-->
শিরোনাম
চট্টগ্রাম টেস্ট

ম্যাথিউসের ব্যাটে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক
ম্যাথিউসের ব্যাটে পিছিয়ে বাংলাদেশ

পারলেন না পেসাররা। দেখা গেল তাদের নখদন্তহীন বোলিং। যতটুকু করলেন তিন স্পিনার। তারপরও দিন শেষে বাংলাদেশ শিবিরে হতাশার ছবি। দিনের সবটুকু আলো কেড়ে নিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে দাপুটে অবস্থানে শ্রীলঙ্কা। দিন শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৮ রান। এই ৪ উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে তিন স্পিনার। দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ থেকেছেন উইকেটশূন্য। খুব ভালো মতো টের পাওয়া গেল তাসকিন-মোস্তাফিজের অভাব।

দিনের শুরুতে টস পর্ব জেতে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নেন আগে ব্যাট করার। ফার্নান্দোর সঙ্গে অধিনায়ক করুণারত্নে শুরু থেকে দেখেশুনে খেলেছেন। তারপরও জুটি বড় হয়নি। দলীয় ২৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ পায় প্রথম উইকেটের দেখা। মিরাজের বদলে স্কোয়াডে আসা নাঈম ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। অফ-স্টাম্পের একটু বাইরে পড়ে অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বল কাট করেন লঙ্কান অধিনায়ক। তবে এর আগে ছুঁয়ে যায় তার প্যাড। জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। ভাঙে ২৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। ওশাদা ফার্নান্দোর সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন করুণারত্নে। সফল হননি তিনি, তবে ইম্প্যাক্ট আম্পায়ার্স কল হওয়ায় টিকে থাকে রিভিউ। ১৭ বলে বাঁহাতি এ ওপেনার করেন ৯। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কুশল মেন্ডিজের সঙ্গে হাল ধরেন ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো। এ জুটি বেশ জমে গিয়েছিল। তবে শেষ অবধি এ জুটি ভাঙেন স্পিনার নাঈম হাসানই। ওভার দা উইকেটে করা অফ-স্পিনারের অফ-স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি পা বাড়িয়ে খেলার চেষ্টা করেন ওশাদা। ঠিকমতো পারেননি, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে লিটন দাসের গ্লাভসে। ভাঙে ৮১ বল স্থায়ী ৪৩ রানের জুটি।

আম্পায়ার আবেদনে সাড়া দিলে সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন লঙ্কান ওপেনার। তবে আল্ট্রা এজে মেলে ব্যাটের বল স্পর্শর প্রমাণ। হতাশা নিয়ে ফেরেন ওশাদা। এক ছক্কা ও তিন চারে তিনি করেন ৩৬ রান। এরপর আরেকটি রিভিউতে অসফল বাংলাদেশ। শরিফুলের বলে ম্যাথিউসের এলবিডব্লিউর আবেদন সাড়া মেলেনি। এর কিছুক্ষণ পর নাঈমের বলে হাঁকাতে গিয়ে কুশলের ব্যাট চলে গিয়ে লাগে লিটনের হেলমেটে। ভাগ্য ভালো, আঘাত পাননি তিনি খুব একটা।প্রথম সেশন শেষে শ্রীলঙ্কার হয়ে ক্রিজে অপরাজিত ছিলেন কুশল মেন্ডিস (২৭) ও অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউস (০)। দ্বিতীয় সেশনে দুজনই পান ফিফটির দেখা। শ্রীলঙ্কার স্কোরও বেড়ে যায় আস্তে আস্তে। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমতো ছড়ি ঘুড়িয়েছেন দুজন। কুশল পান টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ম্যাথিউস পান টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩৮তম ফিফটি।

৯২ রানের এ জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারে বাংলাদেশ তৃতীয় সেশনের শুরুতে। আগের দুটি উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনার নাঈম ইসলাম। এবার ব্রেক থ্রু এনে দেন আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার বলে নাঈম ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন কুশল। তাইজুলের বলটি ছিল মারার মতোই। শর্ট বল স্পিন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। অনায়াসেই হতে পারত বাউন্ডারি। মেন্ডিস চেষ্টা করলেন লেগে ঘুরাতে, ঠিকমতো পারলেন না, সহজ ক্যাচ হয়ে যায় মিডউইকেটে। ভাঙে ২০৯ বল স্থায়ী ৯২ রানের জুটি। ১৩১ বরে তিন চারে ৫৪ রান করেন মেন্ডিস। তার ইনিংসে ছিল তিনটি চারের মার। তৃতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারেই মিলতে পারত আরেকটি উইকেট। কিন্তু সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে ম্যাথিউসের ভীষণ কঠিন ক্যাচ গ্লাভসে নিতে পারেননি লিটন দাস। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ম্যাথিউসের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে ছুটছিল কিপারের পাশ দিয়ে। ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নিতে চেষ্টা করেন লিটন, কিন্তু একটুর জন্য বলের নাগাল পাননি এ উইকেটকিপার।

চা-বিরতির পর বল হাতে নিয়েই সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। চমৎকার এক ডেলিভারিতে বিদায় করে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন ধনাঞ্জয়া। ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে ক্যাচ যায় সিøপের দিকে। প্রথম সিøপ থেকে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে ঝাঁপিয়ে মুঠোয় নেন মাহমুদুল হাসান জয়। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন মুমিনুল হক। দুটি ব্যর্থ রিভিউয়ের পর এবার সফল হয় বাংলাদেশ। আল্ট্রা এজে ব্যাটে বল স্পর্শ করার প্রমাণ মেলার পর পাল্টায় সিদ্ধান্ত। ভাঙে ২৫ রানের জুটি। ২৭ বলে ধনাঞ্জয়া করেন ৬ রান। তবে অপর প্রান্তে ম্যাথিউস ছিলেন দৃঢ়চেতা। ফিফটির পর ক্রমেই এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। একসময় পেয়েও যান। শরিফুলকে চমৎকার এক ফ্লিকে চার মেরে ম্যাথিউস পৌঁছে যান নতুন উচ্চতায়। আগের সেরা ৮৬ ছাপিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান অভিজ্ঞ এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। ১৮৩ বলে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি পান ম্যাথিউস। তার ফিফটি এসেছিল ১১১ বলে।

দিন শেষে ম্যাথিউস থাকেন অপরাজিত ১১৪ রানে। ২১৩ বলের ইনিংসে তিনি হাঁকান ১৪টি চার ও একটি ছক্কা। তার সঙ্গে চান্দিমাল আছেন ৩৪ রানে। ৭৭ বলের ইনিংসে তিনি হাঁকান দুটি চার। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে নাঈম হাসান নেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট পান সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ থাকেন উইকেটশূন্য। ম্যাচের শুরুতে থমথমে ছিল মাঠের পরিবেশ। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের স্মরণে ম্যাচ শুরুর আগে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উত্তর কুইন্সল্যান্ডের টাউন্সভিলের কাছে শনিবার রাতে দুর্ঘটনায় পড়ে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি বিশ^কাপ জেতা সাইমন্ডসের গাড়ি।

মন্তব্য

Beta version