ওয়ানডে সিরিজ জেতা গেছে অনেক নাটকীয়তার পর। একটু পা হড়কালে ট্রফি যেত আফগানদের শোকেসে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজেদের আধিপত্য জানান দিয়ে শেষ হাসি হেসেছে তামিম ব্রিগেড। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই ফরম্যাটে চ্যালেঞ্জ উতরাতে পারবে বাংলাদেশ?
এমন প্রশ্নটা মোটেও অমূলক না। যদিও টি-টোয়েন্টি সিরিজও বাংলাদেশ খেলবে ঘরের মাঠে। ওয়ানডে সিরিজ হয়েছে চট্টগ্রামের সাগরিকায়। টি-টোয়েন্টির লড়াই হবে মিরপুরে। কিন্তু এই ফরম্যাটে আফগানিস্তান নিঃসন্দেহে শক্তিশালী দল, বাংলাদেশের চেয়েও। আর সেটা মুখোমুখি থেকে শুরু করে সব পরিসংখ্যানে।
আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে এখন পর্যন্ত ৮৯টি। জয় ৬০ ম্যাচে। হেরেছে ২৮টি। টাই হয়েছে এক ম্যাচ। সেখানে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান তুলনামূলক অনেকটাই ধূসর। ১২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হয়েছে বাংলাদেশের। জয় মাত্র ৪৩টি। হার ৭৮টি। রেজাল্ট হয়নি দুই ম্যাচে। এবার আসা যাক দুই দলের হেড টু হেডে। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হয়েছে ৬ ম্যাচে। বাংলাদেশের জয় মাত্র দুটিতে। বিপরীতে চারটিতেই জিতেছে আফগানরা। তার মানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অনুমিতভাবেই এগিয়ে থাকছে সফরকারীরা।
ওয়ানডে সিরিজেও আফগানরা কি খুব পিছিয়ে ছিল। মোটেও না। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। একই ব্যবধানে সিরিজ জিততে পারত আফগানিস্তানও। প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, কীভাবে? তারও উত্তর আছে। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে অনেকটা নাটকীয়ভাবে। মাত্র ২১৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৪৫ রানে ছয় উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ম্যাচ জেতেনি কখনো। ক্রিকেট ইতিহাসেও এমন ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ আছে হাতেগোনা। সেই রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন সপ্তম উইকেট জুটিতে আফিফ ও মিরাজ। ১৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি বাংলাদেশ এনে দিয়েছিল ৪ উইকেটের দারুণ জয়।
দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশ জেতে দাপট দেখিয়ে। যেখানে কোনো বিভাগেই বাংলাদেশকে ন্যূনতম চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি আফগানিস্তান। লিটনের দারুণ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ করেছিল ৩০৬ রান। জবাবে ২১৮ রানে অল আউট রশিদ-নবীরা। বাংলাদেশ জেতে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানে। এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত বাংলাদেশের।
তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য হোয়াইটওয়াশ করার মিশন। কিন্তু সেখানে দৃশ্য বদল। আফগানদের দেখা গেল প্রবল দাপটে। টস জিতেও চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে পারল না বাংলাদেশ। টেনেটুনে ১৯২ রানে অলআউট। জবাবে রহমানউল্লাহর সেঞ্চুরিতে আফগানরা লক্ষ্যে পৌঁছায় ৫৯ বল হাতে রেখে। জয় আসে ৭ উইকেটে। হোয়াইটওয়াশ এড়িয়ে সিরিজের ব্যবধান ২-১ করে সফরকারীরা। প্রথম ম্যাচ আফগানিস্তান জিতে গেলে, ট্রফিটা কারা পেত, তা সহজেই অনুমেয়।
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে টি-টোয়েন্টির আগে এক প্রকার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রেখেছে দলটি। মিরপুরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য যে পাখির চোখ করে আছে রশিদরা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বারের মতো দুই দল দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এর আগে দেরাদুনে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ হয়েছিল হোয়াইটওয়াশ।
টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎ ২০১৪ সালের বিশ^কাপে। মিরপুরে বাংলাদেশের যাত্রাটা হয়েছিল উড়ন্ত। আফগানদের হারানো গিয়েছিল ৯ উইকেটে। ১৭ দশমিক ১ ওভারে ৭২ রানে গুটিয়ে যাওয়া আফগানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিতেছিল ৪৮ বল হাতে রেখে। চার বছরের বিরতির পর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ ২০১৮ সালে ভারতের দেরাদুনে। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ জিততে পারেনি একটি ম্যাচেও।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ রানে হার। আফগানদের করা ১৬৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ করতে পারে ১২২ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে হার ৬ উইকেটে। বাংলাদেশের করা ৮ উইকেটে ১৩৪ রানের জবাবে আফগানরা লক্ষ্যে পৌঁছে সাত বল হাতে রেখে ৪ উইকেট হারিয়ে। তৃতীয় ম্যাচটি হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। যেখানে বাংলাদেশ হেরে যায় মাত্র এক রানে। আফগানিস্তানের করা ৬ উইকেটে ১৪৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ করতে পারে ৬ উইকেটে ১৪৪ রান।
দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ এই মিরপুরেই ত্রিদেশীয় সিরিজে। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান জিতেছিল ২৫ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ৪ উইকেটে। ফাইনাল ম্যাচটি হয়নি, বৃষ্টির কারণে। ফলে ট্রফি হয়েছিল ভাগাভাগি। এবারও সামনে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ৩ মার্চ প্রথম ম্যাচ। একদিনের বিরতির পর ৫ মার্চ দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি। এবারও ট্রফি ভাগাভাগি, না শেষ হাসি হাসবে মাহমুদউল্লাহ শিবির? তা দেখতে আর একটি দিন অপেক্ষা করতে হবে।
মন্তব্য