সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ওয়েলসের গ্যারেথ বেল। দেশ এবং দেশের বাইরে বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারের জন্য ব্রিটেনের অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড় হিসেবে ওয়েলসম্যান বেলকে সমসময়ই বিবেচনা করা হয়।
২০১৩ সালে টটেনহ্যাম থেকে যখন বেল রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তখন তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার। রিয়ালের জার্সি গায়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পাঁচটি শিরোপা জয় করেছেন বেল। তার নেতৃত্বে ওয়েলস দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজেদের নামের প্রতি কিছুটা হলেও সুবিচার করতে পেরেছে। দুটি ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ ও ১৯৫৮ সালের পর প্রথমবারের মত কাতার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পিছনে বেলের অবদানই ছিল মূখ্য।
এসব অর্জনই ওয়েলসে বেলকে জনপ্রিয় খেলোয়াড়ে পরিনত করেছে। বেলের ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী সময়ে ওয়েলস ৫৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বড় কোন আসরের সেমিফাইনালে খেলেছিল। ২০১৬ সালের ইউরোর সেমিফাইনাল এখনো তাই ওয়েলসের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।
৩৩ বছর বয়সী বেল ওয়েলসের জার্সি গায়ে ১১১ ম্যাচে ৪১টি গোল করে বিদায় জানালেন যা একটি রেকর্ড। ওয়েলস সমর্থকদের কাছে লেখা আবেগঘন এক খোলা চিঠিতে বেল লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রাটা শুধুমাত্র আমার জীবনকেই বদলে দেয়নি, এখানে অনেক কিছুই জড়িত। ওয়েলসে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। এখানে আমি অধিনায়ক হিসেবে খেলেছি। আমি যে ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা অন্য কারো সাথে তুলনা হয়না।’
সাউদাম্পটনের হয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বেল তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় টায়ারের দলটির হয়ে পুরো মৌসুমে খেলে তিনি বড় দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০০৭ সালে প্রাথমিক ভাবে ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে তিনি টটেনহ্যামে যোগ দেন। কিন্তু স্পার্সদের হয়ে তার যাত্রাটা সবসময় মসৃন ছিলনা। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ২৪টি ম্যাচে বেল কোন সাফল্য পাননি।
প্রথমে লেফট-ব্যাক হিসেবে খেললেও ধীরে ধীরে এ্যাটাকার হিসেবে নিজেকে পরিনত করে তোলেন। ২০১২/১৩ মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মত তিনি প্রিমিয়ার লিগে বর্ষসেরা খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছিলেন। টটেনহ্যামের হয়ে দারুন ছন্দে থাকা বেলকে শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ বেছে নেয়। আগে থেকেই ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ও করিম বেনজেমা আক্রমনভাগে থাকলেও ঐ সময় রেকর্ড ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডে বেলকে তারা টটেনহ্যামের কাছ থেকে কিনে নেয়।
মাদ্রিদে এসেই বেলের ক্যারিয়ারে সাফল্য ধরা দেয়। অভিষেকেই বেলের গোলে মাদ্রিদ বহুল প্রতিক্ষীত ইউরোপীয়ান কাপের ১০ম শিরোপা জয় করে। কোপা ডেল রে’র ফাইনালে বার্সেলোনাকে পরাজিত করে। ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলের বিরুদ্ধে তার দুর্দান্ত ওভারহেড কিকের গোলটি এ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কিন্তু ক্যারিয়ারে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের তিনটিতেই তিনি বদলী হিসেবে খেলতে নেমেছিলেন। স্পেনে তিনি ধীরে ধীরে বন্ধু হারাতে থাকেন, কোচ ও সমর্থকদের কাছে অপ্রিয় খেলোয়াড়ে পরিনত হন। এজন্য অবশ্য ইনজুরিও দায়ী। রিয়াল মাদ্রিদের শেষের সময়টা তার মোটেই ভাল কাটেনি। ধারে ২০২০/২১ মৌসুমে আবারো টটেনহ্যামে ফিরে এসেছিলেন।
মাঝে ছয় মাসের জন্য ধারে লস এ্যাঞ্জেলস এফসিতেও খেলেছেন। সেখানে খেলেই মূলত তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আবারো আলো মুখ দেখেছে। বিশ্বকাপের প্লে-অফে অস্ট্রিয়া ও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তিনি গোল করে দলকে জয় উপহার দিয়েছিলেন। কাতার বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পেনাল্টি থেকে একমাত্র গোলটি করেছে বেল। বিশ্বকাপই ছিল ওয়েলসের জার্সি গায়ে বেলের সর্বশেষ টুর্নামেন্ট।
বাসস/এএফপি
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য