ক্যারিবীয় সফর বাংলাদেশের জন্য বরাবরই হতাশার। দীর্ঘ ৪ বছর পর পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে শুরু। এরপর ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সব শেষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। তিনটি সিরিজে বাংলাদেশের তিন ক্যাপ্টেন। টেস্টে সাকিব আল হাসান, ওয়ানডেতে তামিম ইকবাল, টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কেমন হবে তিন সিরিজের লড়াই। স্বাগতিক হিসেবে যথেষ্ট এগিয়ে থাকছে উইন্ডিজই। তিন সিরিজের ট্রফিতেই চোখ ক্যারিবীয়দের। টেস্টে না থাকলেও টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে ক্যাপ্টেন্সি করা নিকোলাস পুরান মোটামুটি আগেভাগেই সিরিজ জয়ের মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, স্মার্ট ক্রিকেট খেলেই জিততে চাই সিরিজ।
যদিও অধিনায়ক পর্বে পুরানের রেকর্ড খুব একটা ভালো না। অধিনায়ক হিসেবে দুটি সিরিজেই চরম ব্যর্থ তিনি। এর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর নিজের ব্যাটিং নিয়ে হতাশাও ব্যক্ত করেন উইন্ডিজের সাদা বলের অধিনায়ক। তবে সে হতাশা ভুলতে এখন তিনি বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে। পাকিস্তান আসার আগে নেদারল্যান্ডসে ৩-০-তে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল ক্যারিবীয়রা। তবে দুই সিরিজের একটি ওয়ানডেতেও পুরানের ব্যাট হাসেনি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম দুই সিরিজের ছয় ওয়ানডেতে ১৩.৫০ গড়ে মাত্র ৮১ রান করেছেন পুরান। তিনি সর্বশেষ হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন ১৫ ইনিংস আগে! তাই নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভীষণ হতাশ পুরান, ‘সর্বশেষ ১০-১২ ইনিংসে আমি রান করতে পারিনি। নিজের ব্যাটিং নিয়ে আমি খুবই হতাশ। বিশেষ করে ওয়ানডেতে।’ তবে সিরিজ হারলেও পাকিস্তানে দল হিসেবে তারা অনেক কিছু শিখেছেন বলেও জানান তিনি, ‘শেষ দুটি ম্যাচ আমাদের জন্য বেশ হতাশার। আমাদের ব্যাটিং খুবই বাজে ছিল। তবে দল হিসেবে আমরা মন্দ খেলিনি। পাকিস্তানের মাটিতে এ সিরিজ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে সেটা কাজে চান বলেও জানান পুরান, ‘আর কদিন পরই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হবে। এ সিরিজটির দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। আশা করছি, পাকিস্তান সিরিজে পাওয়া অনেক শিক্ষাই বাংলাদেশের বিপক্ষে কাজে লাগবে।’ ১৬ জুন থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজের জন্যও দলকে বার্তা দিয়েছেন পুরান, ‘উইকেট নিতে হবে, রান করতে হবে, স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে হবে। টেস্ট দলকে আমি শুভকামনা জানাই। বাংলাদেশের বিপক্ষে আবারো সিরিজ জয়ের অপেক্ষায় আছি আমি।’ গত রোববার মুলতানে শেষ ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে উইন্ডিজকে ৫৩ রানে পরাজিত করে পাকিস্তান। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সাদাব খানের মারকুটে ৮৬ রানের ইনিংসে ২৬৯ রান করে স্বাগতিকরা। তবে ধুলোর-ঝড়ের কারণে উইন্ডিজকে ৪৮ ওভারে ২৭০ রানের টার্গেট দেওয়া হয়। কিন্তু তারা ২১৬ রানে অলআউট হয়। উইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। ১৮ বারের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জয় মাত্র চারটিতে। ড্র দুটি। বাকি ১২ ম্যাচে জয় পেয়েছে উইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের মাটিতে বাংলাদেশ খেলেছে ৮ ম্যাচ। তাতে বাংলাদেশের জয় দুটি। হার ৫টি। এক ম্যাচ হয়েছে ড্র। উইন্ডিজে বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে সেই ২০১৮ সালে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ হয়েছিল হোয়াইটওয়াশ। নর্থ সাউন্ডে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ২১৯ রানের ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস হার হয়নি। তারপরও টাইগাররা হেরেছিল ১৬৬ রানের বড় ব্যবধানে।
ওয়ানডেতে সেই তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। দুই দল ৪১ বার মোকাবিলা করেছে। তাতে বাংলাদেশের জয় ১৮টি। হার ২১টি। দুটি ম্যাচে আসেনি রেজাল্ট। ক্যারিবীয়দের মাটিতে ১৩ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৫টি। হার ৮টিতে। সর্বশেষ আট ম্যাচেই বাংলাদেশ জিতেছে এ ফরম্যাটে। ফলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ক্যারিবীয়দের জন্য হুমকিস্বরূপ। টি-টোয়েন্টিতে দুই দল মোকাবিলা করেছে ১৩ বার। তাতে উইন্ডিজের জয় সাতটি, বাংলাদেশের জয় ৫টি। এক ম্যাচে হয়নি রেজাল্ট। উইন্ডিজের মাটিতে এ ফরম্যাটে বাংলাদেশ খেলেছে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ। জয় আসেনি একটিও। দুটিতে হার। এক ম্যাচ পরিত্যক্ত। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পরিষ্কার ফেবারিট। এরপর টেস্টে। তারপর টি-টোয়েন্টিতে। আগামীকাল থেকে বাংলাদেশ ও উইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্ট শুরু হবে। ২৪ জুন দ্বিতীয় টেস্ট। এরপর শুরু হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ২ জুলাই প্রথম টি-টোয়েন্টি। ৩ ও ৭ জুলাই পরের দুই ম্যাচ। এরপর আছে ওয়ানডে সিরিজ। ১০ জুলাই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। ১৩ জুলাই দ্বিতীয় ওয়ানডে। ১৬ জুলাই প্রভিডেন্সে শেষ ওয়ানডে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ উইন্ডিজ সফর শেষ করবে বাংলাদেশ।
মন্তব্য