সব বিভাগেই দুর্দান্ত। ব্যাট হাতে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে দেয় ব্যাটাররা। তিন ফিফটিতে রান আসে তিনশর ওপরে। পরে বল হাতে বোলাররা দেখান তাদের কারিকুরি। প্রথমে পেস বোলিংয়ে ঝড় তোলেন শরিফুল ও তাসকিন। পরে স্পিন ঘূর্ণিতে প্রোটিয়াদের নাস্তানাবুদ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের ফিল্ডিংও ছিল নয়নকাড়া। সব মিলিয়ে দারুণ টিম এফোর্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসে ৩৮ রানের স্মরণীয় জয়। দারুণ জয়ে সতীর্থদের নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার মতে এই জয় দলকে উজ্জীবিত করছে পুরোদমে।
সামনে এখন প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের হাতছানি। আজই হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে। জোহানেসবার্গে ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটায়।
প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ করে সাত উইকেটে ৩১৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ রান এটি বাংলাদেশের, সব মিলিয়ে দ্বিতীয়। বড় টার্গেটে ব্যাট করতে নাামা দক্ষিণ আফ্রিকা শুরু থেকেই ছিল চাপে। মাঝখানে একটু প্রতিরোধ গড়লেও শেষ হাসি বাংলাদেশের। সাত বল বাকি থাকতে দলটি অল আউট হয় ২৭৬ রানে। ৭৭ রানের সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। তবে তামিমের চোখে এই ম্যাচে জয়ের নায়ক অনেকেই। বিশেষ করে তার কাছে তরুণ ব্যাটার ইয়াসির আলীর ফিফটি, মিরাজের দুর্দান্ত স্পেল, তাসকিন ও শরিফুলের দারুণ বোলিং, পাশাপাশি ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে তাকে।
শেষদিকে মেহেদী হাসান মিরাজ যেভাবে জ্বলে উঠে ৪ উইকেট নিয়ে নেন, তাতে জয়ের পথটা সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের। শুরুতে বেশ রান খরচা করা মিরাজই লেখেন দারুণ এক ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। যা তাকে তামিম ইকবালের কাছে নায়ক করে তুলেছে।
সাকিব ম্যাচসেরা, তবে মিরাজকেও একই সিংহাসনে বসাতে চান তামিম। ম্যাচের পর তামিম জানালেন, মিরাজও তার ম্যাচসেরা। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, ‘তার আত্মবিশ্বাস দেখে আমি খুব খুশি। এমন চাপের মধ্যে ডানহাতির সামনে ছোট বাউন্ডারিতে বোলিং করা, উইকেট এনে দেওয়া বড় বিষয়। আমার মতে সেও আমার ম্যান অব দ্য ম্যাচ।’
অথচ বল হাতে মিরাজের শুরুটা দলের চাওয়া মাফিক ছিল না। প্রথম ৩ ওভারে তার খরচা ২৫ রান। চতুর্থ ওভারটা বেশ খরুচে, এক ছক্কা ও চারে ১৩ রান। ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। তামিম হয়তো মিরাজকে বোলিংয়ে আনতে সাহসই পাচ্ছিলেন না। এমন সময়ে মিরাজই চ্যালেঞ্জটা নেন। নিজেই গিয়ে বল চান বাংলাদেশের ডানহাতি এই স্পিনার। তামিমকে বলেন তাকে বোলিংয়ে আনতে, তাহলে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেবেন তিনি। বিশ্বাস রাখেন তামিম, সেই বিশ্বাস বিফলে যেতে দেননি মিরাজও। পরের ৫ ওভারে ২৩ রান খরচায় তুলে নেন ৪ উইকেট।
মিরাজকে বোলিংয়ে আনার গল্পটা কেমন ছিল? তামিম বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রতিটি দলে মিরাজের মতো চরিত্র প্রয়োজন। প্রথম ৪ ওভারে ৪০ (৩৮) রান দেওয়ার পর সে আমার কাছে এসে বলে, ‘আমাকে বল দিন, আমি খেলা বদলে দিব’। সে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিল। এটি অধিনায়কের কাজ সহজ করে দেয়, যখন আপনার খেলোয়াড়রা নিজেদের ওপর আত্মবিশ্বাসী থাকে। সব সময় হয়তো আমাদের পক্ষে আসবে না, কখনো কখনো আমাদের বিপক্ষেও যেতে পারে।’
২০ বছরের অপেক্ষা ফুরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম জয়ের স্বাদ নিলো বাংলাদেশ, তামিমের কাছে এটা বিরাট পাওয়া। মাত্র চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নেমে হাফ সেঞ্চুরি করা ইয়াসির আলী রাব্বি ও পেসারদের প্রশংসা করে তামিম বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অনেক বড় জয়। দল যেভাবে খেলেছে, তাতে খুবই গর্বিত। ইয়াসিরের ইনিংসটা সত্যিই স্পেশাল ছিল। ব্যাট হাতে মিরাজ থেকে শুরু করে মাহমুদউল্লাহ- ছোট ছোট সব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের জন্য একটা বড় বিষয়- আমাদের পেসাররা ভালো করছে এবং আমাদের ম্যাচ জেতাচ্ছে। গত দুই বছরে পেসরার দুর্দান্ত বোলিং করেছে।’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হয় ইয়াসিরের, কিন্তু প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে যান তিনি। পরের ম্যাচে ব্যাট করতে হয়নি। তৃতীয় ম্যাচে করেন কেবল ১। তবে তাকে আরও সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন তামিম।
সেঞ্চুরিয়নে ২৯তম ওভারে মুশফিকুর রহিম আউট হওয়ার পর ক্রিজে যান ইয়াসির। পঞ্চম উইকেটে সাকিবের সঙ্গে ৮২ বলে গড়েন ১১৫ রানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকায় যা বাংলাদেশের প্রথম শতরানের জুটি। এর ওপর ভর করেই দেশটিতে প্রথমবারের মতো তিনশ ছাড়ায় দল। ইয়াসির ৪৪ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে করেন ৫০ রান।
তামিমের পাশাপাশি ইয়াসিরকে নিয়ে প্রশংসা করেন সাকিবও। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাকিব জানান, এতো রান হওয়ার পেছনে বড় অবদান ইয়াসিরের ইনিংসের। তিনি বলেন, ‘তামিম ও লিটন আমাদের একটা ভালো শুরু এনে দিয়েছিল। এরপর আমাদের পুরানো বলটা কাজে লাগানো দরকার ছিল। ইয়াসির খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। তার সঙ্গে আমার জুটিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই জুটিতে ওর কৃতিত্ব অনেক।’
মন্তব্য