ইচ্ছার বিরুদ্ধে খেলা কষ্টের। সেই কষ্টে ভুগছেন সাকিব আল হাসান। গেল আফগানিস্তান সিরিজেও মন ছিল না তার। তার কাছে মনে হয়েছে তিনি একজন প্যাসেঞ্জার। কিন্তু মন পুরোপুরি সায় না দিলে খেলা থেকে বিরত থাকা উচিত। না হলে এটি হবে দেশ ও সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা কিংবা বিশ^াসঘাতকতা করা। আর সেই কাজটি করতে চান না সাকিব আল হাসান।
নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো উপযুক্ত মনে করছেন না সাকিব আল হাসান। ফলে যেতে চাচ্ছেন না দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দুবাই যাওয়ার আগে রোববার রাতে বিমানবন্দর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিব বলেন, ক্রিকেট বোর্ডকে তিনি নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন। বোর্ড থেকে তাকে বলা হয়েছে কয়েকদিন ভাবতে এ বিষয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে আগেই ছুটি নিয়েছিলেন সাকিব। আর সেটা আইপিএলের জন্য। কিন্তু আইপিএলে দল না পাওয়ায় বদলে যায় দৃশ্য। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তখন বলেছিলেন, সাকিব যাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরে সফরের জন্য টেস্ট ও ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণা করে বিসিবি। সে দলে থাকেন সাকিব। সেই দল ঘোষণার তিন দিন পরই নতুন মোড় নিল ঘটনা। দুবাই যাওয়ার আগে সাকিব বললেন, এই মুহূর্তে খেলার মতো অবস্থায় নেই তিনি।
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান সিরিজে মনে হয়েছে যে, আমি একজন প্যাসেঞ্জার। আমি যা হয়ে কখনোই থাকতে চাই না। আমি খেলা একদমই উপভোগ করতে পারিনি। পুরো সিরিজই, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে। আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। আমার কাছে মনে হয় না, এ রকম মন-মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলা আমার উচিত হবে। এই কথা আমি জালাল ভাইয়ের (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান) সঙ্গেও আলাপ করেছি আজকে। জালাল ভাই বলেছেন, দুদিন তিনি চিন্তা করবেন, আমাকেও চিন্তা করার সময় দিয়েছেন। তার পর সিদ্ধান্ত একটা নেওয়া উচিত বা হবে বলে আমি মনে করি।’
মনের বিরুদ্ধে খেলাটা ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে জানান সাকিব, ‘এখন পর্যন্ত আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে, এ রকম যদি মন-মানসিকতা থাকে, এ রকম শারীরিক ও মানসিক অবস্থা থাকে, তাহলে দলের জন্যই তা ক্ষতিকর। নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, মানুষ যা প্রত্যাশা করে পারফরম্যান্স, সেটা যদি করতে না পারি, সেখানে প্যাসেঞ্জার হয়ে থাকাটা খুবই দুঃখজনক হবে, সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো ব্যাপার হবে বলেই মনে করি।’বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেই রাজি হয়েছিলেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে। পরে বদলে যায় মনোভাব। তবে সফরের একটি অংশে যাওয়ার সম্ভাবনা তিনি তাও দেখছেন, ‘পাপন ভাইয়ের (নাজমুল হাসান) সঙ্গে কথা হয়েছিল, রাজিও হয়েছি যে পুরো সিরিজ খেলব। কিন্তু এখন যে মানসিক ও শারীরিক কন্ডিশন দেখছি, আমার কিছু সময় দরকার বলে আমি মনে করি। সেটা হতে পারে, ওয়ানডে সিরিজে বিরতি নিয়ে যদি টেস্ট সিরিজ খেলি, তুলনামূলক ভালো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় হয়তো থাকতে পারব। সেটা হতে পারে।’
‘তবে এগুলো আসলে আলোচনার ওপর নির্ভর করবে যে কী করলে ভালো হয়। তবে আমার বর্তমান অবস্থা এটা। আমি মনে করি, যদি এই অবস্থায় খেলতে যাই, আমার সতীর্থদের ও দেশের সঙ্গে প্রতারণা করার মতোই ব্যাপার হবে, যা আমি অবশ্যই চাই না।’
পুরোপুরি শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট হয়েই মাঠে ফিরতে চান সাকিব। না হলে এটি হবে দেশের সঙ্গে বিশ^াসঘাতকতা। সাকিব বলেন, ‘আমি চাই, যখনই খেলব, লোকে যেভাবে প্রত্যাশা করে, নিজের প্রতি নিজের যে আশা, দল যেভাবে চিন্তা করে, সেভাবে যেন পারফর্ম করতে পারি, সেই অবস্থায় যেন যেতে পারি। হ্যাঁ, কোনো গ্যারান্টি নেই যে, সেরা অবস্থায় খেলতে নামলেও পারফর্ম করব, তবে অন্তত এটা জানতে পারব যে দেশের হয়ে পারফর্ম করার জন্য সম্ভাব্য সেরা অবস্থায় আছি। কিন্তু আমি যদি জানিই যে, আমার কোনো সম্ভাবনা নেই, সেখানে সময় নষ্ট করা ও অন্য একটা জায়গা নষ্ট করা এবং দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে গাদ্দারি করার মতোই বিষয় বলে আমি মনে করি।’
টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের বিরতি চেয়ে বোর্ডে চিঠি দিয়েছিলেন সাকিব। এ নিয়ে বিসিবি সভাপতির কিছু তথ্য শুধরে দিলেন সাকিব, ‘আমি মিডিয়ায় জেনেছি, বোর্ডে আমি যে চিঠি দিয়েছিলাম ছয় মাসের জন্য (বিরতি চেয়ে) আসলে এটা ছয় মাসের জন্য ছিল না। এটা ছিল এই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত, সেটা হচ্ছে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমি কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলব না। আমি চাচ্ছিলাম যে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি, পুরো সাদা বলে মনোযোগ দিতে, যেহেতু পরপর দুই বছর দুটি বিশ্বকাপ আছে।’
‘আমার বিশ্বাস ছিল, এই দুটি বিশ্বকাপে আমাদের বড় কিছু করা সম্ভব। এ কারণে ওখানে পুরো ফোকাস করতে চাচ্ছিলাম। তার মানে এই নয় যে, আমি টেস্ট ক্রিকেট পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলাম। টেস্ট ক্রিকেটে যেহেতু দলের ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে এখন, আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি আমি সাদা বলে মানোযোগ দেই, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে, বয়স, ফিটনেস সবকিছু নিয়ে হয়তো আরো ভালো করতে পারতাম।’
দুটি পক্ষ একটা জায়গায় আসতে পারলে সব কিছু মসৃণ হবে বলে মনে করেন সাকিব, ‘আমি আসলে এখন ক্রিকেট খেলার অবস্থায় নেই। এটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি এলে অবশ্যই চাইব ক্রিকেট খেলতে। সবকিছু নির্ভর করছে আসলে বিসিবি বা আমাদের দুই জায়গা থেকে আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর একটা পরিস্থিতি তৈরি করা, যেখানে গেলে আমার জন্য ভালো হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও ভালো হবে। আমি ক্লিয়ার থাকতে চাই। অনেক সময় অনেক মিসকমিউনিকেশন, মিসপারসেপশনের কারণে মিসলিডিং কিছু তথ্য মানুষের কাছে যায়, যেটায় লোকে বিভ্রান্ত হয়। আমি চাই না ওই ব্যাপারগুলো হোক। এজন্যই এটা ক্লিয়ার করে গেলাম।’
মন্তব্য