ডারবান টেস্টে প্রথম দিন শুরু হয়েছিল একটু দেরিতে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল আলোক স্বল্পতা। ফলে প্রথম দিনে খেলা হয়েছিল মাত্র ৭৭ ওভার। গতকাল শুক্রবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে মাত্র ৩ ওভার পর নতুন বল হাতে পায় বাংলাদেশ। নতুন বলের উজ্জ্বলতা বাংলাদেশের বোলারদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে পিচে যেন আগুনের ফুলকি ছড়াতে থাকে। আর তাতেই জ¦লেপুড়ে ছারখার হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। তবে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস ৩৬৭ রানে শেষ হয়।
দিনের শুরুতে এমন আঘাত হজম করতে হবে তা হয়তো ভাবতেই পারেননি স্বাগতিক ব্যাটাররা। আগের দিন ৪ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে খেলা শেষ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় দিনে স্কোরটা সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে ঘিরে সে স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে এগোচ্ছিল। কিন্তু খালেদ আহমেদের এক ছোট্ট ঝড়ে সেই স্বপ্ন তছনছ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বড় লজ্জায় পড়তে হয়নি। টেম্বা বাভুমা ও সিমন হারমার শেষ পর্যন্ত দলের সংগ্রহকে সাড়ে ৩০০ পার করতে বড় ভূমিকা রাখেন।
আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ১২ রান যোগ করতেই স্বাগতিকরা জোড়া উইকেট হারায়। পরপর দুই বলে খালেদ আহমেদ ২ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। কাইল ভেরেনিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলার পর ভিয়ান মালডারকে মাহমুদুল হাসান জয়ের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। ভেরেনি অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ফলে রিভিউ নেন। কিন্তু রিভিউতে কোনো লাভ হয়নি। হতাশ হয়ে ক্রিজ ছাড়তে হয়। ভেরেনি আউট হওয়ার ধকল সামলে উঠতে না উঠতে মাল্ডারকে ও হারাতে হয় স্বাগতিকদের। এক বল খেলেই মাল্ডার ফিরে যান। ফলে ২৪৫ রানে ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। স্বল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়।
পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন দেখেছিলেন খালেদ আহমেদ। কিন্তু তা হয়নি। কেশব মহারাজ সেই ধাক্কা ভালোভাবে সামাল দেন। তবে খুব বেশিক্ষণ তিনি ক্রিজে থাকতে পারেননি। আসলে বাংলাদেশের বোলারদের দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকার আর কোনো ব্যাটার ব্যক্তিগত রানকে সমৃদ্ধ করতে পারেননি। বরং ক্রিজে আসা যাওয়ার পালায় ছিলেন তারা। কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন সিমন হারমার। তার দক্ষতায় প্রোটিয়ারা দলীয় সংগ্রহকে ৩৫০ পার করতে সমর্থ হয়।
খালেদ আহমেদ জোড়া আঘাত হানলেও ক্রমে ভয়ংকর হয়ে ওঠা বাভুমার উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বোল্ড আউট হন টেম্বা। ১৯০ বলে ৯৩ রান করেন তিনি। এক ডজন বাউন্ডারিতে ইনিংসটি সমৃদ্ধ করেছিলেন বাভুমা। টেম্বাকে হারানোর ধাক্কাটাও দক্ষিণ আফ্রিকা সহজে হজম করতে পারেনি। কেননা পরের ওভারেই আবার উইকেট হারানোর তিক্ত স্বাদ নিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। মিরাজের পরের ওভারেই উইকেট শিকারের উৎসব করেন এবাদত হোসেন। কেশব মহারাজকে ফিরিয়ে দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সিমন হারমার ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৭৩ বলে এ রান করেন তিনি। দুই জোড়া বাউন্ডারির পাশাপাশি একটা ওভার বাউন্ডারিও মারেন তিনি। স্বীকৃত সব ব্যাটারদের আউটের পর মূলত তার ইনিংসটি দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া লিজাদ উইলিয়ামসের ১২ এবং ডুয়ানে ওলিভারের ১২ রান ছিল উল্লেখযোগ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ৩৬৭ রান একটু হলেও অস্বস্তিকর। কেননা বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে কখনো তারা এত কম রানে ইনিংস শেষ করেনি। এবারই তারা প্রথমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪০০ রানের নিচে অলআউট হলো। বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন খালেদ আহমেদ। ২৫ ওভারে ৯২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। মিরাজ তার ঘূর্ণিতে কম সমস্যায় ফেলেননি প্রোটিয়া ব্যাটারদের। ৩ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। এবাদত হোসেনের ঝুলিতে জমা হয়েছে ২ উইকেট।
মন্তব্য