বয়স যে খুব বেশি হয়েছিল তা নয়। মাত্র ৪৬। অথচ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সায়মন্ডসকে এখানেই জীবনের দাঁড়ি টানতে হলো। শনিবার রাতে সায়মন্ডসের বাসস্থান টাউন্সভিলে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। কুইন্সল্যান্ড পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, টাউন্সভিলে থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে হার্ভে রেঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সায়মন্ডস মারা যান। পুলিশ দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, রাত ১১টার দিকে হাভে রেঞ্জ রোডে সায়মন্ডসে বহনকারী গাড়িটি চলছিল। গাড়িটি অ্যালিস রিভার ব্রিজের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। জরুরি সেবাসমূহ দ্রুত সেখানে পৌঁছে সায়মন্ডস ও গাড়িচালককে উদ্ধার করে। মারাত্মক ইনজুরির কারণে সায়মন্ডস মারা যান।’
১৯৯৮ সালে সায়মন্ডসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। বিগ হিটার হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি ছিল এ অস্ট্রেলিয়ানের। দেশের হয়ে তিনি ২০০৩ ও ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ জয়ে করেছেন। দুইবারই দলের অন্যতম তারকা ছিলেন।
ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে জম্ম সায়মন্ডসের। ইচ্ছা করলে তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারতেন। ১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ড এ দলেও ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু সে ডাক উপেক্ষা করে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেলেন তিনি। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে অসাধারণ এক খেলা উপহার দিয়েছিলেন। উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে খাবি খাওয়ার অবস্থা অস্ট্রেলিয়ার। ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল অস্ট্রেলিয়া। এ সময় ১২৫ বলে ১৪৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দেন।
২০০৪ সালে তার টেস্ট অভিষেক হয়। ২০০৮ সালে টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস উপহার দেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে সিডনিতে ১৬২ রান করেছিলেন। এ ম্যাচটা তাকে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আনে। তবে ব্যাটিং পারফরম্যান্সে নয়, মুখের পারফরম্যান্সে। ভারতের স্পিনার হরভজন সিংয়ের সঙ্গে এক বিবাদ ব্যাপক বিতর্কের জম্ম দেয়। মূলত মাঠের বাইরের ঘটনা সবসময় তার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল। যে কারণে ২০০৫ সালে তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হন। ২০১২ সালে তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানান। তবে ক্রিকেট থেকে সরে যাননি। মাঠ থেকে সরে ধারাভাষ্যকার বক্সে স্থান করে নিয়েছিলেন।
এ নিয়ে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া তিন সাবেক ক্রিকেটারকে হারালো। মার্চের শুরুতে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যান দুই কিংবদন্তী শেন ওয়ার্ন ও রডনি মার্শ। সায়মন্ডসের মৃত্যুতে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড গভীর শোক প্রকাশ করেছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান লাচলান হেন্ডারসন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট আরো একজন সেরা ক্রিকেটারকে হারালো। জম্মগতভাবে সায়মন্ডস ছিলেন মেধাবী ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ে তার দারুণ ভুমিকা ছিল। কুইন্সল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি।’
কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটের চেয়ারম্যান ক্রিস সিম্পসন বলেন , ‘আমি তার সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
মন্তব্য