দেশে হোক আর বিদেশে হোক নিউজিল্যান্ডের কাছে কখনও টেস্ট সিরিজ হারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম টেস্ট শেষে প্রোটিয়াদের সেই কীর্তি এবার শঙ্কার মুখে পড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। নিজেদের রেকর্ড অক্ষত রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সফরের প্রথম ম্যাচ হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে জয় নিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ এ সমতায় শেষ করেছে ডিন এলগাররা।
ম্যাচে যে জয় পাচ্ছে তা বেশ আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা তার সুবাস পাচ্ছিল। তবে ম্যাচে টস জয়ের পর এলগারের সিদ্ধান্ত অনেককেই থমকে দিয়েছিল। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ম্যাচের আগে হ্যাগলি ওভালে কোনো দলই আগে ব্যাটিংয়ে নেমে জয়ের দেখা পায়নি। অর্থাৎ টস জয়ী দল সবসময়ই আগে ফিল্ডিং নিয়েছে। পেসারদের বোলিং তাণ্ডবে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে সব আমলে না নিয়ে ডিন এলগার এবার আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাট হাতে সবার প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন। ১৯৮ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে সিরিজে সমতায় এনেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার কীর্তি ধরে রেখেছেন। একই সঙ্গে হ্যাগলি ওভালে প্রথমে ব্যাটিং করে প্রথম জয়ী দলের রেকর্ড গড়েছেন।
প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংস ও ২৭৬ রানের বিশাল হারটা ছিল তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার। ব্যাটিং ও বোলিং উভয় বিভাগেই বিধ্বস্ত হয়েছিল তারা। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ হার এড়াতে পারবে এমনটা কল্পনা করা কঠিন ছিল। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে প্রোটিয়ারা। ভালো করার ইঙ্গিতটা দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম দিনেই দিয়েছিল। কিউই পেসারদের রক্ত চক্ষুর বিপক্ষে দৃঢ়হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অভিষেক হওয়া সারেল এরউই। এ ওপেনার অধিনায়ক ডিন এলগারকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই শুরু হ্যাগলি ওভালের ইতিহাস পরিবর্তনের গল্প। সেঞ্চুরি করে বড় রানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। হয়েছেও তাই। প্রথম ইনিংসে তারা ৩৬৪ রান করেছিল।
ব্যাটারদের চমৎকার ব্যাটিংয়ের জবাব দেওয়াটা তখন বোলারদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কাগিসো রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেন উভয় ইনিংসে সেই দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করেছেন। রাবাদা দুই ইনিংসে আট (৫+৩) উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে শিকার করা ৫ উইকেট ছিল ক্যারিয়ারে একাদশতম পাঁচ উইকেট শিকার। মার্কো ইয়ানসেন নিয়েছেন সাত উইকেট। প্রথম ইনিংসে চারটি ও দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটি। দুই সতীর্থের এমন সাফল্য দেখে দ্বিতীয় ইনিংসে উজ্জ্বীবিত হলেন কেশব মহারাজ। প্রথম ইনিংসে এক উইকেট নেওয়া এবার নিলেন তিন উইকেট। ফলে ৪২৬ রানের বিশাল স্কোর তাড়া করার পথে নিউজিল্যান্ড মাত্র ২২৭ রানে অল আউট হয়। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ না জেতার আপেক্ষটা আরও দীর্ঘায়িত হয় তাদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ না জয়ের আক্ষেপটা যে দীর্ঘায়িত হচ্ছে তা আগের দিনই টের পেয়েছিল স্বাগতিকরা। একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তো ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল রাবাদার তাণ্ডব। আর তাতেই চতুর্থ দিন শেষে ৯৪ রান করতে ৪ উইকেট হারিয়েছিল। এ অবস্থায় পঞ্চম দিনে যে অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হবে না তা তারা ভালোই বুঝতে পেরেছিল। হয়েছেও তাই। মাত্র ১৩৩ রানে তারা শেষ ছয় উইকেট হারিয়েছে।
আগের দিন ৬০ রানে অপরাজি ডেভন কনওয়ে টাম ব্লানডেল দিনের শুরুতে কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু এ জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর জয়ের জন্য খুব একটা বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৬১ রানে তারা শেষ পাঁচ উইকেট হারায়। তবে কিছুটা হতাশা থাকতেই পারে কনওয়ের। ৯২ রানে আউট হন তিনি। লিথো সিপামলার বলে এলবিডব্লিউ হন। পুরো ম্যাচে তিনি এই একটি মাত্র উইকেট পেয়েছেন। আর ব্লানডেল করেছেন ৪৪ রান। অন্যরা এসেছেন আর ফিরেছেন। ফলে প্রোটিয়া বোলারদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ সমৃদ্ধ হয়েছে।
মন্তব্য