ডারবান টেস্টে শেষের পথে তরী ছেড়েছে রওনা হয়েছে মুমিনুল হকরা, জয়ের বন্দরে ভিড়বে কি সেই তরী? এ প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের। চতুর্থ দিনের তৃতীয় সেশনেই দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস গুড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। জয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ২৭৪ রান।
তবে দিনের শেষে ৬ ওভার ব্যাট করতে নেমেই তারা হারিয়ে ফেলেছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এরইমধ্যে ফিরে গেছেন দুই ওপেনার প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। তাদের সঙ্গে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও।
ফলে যে রান ধৈর্য নিয়ে খেললে টপকে ফেলা সহজ ছিল, নিজেদের ভুলে এখন তাই হয়ে গেছে পর্বত সমান। চতুর্থ ইনিংসে যে কোনো দলের জন্যই ব্যাট করা কঠিন, ডারবানের উইকেট সে তুলনায় এখনও মোটামুটি ভালো, বল এখনও ব্যাটে আসছে কিন্তু, যা হলো তাতে উল্টো বাড়ল আশঙ্কা। এর দায় নিতে হবে টপ অর্ডারকেই।
দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০৪ রানে অল আউট করে দিয়ে স্বস্তি নিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরেছিল টাইগাররা। তবে প্রথম ইনিংসে ৬৯ রানে পিছিয়ে থাকায় টার্গেটটা দাঁড়ায় ২৭৪ রানের। চতুর্থ ইনিংসের তিন সেশনে এই রান তোলা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। সঙ্গে বাড়তি ছিল চতুর্থ দিনের শেষ কটা ওভার, তবে এটুকু পথ পাড়ি দিতেই ঘটে গেল যত অঘটন।
পরিকল্পনা ছিল ধরে খেলার সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দিনের খেলার বাকি নেই বেশি একটা। দরকার ছিল শুধুই ধৈর্য। তবে ইনিংস উদ্বোধনে এসে শুরু থেকেই টাইগারদের অস্বস্তিতে ফেলতে থাকেন বাভুমার বোলাররা।
কেশব মহারাজের প্রথম ওভারেই মাহমুদুল হাসান জয় আটোসাঁটো ফিল্ডিংয়ের মধ্যে খানিকটা অস্বস্তিতে, আগের ইনিংসে শতক হাঁকালেও খোলস ছাড়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। প্রথম ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে একটি বাউন্ডারির মার। তিনি গুছিয়ে নিচ্ছিলিন নিজেকে। কিন্তু, ওভার শেষ হতেই ঘটে যায় ছন্দপতন।
দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই অপর ওপেনার সাদমানকে অফসাইডে একটি ফুল টস দিয়ে প্রলুব্ধ করেন হারমার। ফ্রন্ট ফুটে এসে কাভারে বলটি ঠেলতে চেয়েছিলেন সাদমান। কিন্তু, এজ হয়ে বল চলে যায় পিটারসেনের হাতে। খালি হাতেই বিদায় নিতে হয় তোকে। দুই ইনিংস মিলে সেই ৯ রানই সম্বল হয়ে থাকলো তার।
সেই জড়সড় অবস্থা আরো নাজুক হলো পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে মহারাজের বলে জয় বোল্ড আউট হয়ে গেলে। মহারাজের বলটি জয়ের ব্যাট প্যাডকে ফাঁকি দিয়ে স্টাম্পে আঘাত হানে। সেই চার রানেই বিদায় নিতে হয় তাকেও।
দল আরো বিপদে পড়ে একই ওভারে অধিনায়ক মুমিনুল হক লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে গেলে। ওভারের পঞ্চম কলে ঘটে ওই অঘটন। একই ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করে কেশব মহারাজ যখন উড়ছেন বাংলাদেশের তখন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার অবস্থা।
এরপর আর বল হয়েছে মোটে একটি ওভার। নন স্ট্রাইকিংয়ে থাকা মুশফিককে নিয়ে সে ওভারটি ভালোই সামাল দিয়েছেন শান্ত। তিনটি রানও এসেছে তার ব্যাটে। এই জুটিই আগামীকাল বাংলাদেশের ভরসা হয়ে দাঁড়াবেন। আর নিচে থাকা লিটন দাসের দিকে তাকিয়ে এখন জয়ের আশা করবে বাংলাদেশ।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৭৩ রানে অল আউট করে বাংলাদেশ। দলীয় ৪৮ রানে পড়ে প্রথম উইকেট। সারেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন এবাদত হোসেন। ৫১ বলে মাত্র ৮ রান করে এলবি হয়ে ফেরেন প্রোটিয়া ওপেনার।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক ডিন এলগার ও কিগান পিটারসেন। দলীয় ১৬৬ রানের মাথায় এ জুটি বিচ্ছিন্ন করেন তাসকিন আহমেদ। বিশ্রাম নিয়ে মাঠে ফিরেই এলগারকে এলবিডব্লিউ করেন তিনি। ১০২ বলে ৭টি চারে ৬৪ রান করে ফেরেন এলগার।
এরপর মিরাজ ঝলক। তিনি ফেরান ক্রিজে থিতু হওয়া পিটারসেনকে। ৮৫ বলে চারটি চারে ৩৬ রান করা পিটারসেন ক্যাচ দেন মাহমুদুল হাসান জয়ের হাতে। পরের ওভারেই বিপজ্জনক টেম্বা বাভুমাকে ফেরান এবাদত হোসেন। ২২ বলে ৪ রান করা বাভুমার স্লিপে দেওয়া ক্যাচ লাফিয়ে এক হাতে মুঠোবন্দি করেন ইয়াসির রাব্বি। দেখার মতো ক্যাচই বলতে হবে এটিকে।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কাইল ভেরিনও। তাকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৮ বলে ৬ রান করা ভেরিন ক্যাচ দেন সাদমানের হাতে। ১৪৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় ৫ উইকেট।
যদিও প্রথম সেশনে বাংলাদেশ হাতছাড়া করেছে বেশকিছু আউটের সুযোগ। যার সদ্ব্যবহার ভালো মতো করে স্বাগতিকরা। তবে এরপরই ফিরে আসে মুমিনুল বাহিনী।
মোল্ডার মেহিদির বলে কট আউট হওয়ার আগে করতে পারেন মোটে ১১ রান। কেশব মহারাজ (৫), সিমন হারমান (১১) দলকে আর বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি। উইলিয়ামস ও অলিভিয়ার কোনো রান না করেই আউট হওয়ায় লড়াইয়ের সঙ্গী হারান ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকা রায়ান রিকেলটন।
তবে চতুর্থ দিনে ম্যাচের চেয়ে বাংলাদেশ শিবিরে অস্বস্তি ছড়ায় তাসকিনের ইনজুরি। এদিনই নিশ্চিত হওয়া যায় প্রথম টেস্ট খেলেই দেশে ফিরবেন তিনি। তার সঙ্গে আসবেন আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও। যদিও তিনি প্রথম টেস্টের একাদশে নেই।
ক্রিকইনফোকে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, ‘তাসকিন ও শরিফুল প্রথম ম্যাচের পরই দেশে ফিরে আসবে। তারা ফেরার পর আমরা পর্যবেক্ষণ করব। আমরা চেষ্টা করছি দেখতে তাসকিন কীভাবে ইনজুরিতে পড়ল। আমাদের আরো চারজন পেস বোলার আছে স্কোয়াডে, তাই আর দরকার নেই।’
৫ এপ্রিল দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন তাসকিন ও শরিফুল। তাদের বাইরে প্রথম টেস্টে খেলছেন এবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। স্কোয়াডে আছেন আরো দুই পেসার শহিদুল ইসলাম ও আবু জায়েদ চৌধুরী।
শেষ ভালো যার, সব ভালো তার-এই প্রবাদটিকে কি শেষদিনে নিজেদের করে নিতে পারবে বাংলাদেশ?
মন্তব্য