-->

নতুন ইতিহাসের অপেক্ষায় মরক্কো

ক্রীড়া ডেস্ক
নতুন ইতিহাসের অপেক্ষায় মরক্কো

বিশ্বকাপ ফুটবল সমর্থকদের আজ ভিন্ন এক ম্যাচের আমেজ উপহার দিতে যাচ্ছে। অপরিচিত এক দল যে সেমিফাইনালে খেলতে যাচ্ছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগ থেকেই ফেভারিট হিসেবে ফ্রান্সের নাম উচ্চারিত হচ্ছিল। সেই ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আজ সেমিফাইনালে মাঠে নামছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তার প্রতিপক্ষ মরক্কো। বিশ্বকাপ ফুটবলে এ দেশটিকে একবারেই নতুন বলা যায়। নতুন কেননা এবারের বিশ্বকাপে আগে মরক্কো কখনোই সেমিফাইনালে খেলেনি। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায় ম্যাচটি শুরু হবে।

 

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ফেভারিট হিসেবেই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল। প্রথম ম্যাচেই তারা অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল। পরের ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোলে শক্তিশালী ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা নিশ্চিত করেছিল। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে এসে তাদের বড় ধাক্কাটা হজম করতে হয়। গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া তিউনিশিয়ার কাছে ০-১ গোলে হেরে যায় তারা। শেষ ম্যাচের এ হার অবশ্য ফ্রান্সের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

 

নকআউটের শুরুতে অবশ্য তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি ফ্রান্সকে। পোল্যান্ডকে ২-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড তাদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিল। অনেকটা ভাগ্যে ভর করে তারা শেষ চারে পৌঁছেছে। তাদের জায়গায় ইংল্যান্ড শেষ চারে খেললে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।

 

হ্যারিয় কেন পেনাল্টি মিস করায় শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয় নিয়ে ফ্রান্স সেমিফাইনালে পৌঁছায়। ফ্রান্সের আজকের ম্যাচের প্রতিপক্ষ মরক্কোর অবশ্য শুরুটা মসৃণ ছিল না। প্রথম ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে তারা পয়েন্ট ভাগাভাগি করে। তারপর আফ্রিকার দেশটিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ইউরোপের শক্তিশালী ও ফেভারিট বেলজিয়ামকে দ্বিতীয় ম্যাচে উড়িয়ে দিয়ে তারা উড়তে থাকে।

 

এ ওড়ার পথে তারা কানাডার টানা তৃতীয় হার নিশ্চিত করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। শুধু গ্রুপ পর্ব নয়, এ পর্যন্ত কোনো দল মরক্কোর জালে বল পাঠাতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে তারা একবারই গোল হজম করে, তবে তা ছিল আত্মঘাতী। কোয়ার্টার ফাইনালে তো মরক্কো হৃদয় ভেঙে দেয় ফুটবলের রাজপুত্র ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের। পর্তুগালকে হারিয়েই তারা সেমিফাইনালে উঠে আসে। এর আগে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেনেরও বিদায় নিশ্চিত করে তারা। এবার তাদের সামনে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। রূপকথাকে আরো দীর্ঘায়িত করার হাতছানি তাদের সামনে।

 

ভালো খেলার জন্য প্রয়োজন সুস্থ সবল খেলোয়াড়। টুর্নামেন্টের আগে বেশকিছু ইনজুরি সমস্যায় পড়লেও বর্তমান দলে ফ্রান্সের এমন কোনো সমস্যা নেই। বরং দলের সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার তালিকায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ৫ গোল করেছেন তিনি।

 

আজ তাকে গোল থেকে দূরে রাখার কাজটি করবেন ক্লাব ফুটবলে তারই সতীর্থ হাকিমি। ইন্টার মিলান থেকে দেড় বছর আগে পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই তারা সতীর্থ। অথচ আজ তারা একে অপরের শত্রু। তারা একত্রে লিগ জয় করেছেন। আরো জয় করেছেন ট্রফি ডি চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আজ তাদের সামনে সে সুযোগ নেই।

 

একই মাঠে খেলবেন, একই ম্যাচ খেলবেন অথচ জয়ের সুযোগ মাত্র একজনের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের আগে এমবাপে বলেন, ‘আমরা এখন এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে। ৪০ হাজার দর্শ এখানে আসতে পারে। তিউনিশিয়ার বিপক্ষে আমরা জিতব। তারপর আমরা মরক্কোর বিপক্ষে খেলব। সে ম্যাচে আমাকে আমার বন্ধুকে ধ্বংস করে দিতে হবে।’ এমবাপে আজ হাকিমিকে ধ্বংস করতে পারবে কিনা, তা জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে এরই মধ্যে এমবাপে একাদিক দলকে ধ্বংস্ত‚পে পরিণত করেছেন।

 

তবে আজ যে কাজটা সহজ হবে না, তা ভালো করেই জানেন এমবাপে। কেননা মরক্কোর রক্ষণভাগের নেতৃত্বে থাকবেন হাকিমি। পুরো টুর্নামেন্টে তার দল মাত্র একটা গোল হজম করেছে, তবে প্রতিপক্ষের কেউ গোল করতে পারেনি। বরং তা ছিল আত্মঘাতী। দারুণ দক্ষতার সঙ্গে হাকিমির দল স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলকে রুখে দিয়েছে। এবার ফ্রান্সকে রুখে দিলে আরো একটা ইতিহাস গড়বে তারা। আফ্রিকান প্রথম দল হিসেবে খেলবে বিশ্বকাপের ফাইনালে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version