শামীম হাসান: বিষয়টা কোরবানির ঈদের গরুর মতো হয়ে গেছে। ঈদের আগে যেমন কারো হাতে রশি ধরা অবস্থায় গরু দেখলেই একটা প্রশ্ন অবধারিত- ‘ভাই কত বা চাচা কত’? এখন আপনি গরু কিনেছেন না বিক্রি করতে যাচ্ছেন এটা জানা মোটেও জরুরি বিষয় নয়। আসল বিষয়, গরুর দাম জানতে হবে। এটাকে ‘বাঙালির গরু রোগ’ যদি বলা হয়, তাহলে এ সময়ে ভিন্ন এক রোগে আক্রান্ত বাঙালিরা।
নতুন রোগের নাম বলা যায় ‘পতাকা রোগ’। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস এলে নির্ধারিত দিনে অনেক ভবনের ছাদে বাংলাদেশের গর্বের পতাকা উড়তে দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান পতাকা রোগে ভিনদেশি সব পতাকা শোভা পাচ্ছে। একটা বা দুটি নয়, একাধিক পতাকা। কেউ কেউ পুরো বাড়ি ভিনদেশি পতাকায় রাঙিয়ে ফেলে। এ দৌড়ে সবার আগে রয়েছে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের পতাকা। আর এটা দেখেই বোঝা যায় বিশ্বকাপ ফুটবল দরজায় কড়া নাড়ছে।
হ্যাঁ, কয়েকদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। তাই তো এখন রাস্তায় রাস্তায় দেখা যাচ্ছে লম্বা বাঁশে একাধিক পতাকা নিয়ে ফেরিওয়ালার হাঁকডাক। আর কাউকে কাউকে একটা অবধারিত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কোন দল? অর্থাৎ বিশ্বকাপে কোন দেশের সমর্থন করেন আপনি?
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক দুরবস্থা সত্তে¡ও বাঙালির এই পতাকা রোগে কোনো ভাটা নেই, ভাটা পড়েনি সমর্থনে। এরই মধ্যে পতাকা বিক্রিতে জোয়ার শুরু হয়েছে। এই জোয়ার এতটাই বেশি যে, যে দেশের পতাকা সেই দেশেও বিশ্বকাপে উপলক্ষে এত পতাকা তৈরি হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকাটা স্বাভাবিক।
শুধু যে বাড়ির ছাদে পতাকা টানানো হয় তা নয়, ব্যক্তিগত গাড়ি, পড়ার টেবিল এমনকি অফিসের ডেস্কেও নিজ নিজ পছন্দের দলের পতাকা শোভা পেতে থাকে। স্বল্প আয়ের রিকশাওয়ালারাও এ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন না। তাদের রিকশার হ্যান্ডেলেও এখন শোভা পাচ্ছে নিজ নিজ পছন্দের দলের ছোট আকারের পতাকা।শু
ধু পতাকা বিক্রি বা কেনাতে এই রোগ সীমাবদ্ধ থাকে না। কে কত বড় পতাকা তৈরি করতে পারে, তারও একটা প্রতিযোগিতা চলে। ১০ বা ১২ ফুট নয়, শত শত ফুট দীর্ঘ পতাকা তৈরির প্রতিযোগিতায়ও নেমে পড়ে আমাদের দেশের অতিআবেগী অনেকেই। শুধু বড় পতাকা নয়, কত উঁচুতে প্রিয় দলের পতাকা ওড়ানো যায়, তারও প্রতিযোগিতা চলে অনেক ক্ষেত্রে। এমন প্রতিযোগিতায় নেমে অনাকাক্সিক্ষত প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে। উঁচুতে পতাকা টানাতে গিয়ে পড়ে বা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে দেশের দুটি জেলায়। কেউ কেউ আবার পতাকা তৈরি করে সেই দেশ ভ্রমণেরও আমন্ত্রণ পায়।
বার দুই দলের সমর্থকের দ্ব›েদ্ব মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদও হয় এই পতাকার টানটানিতে। অথচ যাদের পতাকা নিয়ে টানাটানি তাদের অনেকেই এই দেশটির কথা জানে না। আবার যে দেশের পতাকা নিয়ে টানাটানি হচ্ছে, সে দলের খেলোয়াড়দের চেনা তো দূরের কথা, নামও জানে কিনা সন্দেহ আছে।
তবে চেনাজানা বড় বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে প্রিয় দল। সে দেশ কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাই তো একটা সময় গ্রামের চাচা হাঁকডাক শোনা যেত ‘সবাই রেডি হ, আজ ম্যারাডোনার দ্যাশের খেলা।’ অবশ্য এখন আর ম্যারাডোনার কথা শোনা যায় না, যখন যেত তখন ম্যারাডোনা নিজেই একটা দেশ হিসেবে পরিচিত ছিলেন আমাদের খেলা পাগল মানুষদের কাছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য