সাকিব ইস্যু নিয়ে বেশ সরগরম ক্রিকেটাঙ্গন। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্তের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। দুবাই যাওয়ার আগে হুট করে বিমানবন্দরে তিনি বলে গিয়েছেন একগাদা কথা। পরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সব জেনে নাকি খুবই অবাক। সাকিবকে নিয়ে তিনি কোনো হিসাব মেলাতে পারছেন না।
বিসিবি সভাপতির কথা পরিষ্কার, আইপিএলে দল পেলে সাকিব কী এমন করত? তখন কি তিনি মানসিকভাবে চাঙা হয়ে উঠতেন। একজন খেলোয়াড় না খেলতেই পারেন। তাই বলে স্কোয়াডে থেকেও হুট করে সফরের আগে বিমানবন্দরে জানিয়ে চলে যাবেন। এটাও কোনো রীতি মানছেন না পাপন। তার মতে, সব কিছুই হতে হবে লিখিত। মৌখিক কোনো জিনিস গৃহীত হবে না।
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রোববার দুবাই যাওয়ার আগে সাকিব বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় তিনি নেই। এই অবস্থায় ক্রিকেট খেললে দলের জন্য ক্ষতিকর ও দেশের সঙ্গে গাদ্দারি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
সাকিবের এই বক্তব্যের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি প্রশ্ন তোলেন সাকিবের ভাবনা জানানোর প্রক্রিয়া নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ওর এসব কথাবার্তা নিয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই। ওকে হয়তো শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছু একটা ডিস্টার্ব করছে। সেটা হতেই পারে। ওর যদি কোনো সমস্যা থাকে, আমাদের বলতে পারে। এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় ফোনে বলে দেওয়া, এটা হয় না।’
‘সবার সঙ্গে ওর অ্যাকসেস আছে, জৈব-সুরক্ষা বলয়ও নেই। আমাদের সঙ্গে বসতে পারত সে, খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। কিন্তু হঠাৎ করে একেকটা চমক দেওয়া, এটা করে কী লাভ হচ্ছে, কেন করছেÑ তবে অনেকে পছন্দ করে, আমাদের দেশে অনেকে পছন্দ করে।’
মানসিকভাবে সাকিব খেলার মতো অবস্থায় নেই এই কথায় ঠিক আস্থা রাখতে পারছেন না পাপন, ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে আইপিএল খেলতে চাচ্ছিল কেন? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে তো বলত আমি আইপিএলও খেলব না! আমি বুঝতে পারছি না, মেলাতে পারছি না। ধরুন আইপিএলে ওকে নেওয়া হলো, তখন কি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলত? জিনিসটা আমার মাথায়ই ঢুকছে না।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই সংস্করণেই তাকে পাওয়া যাবেÑ সাকিবের কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা পেয়েই তাকে দলে রাখা হয়। কিন্তু এরপর তার এই টানাপোড়েন। গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরেও শুরুতে তাকে দলে রাখার পর আবার বাইরে রাখা হয় পারিবারিক কারণে ছুটি নেওয়ায়। গত বছর শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ খেলতে যাননি তিনি আইপিএল খেলার কারণে। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের বিরতি চেয়েছিলেন তিনি। সেবার ছুটি দেওয়া হয়েছিল শুধু ওই সফর থেকে।
বিসিবি সভাপতির মতে, সাকিবকে নিয়ে বারবার অনিশ্চয়তার কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে দল সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, ‘ঝামেলা তো হচ্ছেই। আমাদের (বোর্ডের) কিছু হচ্ছে না, তবে ঝামেলা হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টের, ঝামেলা কোচিং স্টাফদের, ঝামেলা অধিনায়কদের। অধিনায়ক আর কোচ তো জানেই না সাকিবের এই কাহিনি, আমি নিশ্চিত। খালেদ মাহমুদ সুজন এত দিন ওর সঙ্গে ছিল, সাধারণত পরিকল্পনা নিয়ে সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করে, সুজনকে জিজ্ঞেস করলেও, সেও জানে না। আকাশ থেকে পড়েছে!’
সাকিব আফগানিস্তান সিরিজ উপভোগ করেননি। তার কাছে মনে হয়েছে তিনি প্যাসেঞ্জার। সাকিবের এমন মন্তব্য নিতে পারেননি পাপন। জানান তার প্রতিক্রিয়া, ‘যে জিনিসটা আমি কিছুতেই এখন মেনে নিতে পারছি না, ঘটনাটা কী, পৃথিবীর যেকোনো ক্রিকেট খেলোয়াড়ের স্বপ্ন হলো জাতীয় দলে খেলা। যখন দল জেতে, আর সেখানে সে খেলে থাকলে, এর চেয়ে খুশির আর কিছু থাকে না। কিন্তু সাকিব বলছে, আফগানিস্তান সিরিজে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, কোনোটিই উপভোগ করেনি। আমরা যে সিরিজ (ওয়ানডে) জিতলাম, সেটাও উপভোগ করেনি। প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতলাম, তার মানে সেটিও উপভোগ করেনি? কেন!’
পাপনের কথা পরিষ্কার। কোন ক্রিকেট খেলতে না চাইলে পরিষ্কার করে সবকিছু আগেই বলবে। যোগাযোগ যেন থাকে সুন্দর। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে ক্লিয়ারকাট বলে দিয়েছি, ও (সাকিব) যদি কোনো ফরম্যাটে খেলতে না চায়, কোনো অসুবিধা নেই। এরপর কারো কোনো সমস্যা থাকার কথা? এরপর আর এসব করা উচিত নয়। খেলতে না চাইলে খেলবে না, আমি তো মেনে নিয়েছি। কিন্তু সেটা আগেভাগে জানাতে তো হবে।’
বিসিবি প্রধান বললেন, সাকিবকে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আনষ্ঠানিকভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এরপর বোর্ড নেবে সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘মৌখিকভাবে বলে লাভ নেই, যা-ই করতে চায়, লিখিত দিক। কারণ, আগে বলেছিল খেলবে। এখন বলছে খেলবে না। এজন্যই লিখিত দরকার। আমার ধারণা, ও (সাকিব) মেন্টালি ডিস্টার্বড কোনো কারণে। দুদিন সময় নিয়েছে। মাথা ঠাণ্ডা করে ভাববে। কী চায়, তা আমাদের জানাবে। বোর্ড এরপর সিদ্ধান্ত নেবে।’
মন্তব্য