-->

টেস্টে হারের সেঞ্চুরি

ক্রীড়া প্রতিবেদক
টেস্টে হারের সেঞ্চুরি

হার ছিল নিশ্চিত। তবে ইনিংস হার হয় কিনা, সেটা ছিল দেখার বিষয়। শেষ পর্যন্ত সেন্ট লুসিয়ায় নুরুল হাসান সোহানের দৃঢ়তায় ইনিংস হার হয়নি। তবে এড়ানো যায়নি লজ্জার হার। দ্বিতীয় টেস্টে ক্যারিবীয়দের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এ হারে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো সাকিব ব্রিগেড। এর সঙ্গে বিব্রতকর এক মাইলফলকেও পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। এ নিয়ে ১০০টি টেস্ট ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসের নবম দল হিসেবে শততম টেস্ট হারল টাইগাররা। ১৩৪টি টেস্ট খেলা বাংলাদেশ ১৬ ম্যাচে জিতেছে, ড্র করেছে ১৮ ম্যাচে।

হার অনিবার্যই ছিল বাংলাদেশের। ১৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ১৩২ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে। ইনিংস হার থেকে বাঁচতে আরো ৪৩ রানের দরকার ছিল সফরকারীদের। চতুর্থ দিন টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ, দলকে বিপদে রেখে ফিরে যান তিনি। মারকুটে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে দলকে ইনিংস হার থেকে বাঁচান নুরুল হাসান সোহান। উইকেটরক্ষক এ ব্যাটসম্যানের ঝড়ো ৬০ রানের সুবাদে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৬ রান তোলে বাংলাদেশ। উইন্ডিজের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ রান, যা ২.৫ ওভারেই তুলে নেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রেগ ব্রাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল। ব্রাথওয়েট ৪ ও ক্যাম্পবেল ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রান তোলে। জবাবে কাইল মায়ার্সের দারুণ সেঞ্চুরিতে ৪০৮ রান করে স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসেই ১৭৪ রানে এগিয়ে যায় ব্রাথওয়েটের দল। সোহান ১৬ ও মিরাজ শূন্য রানে অপরাজিত থেকে তৃতীয় দিন শেষ করেন। তৃতীয় দিনই অবশ্য জয় পেয়ে যেতে পারত উইন্ডিজ। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ১০ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ হয়। চতুর্থ দিনও ছিল বৃষ্টির হানা। ম্যাচ শুরুর সময়ের বেশ আগে বৃষ্টি থামলেও মাঠ ও ভেজা উইকেটের কারণে খেলা কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হয়।

কোণঠাসা হয়ে পড়া দলকে পথ দেখাতে নেমে কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। ডানহাতি এ অলরাউন্ডার আলজারি জোসেফের অনেক ওপরের এক বাউন্সারে ব্যাট চালিয়ে ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক জশুয়া ডা সিলভার হাতে ধরা পড়েন, ২০ বলে ৪ রান করেন মিরাজ। ইনিংস হার থেকে দলকে বাঁচাতে দ্রুত ব্যাট চালাতে শুরু করেন সোহান। ৪০ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এক পাশ সামলে রাখলেও অন্য প্রান্তে বাংলাদেশের পেসারদের আসা যাওয়ার মিছিল শুরু হয়। একে একে ফিরে যান এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ। সোহান ৫০ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন। এর আগে তৃতীয় দিন বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড় অবাদন রাখেন নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেটে থিতু হয়েও আউট হয়ে যাওয়া বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান ৪২ রান করেন। এছাড়া তামিম ইকবাল ৪, মাহমুদুল হাসান জয় ১৩, এনামুল হক বিজয় ৪, লিটন কুমার দাস ১৯ ও সাকিব আল হাসান ১৬ রান করেন। পুরো সিরিজজুড়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেওয়া কেমার রোচ ১৩ ওভারে ৫৪ রানে ৩টি উইকেট নেন। আলজারি জোসেফের শিকারও ৩ উইকেট। দুই টেস্টের চার ইনিংসেই ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ক্যারিবীয় ডানহাতি এ পেসার। রোচ, জোসেফের মতো জেডেন সিলসও ৩টি উইকেট নেন। বাকি উইকেটটি আসে রানআউট থেকে। ম্যাচসেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতেন উইন্ডিজের কাইল মায়ার্স।

প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে সেই ম্যাচ হারে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্টেও দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ব্যাটসম্যানরা। সেট হয়েও দায়িত্ব নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে পারছেন না কেউ। সেন্ট লুসিয়া টেস্ট ১০ উইকেটে হেরে অধিনায়ক সাকিবের কণ্ঠে আরেকবার হতাশার সুর। তবে জানালেন, উদ্বিগ্ন নন তিনি। সাকিব ফেরাতে বলছেন দৃঢ় মানসিকতা। সাকিব বলেন, ‘আমাদের ব্যাটিং নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। আমাদের মানসিকভাবে আরো দৃঢ় হতে হবে। টেস্ট কঠিন হবে এটা সবসময়ই জেনেছি। ম্যাচ জিততে হলে আমাদের দল হিসেবে খেলতে হবে। সাদা বলের ক্রিকেটে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল। ব্যাটসম্যানরা আবার আত্মসমর্পণ করেছে। উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছে। শর্ট বলের বিপক্ষে নড়বড়ে।’ সাকিব আরো বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের এসব সমস্যা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের কাজ করার অনেক জায়গা আছে। ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যহীনতা আর মানসিকতা দুই ম্যাচেই প্রভাব ফেলেছে। বোলাররা লড়াই করলেও স্কোরবোর্ড সে কথা বলবে না। গত ৩-৪ বছরে পেস বোলিংয়ে আমরা অনেক উন্নতি করেছি।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৩৪ (তামিম ৪০, শান্ত ২৬, লিটন ৫৩, এবাদত ২১*, শরিফুল ২৬; সিলস ৩/৫৩, জোসেফ ৩/৫০, ফিলিপ ২/৩০, মায়ার্স ২/৩৫)।

উইন্ডিজ প্রথম ইনিংস : ৪০৮ (ব্রাথওয়েট ৫১, ক্যাম্পবেল ৪৫, ব্ল্যাকউড ৪০, মায়ার্স ১৪৬; খালেদ ৫/১০৬, মিরাজ ৩/৯১, শরিফুল ২/ ৭৬)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৪৫ ওভারে ১৮৬ (শান্ত ৪২, লিটন ১৯, সাকিব ১৬, সোহান ৬০*; রোচ ৩/৫৪, জোসেফ ৩/৫৭, সিলস ৩/২১)।

উইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস : ২.৫ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩ (ব্রাথওয়েট ৪*, ক্যাম্পবেল ৯*; এবাদত ০/৯, খালেদ ০/৪)।

মন্তব্য

Beta version