ইন্টার মিলান এখন আফসোস করতেই পারে। না করার কোনো কারণও নেই। মঙ্গলবার রাতে যে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে অ্যাওয়েতে লিভারপুলের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় পেয়েছে। জয় পাওয়ার পরও আফসোস! হ্যাঁ, তারপরও যে তারা কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পায়নি। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠের খেলায় ০-২ গোলের হার যে আগে থেকে তাদের গলার কাটা হয়েছিল। সে কাটা তুলতে পারেনি। ফলে ফিরতি লেগে জয় পেয়েও ১-২ গোল গড়ে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
লাউতারো মার্টিনেজ একমাত্র গোলটি করেন। আর এ গোলের পরই যেখানে আরো আশাবাদী হওয়ার কথা সেখানে তাদেরকে আরো হতাশায় ডুবতে হয়েছে। কেননা ৬১ মিনিটে গোল পাওয়ার দুই মিনিট পর আলেক্সিস সানচেজ লাল কার্ড দেখলে ইন্টার মিলানের আক্রমণভাগ দুর্বল হয়ে পড়ে।
গত মাসে সান সিরোতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে লিভারপুল নাটকীয় জয় পেয়েছিল। ম্যাচের প্রায় শেষ সময়ে মাত্র আট মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করেছিল তারা। সেই দুই গোলই এখন তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল ওঠার জন্য যথেষ্ঠ হয়েছে। এ জয়ের ফলে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল এখন প্রিমিয়ার লিগেও মনোযোগী হতে পারবে। আর্সেনালের বিপক্ষে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে। তার আগে ব্রাইটনের বিপক্ষে খেলতে হবে তাদের।
প্রথম লেগের জয়, তার ওপর নিজেদের মাঠে খেলা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুরু থেকেই ইংলিশ ক্লাবটি সফরকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। প্রথমার্ধেই তারা দুটো গোলের সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বলা যায় লিভারপুলের। প্রথমবার তাদেরকে গোল বঞ্চিত করে ক্রসবার। বাম দিকে উড়ে আসা ফ্রি কিকে মাতিপ যে হেড নিয়েছিলেন তা ইন্টার গোলরক্ষককে হতাশ করে জালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনে ক্রসবার। বল ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
কয়েক মিনিট পর পাওয়া দ্বিতীয় সুযোগ থেকেও তারা গোল পায়নি। নিজেদের দুর্ভাগা তারা ভাবতেই পারে। কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বলে ভার্জিল ভ্যান ডিক হেড নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে লাফিয়েছিলেন মিলানের স্ক্রিনিয়ার। প্রথমে ডিকের মাথায় বল লেগে যখন তা জালের দিক নিশানা পেয়েছে ঠিক তখনই স্ক্রিনিয়ারের মাথায় লেগে বল দিক পরিবর্তন করে বাইরে চলে যায়। এখানে শেষ নয়। এবার অবাক হলেন মোহাম্মদ সালাহ। বিরতির পর খুব কাছ থেকে তার নেওয়া শটটি কিভাবে পোস্টে লেগে লিভারপুলকে গোল বঞ্চিত করলো তা শুধু তিনি চেয়ে দেখলেন।
এরপরেই খেলায় ফেরে ইন্টার মিলান। বক্সের মধ্যে পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলেন না ইন্টারের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজ। অনেকটা সময় পেয়েও তিনি বল বাইরে মারেন। অবশ্য এ হতাশায় তাকে খুব বেশি সময় সহ্য করতে হয়নি। ৬১ মিনিটের সময় সতীর্থের বাড়ানো পাসে বক্সের বাইরে থেকে চমৎকার প্লেসিং শটে বল জালে জড়িয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে অ্যানফিল্ড থমকে যায়। তবে কিছু সময় পর তারা আবার স্বস্তি ফিরে পায়। গোল পায়নি লিভারপুল, তবে ইন্টারের সানচেজ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে মাঠ থেকে বহিষ্কৃত হন।
পিছিয়ে পড়ার পর সালাহ আবারো গোল থেকে বঞ্চিত হন। এবারো তার বল পোস্টে লাগে। শুধু তাই নয়, বদলি খেলোয়াড় লুইস দিয়াজ যে গোল করতে পারেননি এ ব্যর্থতায় তিনি নিজে নিজেই অবাক হবেন। ছোট বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া শটটি ভিদালের পায়ে লেগে দিকভ্রান্ত হয়।
নিজেদের মাঠে লিভারপুলের এ বছর এটা প্রথম হার। সর্বশেষ তারা অ্যানফিল্ডে ২০২১ সালের ৭ মার্চ হেরেছিল। রিলেগেশন আতঙ্কে থাকা ফুলহামের কাছে হেরেছিল তারা। এরপর দলটি ২৮ ম্যাচে অপরাজিত। এর মধ্যে ২১ ম্যাচে জয় পেয়েছে, ড্র করেছে সাতটিতে। ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম তারা ইন্টার মিলানের কাছে হারলো। হার সত্ত্বে গত পাঁচ মৌসুমের মধ্যে চতুর্থবারের মতো ইন্টার মিলান শেষ আটে পৌঁছালো।
ম্যাচ শেষে সালাহ বলেন, ‘ইন্টার মিলান খুবই কঠিন দল। যাহোক আমরা আগের জয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছেছি এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার শট দুইবার পোস্টে লেগেছে। যাহোক আশা করছি পরের ম্যাচে তিনবার গোল করি। সবাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিততে চায়। আমারা দুটোর জন্যই লড়াই করছি।
মন্তব্য