিমেনেজ বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমি বিরক্ত। ম্যাচে ড্র করতে হবে এমন খেলা আমরা খেলেছি এমনটা আমার মনে হয় না। আমরা জয়ের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। তাদের থেকে আমরা ভালো খেলেছি। কিন্তু জয় আমাদের ভাগ্যে ছিল না। আমরা প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছি। তাদেরকে ভালোভাবে প্রতিহত করেছি। আমাদের দুটো সুযোগ পোস্টে লেগে নষ্ট হয়েছে। ম্যাচের শেষ দিকে আমরা ভালো খেলতে পারিনি। সে তুলনায় তারা ভালো খেলেছে।’
অন্যদিকে ম্যানইউ কোচ র্যাংনিক তার দলের পারফরম্যান্সে হতাশ। বিশেষ করে প্রথমার্ধে যেভাবে অ্যাতলেতিকোর খেলোয়াড়রা তার দলকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে তা মোটেও মানতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘প্রথমার্ধে আমার খেলোয়াড়রা যা খেলেছে তা আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনো আক্রমণাত্মক মানসিকতা ছিল না। বলের জন্য তাদের লড়তে হয়েছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভালো করেছি। আরও কিছুটা সময় থাকলে আমরা ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতাম। আমরা আরও ভালো খেলতে পারতাম। যাহোক আমাদের ছেলেরা প্রথমার্ধে যা খেলেছে তা ছিল হতাশাজনক।’
র্যাংনিকের হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসে খেলার সময় এই পর্তুগীজ স্ট্রাইকারের বড় পছন্দের দল ছিল অ্যাতলেতিকো। স্প্যানিশ দলটির বিপক্ষে একের পর এক গোল পেয়েছেন। কিন্তু এ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জন্য কোনোরকম হুমকি তৈরি করতে পারেননি।
তবে দারুণ খুশি ম্যানইউয়ের হয়ে সমতাসূচক গোল করা এলাঙ্গা। খুশি হওয়ারই কথা। ৭৫ মিনিটের সময় তিনি মাঠে নেমেছিলেন। গোলের আগ পর্যন্ত বলের জন্য এদিক ওদিক দৌড়ে সময পার করেছেন। যখনই সুযোগটি পেয়েছেন তখনই সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছেন। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘যে গোলটা আমি করেছি মাঠে সেটা ছিল বলে আমার প্রথম স্পর্শ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল করার মাঝ দিয়ে আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় দলের বিপক্ষে গোল করে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু এটা যে বলের প্রথম স্পর্শেই হয়ে যাবে তা ভাবিনি। এখন ওল্ড ট্রাফোর্ডের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’\ওল্ড ট্রাফোর্ডে অ্যাতলেতিকো-ম্যানইউ ফিরতি লড়াই হবে ১৫ মার্চ।
মন্তব্য