অধিনায়ক হিসেবে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন সাকিব আল হাসান। দল যেখানে বাজে হারের শিকার, ব্যাট হাতে তিনি অনন্য। টানা দুই ইনিংসে তিনি পেয়েছেন ফিফটির দেখা। কিন্তু সার্বিকভাবে অধিনায়ক হিসেবে এমন পারফরম্যান্সেও খুশি নন তিনি। কারণ দলের রেজাল্ট আগে তার কাছে। অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটে। দুই ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেভাবে লড়াই করতে পারেনি। বিশেষ করে যাদের ওপর দায়িত্ব ছিল, সেই টপঅর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পারে ২৪৫ রান। সেটাও সপ্তম উইকেটে সাকিব ও সোহানের জুটির বদৌলতে। এ জুটিতেই ইনিংস হারের লজ্জা থেকে মুক্তি পায় সফরকারীরা।
কিন্তু টেস্টে কেন এ চিত্র? গত কয়েক টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের; বিশেষ করে টপঅর্ডারের টানা ব্যর্থতায় প্রসঙ্গটা উঠে আসছে। নিবেদন ও মানসিকতার ঘাটতির বিষয়টি তো আলোচিত বরাবরই, কিন্তু টেকনিক আর সামর্থ্যওে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পিছিয়ে আছে কিনা কিংবা কতটা পিছিয়ে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে সাধারণত টেকনিকের বড় সমস্যা থাকে না। অনেক সময় কারো ছোটখাটো ঘাটতি থাকে বা খেলতে খেলতে টেকনিকে নড়চড় হয়ে যায়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭ উইকেটে হেরে যাওয়া অ্যান্টিগা টেস্টে দুই ইনিংসেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর অধিনায়ক সাকিব বলেন, সতীর্থ সব ব্যাটসম্যানের টেকনিকে অনেক ফাঁক দেখেন তিনি। তার মতে, ‘টেকনিক্যালি অনেক সমস্যা আছে। আমার মনে হয় না, টেকনিক্যালি সাউন্ড ক্রিকেটার আমাদের খুব বেশি আছে। আমাদের দলে যারা আছে, সবারই অনেক টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। তবে একটা পথ বের করতে হবে যে কীভাবে রান বের করা যায়, কীভাবে ক্রিজে থাকা যায়, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ অ্যান্টিগায় এ টেস্টে প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৪৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা যায়নি ঘুরে দাঁড়ানোর তাড়না। এবার ৬ উইকেট পড়ে ১০৯ রানে। গত কিছুদিন ধরেই এমন ব্যাটিং ধস বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সঙ্গী। গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে চমকপ্রদ জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে ক্রাইস্টচার্চে ২৭ রানে ৫ উইকেট হারায় দল। পরে ১২৬ রানে শেষ হয় প্রথম ইনিংস।
এরপর মার্চ-এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পড়ে ১০১ রানে, দ্বিতীয় ইনিংসে দলের ইনিংস শেষ হয় স্রেফ ৫৩ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পড়ে ১২২ রানে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানে পড়ে ৬ উইকেট। ব্যাটসম্যানদের এ টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধানে কোচিং স্টাফের সঙ্গে অধিনায়কের আলোচনা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্নে সাকিবের সাফ উত্তর, দায়িত্বটি তার নয়। তিনি বলেন, ‘এটা তো আমার আসলে আলোচনার বিষয় নয়। কোচেরই আলোচনা করার বিষয়। আমি যদি কোচিংও করাই, অধিনায়কত্বও করি, তাহলে তো সমস্যা। আমার যতটুকু কাজ, আমি ততটুকুতেই থাকলে ভালো হয়। আমার দায়িত্ব যতটুকু আছে, ততটুকু পালন করার চেষ্টা করব। বাকি যাদের যাদের যে অংশ আছে, তারা সবাই নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে সবার জন্য কাজটা সহজ হয়।’ অ্যান্টিগা টেস্টের পর অনেকের চোখ মুমিনুলের দিকে। তার সর্বশেষ ৮ ইনিংসের রান ৪, ০, ০, ৯, ২, ৫, ৬, ২, ০। গত জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর থেকেই রানখরা চলছে মুমিনুলের ব্যাটে। এ মুমিনুলই টেস্টে একসময় টানা ১১ ইনিংসে ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস খেলেছেন। ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগী হতেই এ সফরের আগে টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়েছেন মুমিনুল। তাতেও সাফল্য মিলছে না। অ্যান্টিগা টেস্টে করতে পেরেছেন মোটে ৪ রান, প্রথম ইনিংসে মেরেছেন ডাক। চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে পড়া মুমিনুলের আত্মবিশ^াস নেমেছে তলানিতে।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে আরেক হতাশার নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। গত ছয় ইনিংসে একবারই ছুঁয়েছেন দুই অঙ্ক। বাকি ৫ ইনিংসে করেছেন ০, ২, ৮, ১, ৭ রান। মুমিনুলের মতো সর্বশেষ ফিফটি করেছেন গত জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে। গত ৫ বছর বিসিবির সেট আপে থেকেও এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারা শান্তকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে শান্তর দুর্বলতা বেশ চোখে পড়েছে। বেশিরভাগ সময় ফিল্ডিং করে থাকেন সিøপে। অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের ব্যাটের কানায় লাগায় বল সিøপে থাকা শান্তের পাশঘেঁষে গেলেও তিনি ধরার কোনো চেষ্টাই করেননি। বোলারের হতাশামাখা চিৎকার ‘কী রে’ কানে বেজেছে অনেকক্ষণ। এখন সমর্থন পাচ্ছেন কিন্তু দ্রুত ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে না বেরোতে পারলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিন শেষে তেমনই বার্তা দিয়েছিলেন দলের নতুন টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, ‘সবচেয়ে সহজ কাজ কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচকদের। তুমি ভালো করছ না, বাদ দিয়ে দিলাম।’ অ্যান্টিগা টেস্টে শেষে এসেছে মুমিনুলের বিশ্রাম-প্রসঙ্গও। এ নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘আমার তো ওর সঙ্গে সবসময় কথা হয়। আবারো কথা হবে। ও যদি মনে করে, হ্যাঁ, ওর বিশ্রাম দরকার আছে, সেটা হতে পারে।’
মন্তব্য