চার দিনের লড়াইটা ছিল দেখার মতো। প্রতিপক্ষকে ৩৬৭ রানে অলআউট করার পর বাংলাদেশ করতে পেরেছিল ২৯৮ রান। রানে একটু পিছিয়ে থাকলেও বোলাররা তা পুষিয়ে দিয়েছিলেন চমৎকার বোলিংয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পেরেছিল মাত্র ২০৪ রান। জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট ছিল মাত্র ২৭৪ রান। অথচ এমন লক্ষ্যে খেলতে নেমে চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় ৬ ওভার খেলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। শঙ্কা তখনই চেপে বসেছিল। কারণ বাকি ৭ উইকেটে পরের দিন অর্থাৎ পঞ্চম দিনে লড়াই করা হবে কঠিন। ডারবান টেস্টের পঞ্চম দিনের চিত্র সবারই জানা। লড়াই দূরে থাক, ন্যূনতম মাটি কামড়েও থাকতে পারেনি মুমিনুল শিবির। টপঅর্ডারে নাজমুল হোসেন শান্ত ও লেজের দিকে তাসকিন আহমেদ একটু প্রতিরোধ গড়লেও বাকিরা ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার মহারাজ ও হার্মারের স্পিন ভেল্কিতে বাকি ৭ উইকেটে বাংলাদেশের ইনিংসের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৫৩ মিনিট। রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট হারে ২২০ রানের ব্যবধানে। আগামীকাল পোর্ট অব এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ মোকাবিলা করবে দক্ষিণ আফ্রিকার। সিরিজ ড্র করতে হলে এ ম্যাচে জিততে হবে বাংলাদেশকে। তবে শেষ ম্যাচ ড্র হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজের ট্রফিতে চুমু খাবে প্রোটিয়ারা। প্রথম টেস্টের ভুল ত্রুটি শুধুরে দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবল প্রত্যয় বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন মুমিনুল হকের। ডারবান টেস্টের পঞ্চম দিনে ইনিংস টিকেছে মাত্র ৫৫ মিনিট। দুই স্পিনারে ধরাশায়ী পুরো দল। ডারবান টেস্টের শেষের এ ছবি মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে এ ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদি মুমিনুল হক। সতীর্থদের মানসিকভাবে আরো দৃঢ় হয়ে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে মাঠে নামার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এমন ভরাডুবির পরও ইতিবাচক অনেক কিছুই চোখে পড়ছে মুমিনুলের। তিনি জানালেন, পরের টেস্টে ভালো করার আশাবাদ। মুমিনুল বলেন, ‘এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে। ঘুরে দাঁড়াতে না পারার তো কোনো কারণ নেই। আমরা পাঁচ দিনের মধ্যে চারটি দিন খুব ভালো খেলেছি। শুধু শেষ দিনটায় খুব বাজে ব্যাটিং করেছি। বিশেষ করে কালকের শেষ সেশনটা, তারপর আজকের (সোমবার) প্রথম সেশনটা।’ ‘তো এখানে অনেক ইতিবাচক ব্যাপার আছে, যেটা দেখে আমার মনে হয়, আমরা সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। (মাহমুদুল হাসান) জয় খুব ভালো একটা ইনিংস খেলেছে, ১৩৭ রানের। লিটন (দাস) ভালো ব্যাটিং করেছে। (ইয়াসির) রাব্বি ভালো ব্যাটিং করছে, (মেহেদী হাসান) মিরাজও ভালো করছে।’
নিজেদের ইতিহাসে দেশের বাইরে এ টেস্টে শুধু অষ্টমবারের মতো প্রতিপক্ষকে দুবার অলআউট করতে পারে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে প্রাপ্তি আছে বেশ কিছু। শরিফুল ইসলামের চোটে সুযোগ পাওয়া সৈয়দ খালেদ আহমেদ প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভালো করেছেন পরের ইনিংসেও। এবাদত হোসেন উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে। ডান কাঁধে সমস্যা নিয়েও ভালো করেছেন তাসকিন আহমেদ। একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলা মিরাজ ওভারের পর ওভার করে গেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। তাসকিন ও শরিফুলকে যদিও দ্বিতীয় টেস্টে পাওয়া যাবে না। যাদের পাওয়া যাবে, তাদের নিয়েই বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া পরের টেস্টে দারুণ কিছুর সম্ভাবনা দেখছেন মুমিনুল।
বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘বোলাররা খুবই ভালো করেছে। মিরাজ ছিল অসাধারণ। এ উইকেটে প্রথম থেকে সে খুব ভালো বোলিং করেছে। পেস বোলাররাও খুব ভালো বোলিং করেছে। আমরা যে পাঁচ দিনই খারাপ খেলেছি, তা তো নয়। শেষ দিনটা আমরা বাজে খেলেছি, যে কারণে ম্যাচটা আমাদের হাত থেকে চলে গেছে। আর টেস্ট ক্রিকেটে এক দিন খারাপ করলে সেখান থেকে ফেরা খুব কঠিন। আমার মনে হয়, আমাদের মানসিকভাবে আরো দৃঢ় হয়ে এ জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’ বাংলাদেশ বরাবর স্পিনে ভালো খেলে। কিন্তু ডারবান টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেই স্পিনারদের কাছেই অসহায় আত্মসমর্পণ বাংলাদেশের, যা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। এমনটি মানতে পারছেন না মুমিনুল হকও। তার কাছে বিদেশে এসে স্পিনারদের কাছে উইকেট দেওয়া বড় ক্রাইম।
১০ ওভার বোলিং করে ৩২ রানে ৭ উইকেট নেন মহারাজ, ৯ ওভারে ২১ রানে ৩টি হার্মার। তাতে ৭২ বছর পর প্রতিপক্ষের সব উইকেট স্পিনে নিতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব সহজ ছিল না। তবে খুব ভয়ংকরও ছিল না। মহারাজ ও হার্মারের স্পিনও ছিল না খুব বিপজ্জনক কিছু। এরপরও ব্যাটিং এভাবে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পেছনে মুমিনুল জানান নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতার কথাই। তিনি বলেন, ‘বিদেশে এসে স্পিনারদের উইকেট দেওয়া বিরাট বড় একটা ক্রাইম। আমার কাছে মনে হয়, বিদেশে এসে আপনি স্পিনারদের উইকেট দিতে পারবেন না। এ কারণে দায়টা আমারই সবচেয়ে বেশি। ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদেশে এসে কোনোভাবেই স্পিনারদের উইকেট দেওয়া যাবে না। কারণ স্পিনারদের বিপক্ষেই তো রান করার সুযোগ বেশি থাকে। অবশ্যই এটা ব্যাটিং ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
মন্তব্য