নাটকীয় এক জয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা ধরে রেখেছে ম্যানচেস্টার সিটি। মঙ্গলবার রাতে নিজেদের মাঠে সাত গোলের নাটকীয় ম্যাচে ইংলিশ ক্লাবটি ৪-৩ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকে। সেমিফাইনালের প্রথম লেগের এ জয় ম্যানসিটিকে ফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। ম্যানসিটির বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে নিজেদের ফাইনাল তুলতে রিয়াল মাদ্রিদের সামনে ফিরতি লেগে এখন জয় ভিন্ন কোনো পথ খোলা নেই।
দুই জায়ান্ট দলের ম্যাচে যা কিছু ঘটেছে তা কেউ কল্পনাতেও আনতে পারেনি। ম্যাচের মাত্র দ্বিতীয় মিনিটে সফরকারী রিয়াল মাদ্রিদকে থমকে দিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই কেভিন ডি ব্রুইন গোলদাতার খাতায় নাম লিখিয়ে নেন। ডান দিক থেকে রিয়ার মাহরেজের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোলটি করেন তিনি। এক মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে গোলটি করেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে দ্রুততম গোল এটি। এ গোলের চাপ সহনীয় হতে না হতেই আবার ম্যানসিটি গোল উৎসবে মেনে ওঠে। অনেকটা নিরীহ একটা বল বক্সে ফেলেছিলেন কেভিন ডি ব্রুইন। রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগ বলটি ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়। আর এ সুযোগে গ্যাব্রিয়েল জেসুস স্কোরশিটে নাম তুলে নেন।
১১ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া ম্যানসিটি এ অর্ধে আর কোনো গোল পায়নি। তবে একের পর এক আক্রমণে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগকে তটস্থ করে রেখেছিল। এ সময়ে অন্তত দুটো সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করে তারা। এরই মধ্যে করিম বেনজেমার গোলের সুবাদে রিয়াল মাদ্রিদ ব্যবধান কমিয়ে ১-২ করে। দুই গোলে এগিয়ে থাকায় হয়তো সিটির রক্ষণভাগ একটু বেশিই আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। আর তাইতো ফারল্যান্ড মেন্ডির ক্রসকে সহজেই গোলে রূপ দেন বেনজেমা। অবশ্য এ অর্ধেই রিয়াল মাদ্রিদ সমতা আনার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় ছিল। ২৩ মিনিটে ম্যানসিটি নিজেদের জালে নিজেরাই বল জড়াতে যাচ্ছিল। কিন্তু বলটা পোস্টে লেগে ফিরে যাওয়ায় এ যাত্রায় আত্মঘাতি গোল থেকে রেহাই পায় স্বাগতিকরা।
প্রথমার্ধের বেনজেমার গোল অবশ্য বেশিক্ষণ স্বস্তি দেয়নি রিয়াল মাদ্রিদকে। কোচেন নতুন পরামর্শ নিয়ে যখন সফরকারীরা মাঠে ফিরেছে তখনই আবার তাদের গোল হজম করতে হয়েছে। প্রথমার্ধে একটা সহজ সুযোগ নষ্ট করা ফিল ফোডেন এবার গোলদাতা। ম্যানসিটি আবার দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ডান দিক থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে গোলটি করেন তিনি। এ গোলের আনন্দ শেষ না হতেই ম্যানচেস্টার সিটির গোলরক্ষককে জাল থেকে বল কুড়াতে হয়। দ্বিতীয়ার্ধে গোল হজমের মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলে রিয়াল মাদ্রিদ আবার ব্যবধান কমায়। অসাধারণ এক গোল করেন ভিনিসিয়াস। সে সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের ফিরে আসার সামর্থ্যওে প্রমাণ দেন।
৭৪ মিনিটে বার্নার্ডো সিলভার অসাধারণ গোলে আবার ম্যানসিটি এগিয়ে যায়। তবে হাল ছাড়েনি রিয়াল মাদ্রিদ। ব্যবধান কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখে তারা। তারই ফসল ঘরে তোলে ৮২ মিনিটে। বেনজেমা পেনাল্টি থেকে ব্যবধান কমিয়ে ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখেন। ডান দিক থেকে নেওয়া ফ্রি কিকের বল হেড করার সময় ডিফেন্ডার লাপোর্তের হাতে বল লাগলে রিয়াল মাদ্রিদ পেনাল্টি পায়। বেনজেমা তা থেকে গোল করেন। এবারের টুর্নামেন্টে এটা বেনজামার ১৪তম গোল, যা তাকে এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব এনে দিয়েছে।
ফাইনালের টিকেটের প্রত্যাশায় আগামী ৪ মে ফিরতি লেগে বার্নাব্যুতে মুখোমুখি হবে তারা। তবে ম্যাচ যা ঘটেছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘এ হারে আমরা হতাশ। বার্নাব্যুতে আরো ৯০ মিনিটের খেলা বাকি। আশা করছি ভিন্ন এক ম্যাচ হবে সেখানে। তবে দল যেভাবে খেলেছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। সিটির বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল খুবই জটিল। তারা খুবই ভালো খেলেছে।’
মন্তব্য