বাঁচামরার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি বেলজিয়াম

ক্রীড়া ডেস্ক
বাঁচামরার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি বেলজিয়াম

কাতার বিশ্বকাপে আজ বৃহস্পতিবার আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ এফে নিজেদের শেষ ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে ফেভারিট বেলজিয়াম। যদিও এই ম্যাচের আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের শঙ্কায় বেশ চাপে রয়েছে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলটি।

 

রেড ডেভিলসরা এ মুহূর্তে ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কোর পর গ্রুপ টেবিলের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আজকের ম্যাচে হারলেই তাদের বিদায় নিশ্চিত হবে। মরক্কোর সঙ্গে গোলশূন্য ড্র দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ক্রোয়েশিয়া পরের ম্যাচেই কানাডাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসে।

 

এই হারে কানাডার বিদায় নিশ্চিত হলেও গত আসরের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়ার শেষ ১৬-এর পথ অনেকটাই সুগম হয়। যদিও আলফোনসো ডেভিসের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল কানাডা। এই লিড তারা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত ধরে রেখেছিল। কিন্তু আন্দ্রেজ ক্রামারিচ ও মারকো লিভায়ার পরপর দুই গোলে প্রথমার্ধেই লিড কেড়ে নেয় ক্রোয়েশিয়া।

 

ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট আগে ক্রামারিচ আরো একটি গোল করার পর বেঞ্চ থেকে উঠে আসা লোভরো মায়েরের গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়েটরা। এই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ এফের শীর্ষে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া।গোল ব্যবধানে তার মরক্কোকে পেছনে ফেলেছে।

 

বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে অন্তত ড্র করতে পারলেই জøাটকো ডালিচের দলের নকআউট পর্ব নিশ্চিত হবে। আর জয়ী হতে পারলে গ্রুপ এর শীর্ষস্থান নিশ্চিত হবে। তবে মরক্কো যদি বড় ব্যবধানে কানাডাকে হারায় তবে তাদের সামনেও সুযোগ থাকবে গ্রুপ এর শীর্ষস্থান দখলের।

 

ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ১২তম স্থানে থাকা ক্রোয়েশিয়া সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা আট ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। ইউরো ২০২০-এর পর শেষ ১৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তারা মাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছে।

 

২০১০ সালে সর্বশেষ ফিফা প্রীতি ম্যাচে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। এরপর আর বেলজিয়ামকে হারাতে পারেনি। কিন্তু এবার ক্রোয়েশিয়ান ক্যাম্পের আত্মবিশ্বাস রয়েছে তুঙ্গে। শেষ ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে পুরো দলই আত্মবিশ্বাসী।

 

চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া বেলজিয়ামের এখন পর্যন্ত বড় কোনো টুর্নামেন্টে সেরা সাফল্য। বেলজিয়ামের স্বর্ণালি প্রজন্মের সামনে এখন গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কা, যা কাটিয়ে উঠতে মুখিয়ে আছে পুরো দল।

 

গ্রুপ এর প্রথম ম্যাচে সাহসী কানাডার বিরুদ্ধে কোনোমতে ১-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছিল বেলজিয়াম। কিন্তু পরের ম্যাচে উজ্জীবিত মরক্কোর সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি। ২-০ গোলের হার নিয়ে তাদের মাঠ ছাড়তে হয়েছে। এই ম্যাচের পর ব্রাসেলসের রাস্তায় উত্তেজিত সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

 

দলীয় তারকা কেভিন ডি ব্রুইনা দাবি জানিয়েছেন, তার দলে বয়স্ক খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি, যে কারণে বিশ্বকা তাদের জেতা সম্ভব নয়। যদিও বিষয়টি আমলে না নিয়ে অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড জানিয়েছেন, ডি ব্রুইনার সঙ্গে দলের মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ তৈরি হয়নি।

 

গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কায় কোচ রবার্তো মার্টিনেজও চাপে আছেন। শেষ ১৬ নিশ্চিত করতে হলে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয় ভিন্ন বিকল্প পথ খোলা নেই। ড্র করলে অবশ্য তাদের সামনে একটি সুযোগ আছে, সেক্ষেত্রে কানাডার কাছে মরক্কোকে তিন কিংবা আরো বেশি গোলের ব্যবধানে হারতে হবে।

 

সব ধরনের প্রতিযোগিতায় এ নিয়ে শেষ চারটি ম্যাচের তিনটিতেই পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে বেলজিয়াম। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে শেষ তিনটি মোকাবিলায় তারা অপরাজিত রয়েছে। এর মধ্যে গত জুনে প্রীতি ম্যাচে ১-০ গোলে জয়ী হয়েছিল বেলজিয়াম। যে কারণে কিছুটা হলেও কালকের ম্যাচের আগে এগিয়ে রয়েছে রেড ডেভিলসরা।

 

ক্রোয়েশিয়ান বস ডালিচ তার মূল একাদশে খুব একটা পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন না। ক্রামারিচ ও ইভান পেরিসিচের সঙ্গে আক্রমণভাগে লিভায়াই থাকছেন। ৩৭ বছর বয়সি লুকা মড্রিচ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে তার পজিশন ধরে রেখেছেন। তার সঙ্গে মধ্যমাঠে আরো আছেন মাতেও কোভাচিচ ও মার্সেলো ব্রোজোভিচ।

 

সেন্টার ব্যাকে ডিয়ান লোভরেন ও জোসকো গাভারডিওল তাদের জুটি ধরে রেখেছেন। জোসিপ স্টানিসিচ ও বর্না বারিসিচকে টপকে ফুল-ব্যাক হিসেবে জোসিপ জুরানোভিড ও বর্না বারিসিচের খেলার সম্ভবনাই বেশি। অন্যদিকে বেলজিয়ামের দলে মার্টিনেজ অন্তত একটি পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। মিডফিল্ডার আমাডু ওনানা নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারছেন না। তার স্থানে অ্যাক্সেল উইটসেলের সঙ্গে ইউরি টিয়েলেমানসের মূল দলে ফিরে আসা প্রায় নিশ্চিত।

 

মরক্কোর বিরুদ্ধে শেষভাগে হ্যামস্ট্রিং ও উরুর ইনজুরি কাটিয়ে বদলি বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমেছিলেন রোমেলু লুকাকু। কাতারে এটাই তার প্রথম ম্যাচ ছিল। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গেও তাকে নামানোর ব্যপারে আশাবাদী মার্টিনেজ। রেড ডেভিলসের আক্রমণভাগে যথারীতি মিশি বাটশুয়াই থাকছেন। ডি ব্রæইনা ও এডেন হ্যাজার্ডও তাদের পজিশন ধরে রেখেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য