-->
লিটনের রেকর্ড, সাকিবের ৫ উইকেট

আইরিশরা পাত্তা পেল না: বাংলাদেশের ঘরেই থাকল সিরিজ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
আইরিশরা পাত্তা পেল না: বাংলাদেশের ঘরেই থাকল সিরিজ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: একটা সময় সম্মানজনক স্কোরের জন্য খেলত বাংলাদেশে। হারলেও তা যেন সম্মানজনক হয় এমন মনোভাব ছিল বোর্ড-খেলোয়াড়-দর্শক সবার। কালেভদ্রে দু-একটা জয় পেলে উচ্ছাসে ভাসত দেশ। হোলিখেলায় মেতে উঠত কিশোর-যুবা সবাই। হারলে তেমন মন খারাপ হতো না।

 

কারণ বাংলাদেশ তখন বিশ্ব ক্রিকেটে মাত্র হামাগুড়ি দিচ্ছে, শিখছে। এখন সময় বদলেছে। বদলে গেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এক দিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুনাম বিশ্বজুড়ে। এই ফরমেটে যে কারো জন্য আতঙ্কের নাম বাংলাদেশ। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টিতেও চমক দেখাচ্ছে লাল সবুজের দেশ।

 

খেলছে মনে রাখার মতো দারুণ দারুণ সব ম্যাচ। সফররত আইরিশদের বিরুদ্ধে তেমন একটি ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও মেহমানদের পাত্তা না দিয়ে বড় জয় তুলে নিল লাল সবুজের দল। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই সিরিজটা নিজেদের করে নিল সাকিব-লিটনরা।

 

২০৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯ উইকেটে ১২৫ রান করেছে আয়ারল্যান্ড। ৭৭ রানে জিতে ১ ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করেছে টাইগরারা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ২২ রানে। টেক্টর ২২ ও শেষ দিকে গ্রাহাম হুম ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরের মুখ দেখেননি। সাকিব একাই নেন ৫ উইকেট।

 

এর মধ্যে দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেয়ার গৌরব অর্জন করেন ক্রিকেটের এই পোস্টার বয়। আর এতে করে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদিকে (১৩৪) ছাড়িয়ে গড়েছেন টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড। সাকিবের উইকেট এখন ১৩৬। এ ছাড়া তাসকিন ৩টি ও হাসান নেন ১ উইকেট। ৩১ মার্চ সিরিজের শেষ ম্যাচ এখন শুধু নিয়ম রক্ষার।

 

এর আগে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। রনি আর লিটনের চোখ ধাঁধানো ইনিংসে রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে আইরিশরা। সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আকাশে মেঘ ছিল। টসের পর বৃষ্টিও হয়েছে মিনিট ত্রিশেক। এরপর খেলা শুরু হলেও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া ছিল না।

 

বন্দরনগরীতে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ব্যাটিং করতে নেমে ঝড় তুলেছেন দুই ওপেনার লিটন দাস এবং রনি তালুকদার। তাদের গড়ে দেয়া মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন সাকিব আল হাসান এবং তাওহিদ হৃদয়।

 

ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৭ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৮৩ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। তাছাড়া ৪৬ রান করেছেন রনি। আইরিশদের হয়ে ২৮ রানে ২ উইকেট শিকার করেছেন বেন হোয়াইট। ভেজা উইকেটে বরাবরই পেসাররা বাড়তি সুবিধা পান।

 

কিন্তু চট্টগ্রামে তার সিকিভাগও নিতে পারলেন না আইরিশ পেসাররা। দুই দফা বৃষ্টির পর ম্যাচ শুরু হলেও প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস এবং রনি তালুকদার। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩ ওভার ৩ বল খেলেই দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে দল।

 

বিশেষ করে লিটন একাই এদিন আইরিশ পেসারদের রীতিমতো কচুকাটা করেছেন। ১৮ বলে স্পর্শ করেছেন ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি, যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রæততম। মোহাম্মদ আশরাফুলের ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়েছেন এদিন এই উইকেটকিপার-ব্যাটার।

 

হাফ সেঞ্চুরির পর আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠেন লিটন। অপর প্রান্তে রনিও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। সবমিলিয়ে ৬ ওভার ১ বলে দলীয় শতক পূর্ণ করে টাইগাররা। এরপর তারা ওপেনিং জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন। নাইম শেখ এবং সৌম্য সরকারের ১০২ রানের জুটিকে ছাড়িয়ে যান লিটন-রনি।

 

এদিন লিটন শুধু দ্রুত তম ফিফটির রেকর্ডই গড়েননি, ছাড়িয়ে গেছেন নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসকেও। টি-টোয়েন্টিতে এতদিন তার সেরা ইনিংসটি ছিল ৭৩ রানের। আজ সেটিকে ছাড়িয়ে গেছেন। তবে ৮৩ রানের বেশি করতে পারেননি এই উইকেটকিপার-ব্যাটার। ১২তম ওভারের শেষ বলে বেন হোয়াইটের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছেন তিনি।

 

তার ৪১ বলের ইনিংসে ১০টি চারের পাশাপাশি ৩টি ছক্কার মার ছিল।

 

লিটনের বিদায়ের প্রভাব পড়ে রান রেটের ওপর। তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে শট খেলতে কিছুটা হলেও ভুগেছেন সাকিব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মক হয়েছেন অধিনায়ক। অন্যদিকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে চারে নামা তাওহিদ হৃদয় এদিন শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলেই ৮৩ মিটার লম্বা এক ছক্কা হাঁকিয়েছন এই তরুণ ব্যাটার।

 

৪৪ রান করে রনি বিদায় নিলে ভাঙে ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা রনি শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফিরেছেন হাঁফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। এই ওপেনার বিদায় নিলেও একটুও কমেনি রানের গতি। উইকেটে এসে প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন সাকিব। এর ফলে ১০ ওভার শেষে ১ উইকেটে ১৩০ রান তুলে বাংলাদেশ।

 

এদিকে হৃদয় ইনিংসের শেষ ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে হৃদয় নামের পাশে যোগ করেছেন ২৪ রান। তার ১৩ বলের ইনিংসে এক ছক্কার পাশাপাশি ৩টি চারের মার ছিল। আর সাকিব অপরাজিত থেকেছেন ২৪ বলে ৩৮ রান করে।

 

তাদের এমন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রানে থেমেছে বাংলাদেশ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version