২৪ রানে নেই ৫ উইকেট। টেস্টে যেকোনো দলের জন্যই এটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। তবে এমন পরিস্থিতিও সামাল দেওয়া যায় ঠান্ডামাথায়। তা প্রমাণ কররেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মিরপুর টেস্টে ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড গড়ে করলেন সেঞ্চুরি। তাতে বাংলাদেশ দলও পেল ভালো স্কোর। দিন শেষে স্বস্তির সুবাতাস। ৫ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৭৭ রান। পিচের কন্ডিশন ভালো বলেই টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু বিধিবাম। শুরু থেকেই ছিল বিপর্যয়। ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা। কাসুন রাজিথার বলে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল হাসান জয়।
ক্যারিয়ারের শুরুতে অমø-মধুর স্বাদ পেয়ে চলেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। কখনো লম্বা ইনিংস, কখনো শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়া! ৬ টেস্ট আর ৯ ইনিংসের ছোট্ট ক্যারিয়ারে ৪ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে গেল তার। শূন্যতেই শেষ তামিমও। বাংলাদেশ দুই ওপেনারকে হারায় প্রথম দুই ওভারেই। আসিথা ফার্নান্দো বলটি খুব ভালো কিছু ছিল না। লেগ-মিডলে থাকা বলটিতে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য খানিকটা হারিয়ে ব্যাট চালিয়ে দেন আগেই। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় পয়েন্টের দিকে। ডানদিকে ফুল লেন্থ ডাইভে দারুণ ক্যাচ নেন প্রাভিন জয়াবিক্রমা। ৬৭ টেস্টে দশমবার শূন্য রানে ফিরেন তামিম। ব্যর্থতার বলয় থেকে বের হতে পারেননি মুমিনুল হক। আলগা শট খেলে বাংলাদেশ অধিনায়ক বিদায় নিলেন দলকে বিপদে ঠেলে। আসিথা ফার্নান্দো ধরলেন তার দ্বিতীয় শিকার।
অফ-স্টাম্পে পিচ করে অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলটি অনায়াসেই ছেড়ে দিতে পারতেন মুমিনুল। বাংলাদেশ অধিনায়ক খেলবেন কী ছেড়বেন ভেবে শেষ মুহূর্তে ব্যাট পেতে দিলেন। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেল বেশ। বল তার ব্যাটের কানায় আলতো ছুঁয়ে আশ্রয় নিল কিপারের গ্লাভসে। ৯ রানে আউট মুমিনুল। এ নিয়ে টানা ৬ ইনিংসে তিনি বিদায় নিলেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। সর্বশেষ ১৪ ইনিংসের ১১টিতেই তিনি স্পর্শ করতে পারলেন না ১০। এরপর গেলেন শান্ত। বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। রাউন্ড দা উইকেটে এসে ক্রিজের বেশ দূর থেকে বল করেন রাজিথা। সেই অ্যাঙ্গেলেই বিভ্রান্ত হন শান্ত। একটু ভেতরে ঢোকা বলে সামনে অনেক পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডের মধ্যে ফাঁক রয়ে যায় অনেক। সেখান দিয়েই বল ভেতরে ঢুকে আঘাত করে স্টাম্পে। কয়েকবার ডিগবাজি খেয়ে স্টাম্প চলে যায় কিপারের কাছে। ২১ বলে ৮ রান করে আউট শান্ত। বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ২৪।
সাকিব এলেন আর গেলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি পান দ্বিতীয়বারের মতো গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। রাজিথার কৌশল ছিল একই। ডেলিভারিটি করেন তিনি রাউন্ড দা উইকেটে ক্রিজের বেশ দূর থেকে, তবে লাইন এবার ছিল আরেকটু সোজা। অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকে এ বলও। সাকিব প্রথম বলেই লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে মিস করেন লাইন। বল লাগে পায়ে। জোরাল আবেদনে একটু ভেবে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সাকিব রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গেই। তবে রিভিউয়ে দেখা যায়, ব্যাটে লাগেনি বল। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল আঘাত করছিল লেগ-স্টাম্পে। আম্পায়ার্স কলে টিকে থাকে সিদ্ধান্ত। সাকিব আউট হন প্রথম বলেই। বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ২৪। এরপরের দৃশ্য খুবই সুখকর। লিটন-মুশফিকের ব্যাটে চলে প্রতিরোধ। দুঃসময় কাটিয়ে বাংলাদেশ পায় ভালো স্কোর। দুজনই দিন শেষে থাকেন সেঞ্চুরি করে অপরাজিত। দুর্যোগের প্রথম সেশন কাটিয়ে পরের দুটি সেশন নির্বেঘ্নে কাটিয়ে দেন দুজন।
আস্তে আস্তে জমে ওঠে তাদের জুটি। টেস্টে মুশফিক-লিটনের জুটিতে হাজার রান ছুঁতে এ টেস্টে প্রয়োজন ছিল ১১৮ রান। দুজনে পেরিয়ে যান সেই সীমানা। বাংলাদেশের অষ্টম জুটি হিসেবে হাজার রান তোলেন এ দুজন। হাজার ছোঁয়ার সময় দুজনের জুটির গড় ছিল ৬৬.৬৬। বাংলাদেশের হয়ে অন্তত ১০ ইনিংস একসঙ্গে ব্যাট করা জুটিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গড় এ দুজনেরই। দুজনই পান একসময় ফিফটি। তারপর সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস। যখন ক্রিজে নামেন, তখন ভয়াবহ অবস্থা ছিল বাংলাদেশের। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের কাজ শেষে সেঞ্চুরি সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় শতক। ৯৬ বলে ফিফটি করেন লিটন। এর মধ্যে ছিল আটটি চারের মার। ফিফটি করার পর লিটনের ব্যাট চলেছে একটু দ্রুত। ১৪৯ বলে তিনি পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির ইনিংসে তিনি হাঁকান ১৩টি চার।
এরপর সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিকও। টেস্টে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি এটা তার। প্রথম টেস্টে চট্টগ্রামে করেছিলেন ১০৫। এবার দলের দুঃসময়ে পেলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম শতক। ১১২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিক। যাতে ছিল ৯টি চারের মার। ফিফটির পর গতি কম ছিল তার। সেঞ্চুরি পেতে বল খরচ করেন ২১৮টি। সেঞ্চুরির ইনিংসে তিনি হাঁকান ১১টি চার। টেস্ট ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস খেলে এখনো অপরাজিত লিটন। টেস্টে লিটনের আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল ১১৪ রান। প্রথম দিন শেষে সেই লিটন এখন অপরাজিত ১৩৫ রানে। ২২১ বলের ইনিংসে লিটন হাঁকান ১৬টি চার। নেই কোনো ছক্কা। অন্যদিকে ১১৫ রানে অপরাজিত আছেন মুশফিক। ২৫২ বলের ইনিংসে তিনি হাকান ১৩টি চার। তারও নেই কোনো ছক্কা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজনে যোগ করেন ২৫৩ রান, ৪৬৯ বলে। টেস্টে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি বাংলাদেশের। বল হাতে শ্রীলঙ্কার হয়ে কাসুন রাজিথা তিনটি ও আসিথা ফার্নান্দো নেন দুটি উইকেট।
মন্তব্য