-->
কারাবাও কাপ

পাগলাটে ম্যাচে লিভারপুলের শিরোপা জয়

ক্রীড়া ডেস্ক
পাগলাটে ম্যাচে লিভারপুলের শিরোপা জয়

মাঠের বাইরে উত্তেজনার শেষ নেই। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর দায়ে ম্যাচের আগে চেলসির রুশ মালিক রোমান আব্রামোভিচকে মালিকানা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। এত সব কাণ্ডের মধ্যে চেলসিকে নামতে হয়েছে কারাবাও কাপের ফাইনালে। সেখানেও উত্তেজনার কমতি ছিল। একের পর এক গোল বাতিলের ঘটনা তো রয়েছেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল ম্যারাথান টাইব্রেকার। শেষ পর্যন্ত টমাস টুখেলের দলকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। ২১ টাইব্রেকার শটে লিভারপুল ১১-১০ গোলে জয় পেয়েছে। গত ১০ বছরে এবারই প্রথমবার লিভারপুল কারাবাও কাপ জয়ের স্বাদ পেলো।

হারের জন্য চেলসি কোচ টমাস টুখেল নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে। ম্যাচে তার নেওয়া শেষ সিদ্ধান্তটা যে এমনভাবে হিতে বিপরীত হবে তা ভাবতেই পারেননি। নির্ধারিত সময়ের গোলশূন্যভাবে শেষ হওয়া ম্যাচে অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল গোল করতে পারেনি। ফলে টাইব্রেকারে গড়ায় খেলা। আর সেখানে ঘটে সব নাটকীয় ঘটনা।

প্রথম নাটকীয় ঘটনার জম্ম দেন চেলসি কোচ টমাস টুখেল। খেলা টাইব্রেকারে গড়াচ্ছে দেখে একেবারে অন্তিম সময়ে টাইব্রেকার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগাকে মাঠে নামান। কিন্তু আরিজাবালাগা যে তাকে এমনভাবে হতাশায় ডোবাবেন তা বুঝতে পারেননি। টাইব্রেকারে নির্ধারিত প্রথম পাঁচ শটে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়নি। উভয় দলই শতভাগ সাফল্য দেখান। চেলসির বদলি গোলরক্ষক আরিজাবালাগা কোনো শটই রুখতে পারেননি। একইভাবে ব্যর্থ হয়েছেন লিভারপুলের গোলরক্ষক কাউমহিন কেলেহার। তবে চূড়ান্ত লড়াইয়ে কেলেহার ঠিকই সাফল্যের মুখ দেখেছেন। শুধু তাই নয়, ম্যাচের নায়কও তিনি।

একে একে উভয় দলের ১০ জন গোল করলেও একাদশতম শট নিতে আসেন দুই গোলরক্ষক। প্রথমে লিভারপুলের গোলরক্ষক কেলেহার গোল করে দলকে ১১-১০ গোলে এগিয়ে নেন। ফলে কেপা আরিজাবালাগার ওপর নির্ভর করছিল ট্রফির ভাগ্য। তার শটে গোল হলে খেলা আরও দীর্ঘায়িত হবে। কিন্তু আরিজাবালাগার হয়তো ম্যাচ দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা ছিল না। কিভাবে যে তিনি শট মারলেন তা হয়তো ভবিষ্যতে বারবার দুঃস্বপ্নে হাজির হবে। আরিজাবালাগারের শট লক্ষ্য করে কেলেহার বলের দিকেই ঝাঁপিয়েছিলেন। কিন্তু বলে হাত লাগাতে হয়নি। ক্রসবারের অনেক অনেক উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কেলেহারকে নিয়ে শুরু হয় লিভারপুলের খেলোয়াড়দের উৎসব।

লিভারপুলের উৎসবের পরিবর্তে চেলসি জয়োৎসব করলে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। বরং এটাই স্বাভাবিক হতে পারতো। একে একে তিনবার তারা লিভারপুলের জালে বল ফেলেছিল। কিন্তু তিনবারই অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়। এছাড়া নিজেদের ব্যর্থতায়ও হতাশায় ডুবতে হয়েছে তাদের। ম্যাসন মাউন্ট দুটো সুযোগ নষ্ট করেন। একবার তো গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। বল পোস্টে লেগে চেলসিকে হতাশায় ডোবায়। আর লিভারপুলকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে সহায়তা করে।

আবার বিপরীত চিত্র যে ছিল না। লিভারপুলের দুটো আক্রমণ দারুণ দক্ষতায় রুখে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডি। একবার সালাহ’র শট গোলে ঢোকার মুখে ফিরিয়ে দেন থিয়াগো সিলভার। নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় লিভারপুল। এরপর লিভারপুল গোল পেলেও ভিএআর দেখে রেফারি ফাউলের কারণে তা বাতিল করেন।

ম্যাচে শেষে জয়ের নায়ক কেলেহার বলেন, এটা ছিল একটা পাগলাটে ম্যাচ। তবে আমি কখনই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলের জয়ে ভূমিকা রাখবো তা কখনো ভাবতে পারিনি। দলের সবাই ভালো খেলেছে। ট্রফি জিততে পেরে আমি আনন্দিত। গোল সে আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ জয়ের ফলে লিভারপুলের সামনে মৌসুমে চার ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো। ক্লপের দলের সামনে এখন এফএ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের পথ খোলা রয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের।

ম্যাচ শেষে চেলসি কোচ টুখেল বলেন, ট্রফি জিততে ভাগ্যের সহায়তা দরকার হয়। আমরা তিনবার গোল করেছি। সহজ সুযোগও পেয়েছি। তারাও সুযোগ পেয়েছে। যাহোক ম্যাচ গোলশূন্য শেষ হওয়াটা ভালো ছিল।’

মন্তব্য

Beta version