ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দ্বিতীয় টেস্টেও হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে ইনিংস ব্যবধানে বড় হারের লজ্জা বাংলাদেশের সামনে চোখ রাঙাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাটিংয়ে নামাতে বাংলাদেশকে আরো ৪২ রান করতে হবে। হাতে রয়েছে মাত্র ৪ উইকেট।
বাংলাদেশ নিজেদের করা প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শেষ পর্যন্ত ৪০৮ রানে অল আউট করে। ফলে স্বাগতিক দল প্রথম ইনিংসে ১৭৪ রানে এগিয়ে থাকে। আর সেখানেই ম্যাচের ফলাফল অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। বাংলাদেশ যে আরো একটা হারের মুখে পড়েছে তা বুঝতে কোনো সমস্যা হয়নি। তৃতীয় দিন শেষে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তা অনেকটা পরিস্কার হয়ে যায়। ১৩২ রান করতে হারায় ৬ উইকেট। ক্রিজে আছেন নুরুল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। নুরুল হাসান ১৬ রানে অপরাজিত। মিরাজ রানের খুলতে পারেননি।
প্রথম ইনিংসে উইকেটের দেখা না পাওয়া কেমার রোচের হাতে এবার বাংলাদেশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। তিন উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে একটা মাইলফলকেও পা রেখেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ পেসার। পৌঁছেছেন ২৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলকে। এদিন শিকার করা তিন উইকেটের প্রথম উইকেট নিয়েই তিনি মাইলফলকে পৌঁছান। ফলে তার শিকার সংখ্যা এখন ২৫২। ৭৩ টেস্টে তিনি এ কীর্তি গড়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে তিনি এ মাইলফলকে পৌঁছান। শীর্ষে আছেন কোর্টনি ওয়ালশ। ৫১৯ উইকেট শিকার তার। এরপরে যথাক্রমে রয়েছেন কার্টলি অ্যামব্রোস (৪০৫), ম্যালকম মার্শাল (৩৭৬), ল্যান্স গিবস (৩০৯) ও জোয়েল গার্নার (২৫৯)। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বাধিক উইকেট শিকারের তালিকায় পঞ্চম স্থানে উঠে আসার সুযোগ রয়েছে তার সামনে।
১০ ওভারে ৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে কেমার রোচ দিন শেষ করেন। ওপেনার তামিম ইকবালকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেই মাইলফলকে পৌঁছে যান। তারপর একে একে তিনি তুলে নেন অপর ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও আনামুল হককে। মূলত রোচের বিধ্বংসী বোলিংয়ে বাংলাদেশের বিপর্যয়ের সূচনা। রোচের দ্বিতীয় ওভার থেকেই বাংলাদেশ তার উত্তাপটা বুঝতে পারে। এ ওভারেই তামিম ইকবালের উইকেট ঝুলিতে জমা করেন তিনি। এক ওভার বিরতি দিয়ে আবার উইকেট শিকারের উৎসব করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ পেসার। তার বলে মাহমুুদুল হাসান জয় ব্লাকউডের হাতে ধরা পড়েন। অথচ ওভারের প্রথম দুই বলের পাশাপাশি টানা তিন বাউন্ডারি মেরে ‘রোচ আতঙ্ক’ মুছে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জয়। মাত্র ১৩ রানে বিদায় নেন জয়।
পরের ওভারে রোচ আবার সতীর্থদের আনন্দে ভাসান। এ ওভারে তার শিকার আনামুল হক। চমৎকার এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রোচের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আনামুল হককে আউট ঘোষণা করেন। তবে আপত্তি ছিল আনামুলের। একই সঙ্গে আপত্তি ছিল সতীর্থ শান্তের। তার মতে বল স্ট্যাম্পের ওপর দিয়ে চলে যেত। ফলে আনামুল রিভিউ নেন। রিভিউতে দেখা যায় ব্যাটে বলে হয়নি, আর বল তার লেগ স্ট্যাম্পের ওপরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল। ফলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকে। ফলে ৪.৫ বলে ১৫ রানে রোচের শিকার দাঁড়ায় তিন উইকেট। বাংলাদেশর সংগ্রহ তখন ৩২। এ উইকেট পতনের পর বৃষ্টির কল্যাণে রোচের তোপ থেকে রেহাই পায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
বৃষ্টির কল্যাণে রেহাই পাওয়ার পর শান্তু ও লিটন দাস কিছুটা আশাবাদী হওয়ার মতো ব্যাটিং করেছিলেন। কিন্তু এ সময় রোচের সাফল্যে চুপ থাকতে পারেননি তার সঙ্গে বোলিংয়ের সূচনা করা আলঝারি জোসেপ। দুই উইকেট নেন তিনি। তার শিকারে পরিণত হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (১৬) ও ইনিংসের সেরা ব্যাটার শান্ত। ৪২ রান করেন তিনি। ৯১ বলে আটটি বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। লিটন ও সাকিবের জুটিতে বাংলাদেশ এদিন সবচেয়ে বড় জুটিটি পেয়েছে। ৫৭ রানের জুটি এটি।
এর আগে আগের দিনের অপরাজিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার কাইল মায়ার্স তার সেঞ্চুরিকে খুব বেশি দূর টেনে নিতে পারেননি। ১২৬ রানের সঙ্গে আর মাত্র ২০ রান যোগ করার পর খালেদ আহমেদের বলে শরিফুলের হাতে ধরা পড়েন। তার ১৪৬ রানের ইনিংসে ১৮টি বাউন্ডারি ও দুটো ওভার বাউন্ডারি ছিল। এছাড়া কেমার রোচের অপরাজিত ১৮ রান নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চার শ রানের সীমানা অতিক্রম করে।
ইনিংসে খালেদ আহমেদের শিকার সংখ্যা ৫। এ জন্য তার খরচ হয় ১০৬ রান। এছাড়া মিরাজ নেন তিন উইকেট।
মন্তব্য