নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ০৮:০৯ পিএম
কৃষক রইস উদ্দিন
নাটোর থেকে রাজধানী ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে কোরবানির গরু বিক্রি করে ক্রেতার কাছ থেকে জাল টাকা নিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া কৃষক রইস উদ্দিনকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এখন পর্যন্ত তাকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ওই বৃদ্ধকে ওমরাহ করার যাবতীয় খরচ বহন করবেন বলে জানিয়েছেন।
রইস উদ্দিন আড়াই বছর আগে মায়ের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় গরু কিনেন। এরপর দীর্ঘ কয়েক বছর গরুটি পরম যত্নে লালনপালন করেন তিনি। কোরবানি ঈদে গরুটি বিক্রি করে সংসারের ধার-দেনা পরিশোধ করবেন এমন আশায় নাটোর থেকে রাজধানী ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে আসেন বৃদ্ধ। সেই হাটে গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ১ লাখ ২৩ হাজার টাকায় এক প্রতারক ক্রেতার কাছে ওই গরুটি বিক্রি করেন তিনি। এ সময় প্রতারক গরুটি কিনে দ্রুত হাট থেকে চলে যান। রইস উদ্দিন এক রাখালকে খাবার কিনতে ব্যান্ডেল থেকে ১ হাজার টাকার একটি নোট দেন। এ সময় তিনি লক্ষ্য করেন, টাকার ব্যান্ডেলের উপরে একটি এক হাজার টাকার নোট ও নিচে একটি এক হাজার টাকার নোট বাদে সব টাকা জাল। এ সময় তিনি হাতে টাকার ব্যান্ডেল নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাল টাকার নোটের বান্ডেল হাতে কান্নারত অবস্থায় সেই বৃদ্ধের একটি ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়।
রইস উদ্দিন নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ইটালি ইউনিয়নের পাকুরিয়া এলাকার জব্বার প্রামানিকে ছেলে। পরিবারে তার স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন।
জাল টাকায় গরু বিক্রি করা সেই বৃদ্ধ রইস উদ্দিন জানান, মায়ের কাছ থেকে গরুটি ক্রয় করেন তিনি। গরুটি লালন-পালন করতে বিভিন্ন দোকান থেকে বাঁকিতে গরুর খাদ্য কিনতে হয়েছে। নিজে একবেলা না খেয়ে গরুটিকে খাইয়েছেন তিনি। তবুও অভাবে বিক্রি করেননি।
ঈদের দু’দিন আগে হাটে তিনজন লোক এসে গরুটি দেখে পছন্দ করে। এরপর ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা দাম মিটে। তারা টাকা গুনে ব্যান্ডেল আমার হাত দেন। আমি সরল বিশ্বাসে টাকা আর গুনিনি। এরপর সেখানে থেকে আমাদের থাকায় জায়গা আসি। খাবার কিনতে এক রাখালকে ব্যান্ডেল থেকে এক হাজার টাকার একটি নোট দেওয়ার সময় দেখতে পাই, নিচের সব টাকা জাল।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃদ্ধ আরও বলেন, সে যদি ধরা পড়তো, আমি খুশি হতাম। মানুষকে ঠকানো, তার বিচার হওয়া দরকার। আমার মতো যেন কোনো মানুষ এমন প্রতারণার শিকার না হয়।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে পাঠানো হয় তার বাড়িতে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে তাকে বিভিন্ন ব্যক্তি আর্থিক সহযোগিতা করেছে। গরু বিক্রির টাকার অনেক বেশি তিনি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে সহযোগিতা করা কোনো ব্যক্তি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
ভোরের আকাশ/আজাসা