বিশ্বকাপে শুরুর আগে কেউ কল্পনাও করেনি গ্রুপ পর্বেই এ ধরনের পরিস্থিতির সামনে এসে দাঁড়াবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু উজ্জীবিত সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে পুরো বিশ্ব যতটা না হতবাক হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হতাশা এখন আর্জেন্টিনা শিবিরে। জয় দিয়ে যেকোনো টুর্নামেন্ট শুরু করাটা সবসময়ই জরুরি।
তার ওপর ‘সি’ গ্রুপ এর সবচেয়ে ছোট দলের বিপক্ষে হেরে আর্জেন্টিনার সামনে পুরো আসরের সমীকরণই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে আজকের ম্যাচে তাই জয় ভিন্ন কোনো পথই খোলা নেই লিওনেল স্কালোনির দলের সামনে।
আলবেসেলেস্তারা যেখানে এবারের আসরের র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় নিচু দলটির বিপক্ষে ৩ পয়েন্ট হারিয়েছে, সেখানে তাদের মধ্য আমেরিকান প্রতিপক্ষ মেক্সিকো পোল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে ১ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপে শুরু করেছে। ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা জয়সহ টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনা।
অন্তত শেষ চারে খেলার জন্য ফেভারিট হিসেবেই দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নরা এবার কাতারে এসেছে। লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে খেলার আগে এসব পরিসংখ্যান খুব একটা আমলে না এলেও এখন আর্জেন্টিনার সামনে ঘুরেফিরে এসবই আসছে।
কারণ সৌদি আরব সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের ৬ মিনিটের মধ্যে ২ গোল করে সৌদি আরব সব এলোমেলো করে দিয়েছে। এর আগে পেনাল্টি স্পট থেকে লিওনেল মেসির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধ শেষে ভালোই আধিপত্য দেখিয়েছিল মেসি বাহিনী।
তাদের তিনটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল না হলেও ব্যবধানটা হয়তো আরো বাড়তে পারত। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে উজ্জীবিত ‘সি’ গ্রুপ এর আন্ডারডগরা এখন পুরো টুর্নামেন্টের চেহারাই পাল্টে দেয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
১৯৮৬ সালে লিজেন্ড দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে বিশ্বকাপের সর্বশেষ শিরোপা এসেছিল আকাশী-নীল শিবিরে। এবার মেসির সামনে শেষ সুযোগ দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা কাটিয়ে দলকে আরো একটি সাফল্য উপহার দেয়ার। কিন্তু ইতোমধ্যেই চাপে পড়া আর্জেন্টিনার সামনে এখন শিরোপার থেকে টুর্নামেন্টে টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের সঙ্গে সঙ্গে কোচ স্কালোনিও চাপে রয়েছেন।
সৌদির কঠিন রক্ষণভাগ সামলাতে গিয়ে প্রথমার্ধে ৭টি অফসাইড ট্র্যাপে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর বিপক্ষে এ দিকটির প্রতিও নজর রাখতে হচ্ছে স্কালোনিকে।
একইসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া সত্তে¡ও রক্ষণভাগকে সেভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন স্কালোনি, যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে ২ গোল হজম করতে হয়েছে। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে এলো ট্রাইদের হারানোর পর সম্প্রতি দুটি আসরে লাতিন প্রতিপক্ষদের শেষ ষোলোয় দুবার হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
২০০৪ সালের পর থেকে শেষ ১০ বারের মোকাবিলায় কোনোবারই জয়ী হতে পারেনি মেক্সিকো। এ নিয়ে টানা আটটি বিশ্বকাপে খেলা মেক্সিকো সাতবারই শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে। সাবেক আর্জেন্টাইন কোচ জেরার্ডো মার্টিনোর অধীনে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসাই এখন মেক্সিকানদের মূল লক্ষ্য।
ইনজুরি সমস্যায় মেসি পুরো দলের সঙ্গে গতকাল অনুশীলন না করলেও ম্যাচের আগে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আক্রমণভাগে মেসির সঙ্গে লটারো মার্টিনেজ ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া সৌদির বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিটই মাঠে ছিলেন।
আজকের ম্যাচে রক্ষণভাগে ক্রিস্টিয়ান রোমেরো ও নিকোলাস ওতামেন্ডির যেকোনো একজনের স্থানে মূল দলে ফিরতে পারেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। একইসঙ্গে অ্যাঞ্জেল কোরেয়া ও পাওলো দিবালারও প্রথম মিনিট থেকেই খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য