ব্যবহারের অভাবে ওয়ানডে ক্রিকেটে রেকর্ডের পাতায় ধূলোর পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছিল। শুক্রবার ইংলিশ ব্যাটারদের ব্যাটিং তাণ্ডবে সে সব ধূলো উড়ে গেছে। একের পর এক রেকর্ডের পাতা উলোট পালোট হয়েছে। নেদারল্যান্ড সফরে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ইংলিশ ব্যাটাররা ব্যাটিং তাণ্ডব করেছেন। আর তাতে একাধিক রেকর্ড হয়েছে। দলীয় সর্বোচ্চ রান ৪৯৮ করে ২৩২ রানে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ইংল্যান্ডের করা ৪৯৮ রানের জবাবে নেদারল্যান্ডস ৪৯.৪ ওভারে ২৬৬ রানে অল আউট হয়।
শুধু দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েনি ইংল্যান্ডে। হয়েছে একাধিক ব্যক্তিগত রেকর্ড। সেঞ্চুরিয়ান জস বাটলার ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন। এ ম্যাচে তিনি ৪৭ বলে তিন অঙ্কের রানে পৌঁছান। এ ম্যাচের সেঞ্চুরির ফলে ইংল্যান্ডের হয়ে সেরা তিন দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক হলেন তিনি। এর আগে ২০১৫ সালে ৪৬ বলে এবং ২০১৯ সালে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ দুটো সেঞ্চুরিই তিনি করেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে।
এ ম্যাচে ৪৯৮ রানের বদৌলতে ইংল্যান্ড নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এর আগেও দলীয় সর্বোচ্চ রানের কীর্তি ছিল ইংল্যান্ডের। ৪৮১ রান ছিল এ রেকর্ড। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েছিল। মূলত দলীয় সর্বোচ্চ রানের শীর্ষ তিন রেকর্ডেরই মালিক ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করা তাদেও ৪৪৪ রান তাদের দলীয় তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
দলীয় ৪৯৮ রান করতে ইংল্যান্ড বাতাসে ভাসিয়ে ২৬ বার বল সীমানার বাইরে পাঠিয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটিও একটি রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডও ছিল ইংল্যান্ডের। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩৯৭ রান করতে তারা ২৫টি ওভার বাউন্ডারি মেরেছিল। এ ম্যাচে ২৬ ওভার বাউন্ডারির মধ্যে জল বাটলার একাই মেরেছেন ১৪টি।
৪৯৮ রানের বিশাল স্কোর গড়তে তিনটি ব্যাটার সেঞ্চুরি করেছেন। জস বাটলারের অপরাজিত ১৬২ রানের পাশাপাশি তিন অঙ্কের রানের দেখা পেয়েছেন ফিল সল্ট (১২২) ও ডেভিড মালান (১২৫)। সেঞ্চুরির দেখা পাননি লিয়াম লিভিংস্টোন। তবে ব্যাটিং তাণ্ডব করেছেন। আর তাতে ২২ বলে স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে ৬৬ রান। ছয়টা করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংস। একটুর জন্য আশা জাগিয়েও দ্রুততম অর্ধশতকের মালিক হতে পারলেন না। বর্তমানে দ্রুততম অর্ধশতকের মালিক দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স। ১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। লিভিংস্টোন ১৩ বলে ৪৬ রান করে সে কীর্তি নিজের করার সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পরের দুই বলে রান নিতে পারেননি। ফলে ১৭ বলে তিনি অর্ধশতক করেন।
ইংল্যান্ড বিশাল রানের স্কোর গড়লেও শুরুতে এমন ইঙ্গিত ছিল না। বরং ১.৩ ওভারে যখন তারা প্রথম উইকেট হারায় তখন স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ১। জেসন রয় সাত বল খেলে মাত্র ১ রানে আউট হয়েছিলেন। কিন্তু ওয়ানডাউন ব্যাটার হিসেবে ডেভিড মালান যোগ দেওয়ার পর থেকেই রানের বন্যা বইয়ে যেতে থাকে। নেদারল্যান্ডসের ফিল্ডারদের মাঠ ছেড়ে বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য করেন তারা। মাঠের পাশে বন জঙ্গল থাকায় বারবার বল হারিয়ে যাওয়ায় ফিল্ডারদের বল খুঁজে আনতে বড় একটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে।
ইনিংসের শুরুতে ইংল্যান্ড ধীর গতিতে ব্যাটিং করলেও ধীরে ধীরে বোলারদের ওপর চড়ায় হয়। তারই সুবাদে একটা সময় ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ৫০০ রানের স্কোর দেখারও স্বপ্ন দেখছিলেন কেউ কেউ। শুধু স্বপ্ন এটা বাস্তবে রূপ নেওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের খেলা ৪৯তম ওভারটি সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এ ওভারে মাত্র ৭ রান যোগ হয় ইংল্যান্ডের দলীয় স্কোরে। তারপরও শেষ ওভারে সে সম্ভাবনা ছিল। যদিও শেষ দুই বলে ১০ রান এসেছে কিন্তু এ ওভারের চতুর্থ বলে এক রান আসায় সে সম্ভাবনা অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়।
মন্তব্য