টেস্ট খেলায় তার অনীহা অনেক দিন ধরেই। নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে গত কয়েক বছরে অনেক দেশের বিরুদ্ধেই সাদা পোশাকে দেখা যায়নি সাকিব আল হাসানকে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়েও অনেক নাটক হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৩ ওয়ানডে খেলে দেশে ফেরেন সাকিব পারিবারিক কারণে। খেলা হয়নি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। পারিবারিক কারণ না থাকলেও টেস্ট তিনি খেলতেন কিনা, তা নিয়ে ছিল সংশয়।
ঘরের মাঠে আগামী মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এ টেস্ট সিরিজে খেলবেন সাকিব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তা জানান তিনি। টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে সাকিব খেলে যাচ্ছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে। টেস্ট খেলা নিয়ে আগ্রহ কম থাকলেও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ নিয়ে বেশ আশাবাদী সাকিব। এক জয় নয়, বরং সিরিজ জয়েই চোখ সাকিবের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বিধ্বস্ত হয়ে ফেরায় সিরিজটির গুরুত্ব আরো বেড়েছে। ঘরের মাঠে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ভালো করতে না পারলে সমালোচনা হবে বেশ। তা অনুধাবন করতে পারছে ক্রিকেটাররা। আর তাই লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ভালো করতে মরিয়া মুমিনুল শিবির।
রাজধানীর একটি আউটলেটে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিন আসন্ন টেস্ট সিরিজ নিয়ে আশাবাদের কথা জানান সাকিব। যেখানে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রত্যাশা থাকবে ভালো কিছু করার। একইসঙ্গে সিরিজ জেতার লক্ষ্য থাকবে। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের ভালো করার সম্ভাবনা খুবই বেশি।’ আশার মাঝে কিছুটা আশঙ্কাও আছে সাকিবের মনে। আশঙ্কাটা শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের কন্ডিশন প্রায় একই রকম হওয়ায়। তারপরও অবশ্য আশা হারাতে চান না সাকিব, ‘শ্রীলঙ্কা আমাদের মতোই এশিয়ার দল হওয়ায় দুই দেশের কন্ডিশন প্রায় একই রকম। তবে আমি আশাবাদী, আমরা সিরিজটা জিততে পারব।’ ব্যক্তিগত কারণে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে পারেননি সাকিব। গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান খুবই নাজুক। ২২ বারের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জয় মাত্র একটিতে। হার ১৭ ম্যাচে। ড্র হয়েছে চার ম্যাচ। একমাত্র জয় ২০১৭ সালে নিজেদের শততম টেস্টে। সেই জয় এসেছে অবশ্য লঙ্কানদের মাঠ কলম্বোর পি-সারা ওভালে। নিজেদের মাঠে খেলা ৮ টেস্টের ৬টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ, ড্র দুটি। এবার ঘরের মাঠে তাই সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। হারের পাল্লাই ভারী। ঘরের মাঠে টাইগাররা এবার ইতিহাস বদলাতে পারে বলে বিশ^াস সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার। ডিপিএলে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের জয়ের পর মাশরাফি জানান, ‘সংস্করণ যেটাই হোক, ঘরের মাঠে খেলা হলে আমি সবসময়ই আশাবাদী। নিজেদের মাঠে যেকোনো দলের বিপক্ষে আমরাই ফেভারিট।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঘরের মাঠে টেস্টে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি, তাহলে শ্রীলঙ্কাকে কেন নয়? বাংলাদেশে যখন খেলা হবে, আমি মনে করি সমর্থক থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোর্ডও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী থাকে। আমরা বাজেভাবে দুটি টেস্ট (দক্ষিণ আফ্রিকায়) হেরে এসেছি। এর মানে এই নয় যে, আমরা ভালো খেলব না। আমার বিশ^াস, বাংলাদেশ ইতিবাচক পারফর্ম করবে ও জিতবে।’ দীর্ঘ ৪ বছর পর টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে শ্রীলঙ্কা। আগামী মে মাসে দুটি টেস্ট খেলবে তারা। সূচি অনুযায়ী আগামী ৮ মে ঢাকায় পা রাখবে লঙ্কানরা। এরপর সোজা চট্টগ্রাম চলে যাবে। ১১ মে থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট শেষ করে ঢাকা চলে আসবে দুই দল। আগামী ১৫ মে থেকে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এর আগে সর্বশেষ দেখায় ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার কাছে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। চলতি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলেছে লঙ্কানরা। এ চার ম্যাচে দুটি করে জয় ও পরাজয়ে লঙ্কানদের পয়েন্ট ২৪। পয়েন্ট টেবিলের ৪ নম্বরে আছে দলটি।
মন্তব্য