শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটেনি। অঘটন ঘটাতে পারেনি মেসিডোনিয়া। তাদেরকে হারিয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। মঙ্গলবার রাতে নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত প্লে অফ ম্যাচে ২-০ গোলের জয় নিয়ে পর্তুগাল কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে। দুটো গোলই করেছেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। উভয়ার্ধে একটি করে গোল করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা এই মিডফিল্ডার।
গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে রোনালদো গোল পাননি, তবে প্রথম গোলের রূপকার ছিলেন তিনি। ২২ মিনিটে তার পাস থেকে ফারনান্দেস গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। সে সঙ্গে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন আবার উজ্জ্বল করে তোলেন। মেসিডোনিয়ার এক দুর্বল পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রোনালদোর সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করেই গোলটি করেন ফারনান্দেস। এ গোলের পরই খেলার পর্তুগালের আধিপত্য বেড়ে যায়। তারই ফসল তারা দ্বিতীয়ার্ধে ঘরে তোলো। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে পাওয়া বলে ফারনান্দেস দ্বিতীয় গোলটি করেন।
ফারনান্দেসের দ্বিতীয় গোলের সঙ্গে সঙ্গে পোর্তোর ড্রাগাও স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৫০ হাজার দর্শক গগনবিদারী চিৎকারের মাধ্যমে বিশ্বকাপে খেলার টিকেটকে স্বাগত জানায়। ম্যাচ শেষে প্রায় ১৫ মিনিটে গ্যালারিতে উপস্থিত থেকে আনন্দ উৎসব করতে থাকে। তারা গান গাইতে থাকে। এ সময়ে পর্তুগালের খেলোয়াড় জাতীয় পতাকা নিয়ে ভিক্টোরি ল্যাপ করে।
ম্যাচে মেসিডোনিয়া নিজেদের দুর্ভাগ ভাবতেই পারে। কেননা ম্যাচের প্রায় ৭০ ভাগ সময় তারা বলের দখল রেখেছিল। তবে প্রতিপক্ষের পোস্ট লক্ষ্য করে মাত্র তিনবার শট নিতে সমর্থ হয়েছিল।
এ জয়ের ফলে টানা ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার টিকেট পেলো পর্তুগাল। সম্ভবত এটা হবে পর্তুগীজ যুবরাজ রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। তবে ৩৭ বছর বয়স্ক রোনালদো বিশ্বকাপের পর খেলা থেকে অবসর নেওয়ার সব জল্পনা কল্পনা বাতিল করে দিয়েছেন। বয়সের বিচারে নয়, বরং যতদিন খেলা উপভোগ করবেন ততদিন খেলা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
কঠিন পরীক্ষার মাঝ দিয়ে পর্তুগালকে কাতার বিশ্বকাপের টিকেট পেতে হয়েছে। মূল বাছাই পর্বে গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারায় তাদের প্লে অফে খেলতে হয়। প্লে অফের প্রথম পর্বে ভালোভাবে পার হয়েই তারা দ্বিতীয় পর্বে উঠেছিল। এ পর্বেও তারা ভালোভাবে পার হয়। তবে দলটি মেসিডোনিয়া হওয়ায় একটা যে আশঙ্কা ছিল না তা নয়। বিশ্বকাপ থেকে পর্তুগালের ছিটকে যাওয়ার একটা বড় আশঙ্কা যে ভর করে ছিল। মেসিডোনিয়ার শক্তিই এই আশঙ্কা তৈরি করেছিল। আগের ম্যাচেই মেসিডোনিয়া ইতালির বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নে ইতি টেনে দিয়েছিল। এই দলটিই জার্মানিকে হারিয়েছিল। ফলে পর্তুগালেরও সামনে একটা শঙ্কা দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে পর্তুগাল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে। তাইতো দারুণ উচ্ছ্বসিত ম্যাচের প্রথম গোলের রূপকার রোনালদো। ম্যাচ শেষে তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, আমরা কাতার বিশ্বকাপে জায়গা পেয়েছি। আমরা সেখানেই গিয়েছি যেখানে আমাদের যাওয়ার কথা।’
ম্যাচ শেষে জয়ের নায়ক ফারনান্দেস বলেন, ‘এই জয় আমাদেরকে বিশেষ একটা স্থানে পৌঁছে দেবে। কেননা আমরা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করেছি। এটাই এ মূহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। আমার বিশ্বাস আমরা তাদের তুলনায় ভালো খেলেছি। আমরা বাছাই পর্বে ভালো খেলেছি। তবে এই ম্যাচটাই সবচেয়ে বেশি আলোচিত কেননা এই ম্যাচই আমাদের বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছে।’
ফারনান্দেস আরো বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমি দলকে সহায়তা করতে পেরেছি। আমি দলে গোল করার জন্য আসিনি। আমি এসেছি দলকে সহায়তা করার জন্য। যদি আমি গোল করে দলকে সহায়তা করতে পারি তাহলে আমি খুশি। যে কোনো খেলোয়াড়ই গোল করতে পছন্দ করে। তবে মূল বিষয় হচ্ছে যেভাবে হোক দলকে সহায়তা করা। এ কারণেই আমি গোল করেছি। আর অতীতেও আমি এভাবে দলকে সহায়তা করেছি।’
মন্তব্য