মো. সৌরব বেতাগী, বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১০:২৬ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
বরগুনায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা (আউস)। জেলার ১০টি সাঁতার কেন্দ্রে ৩১ জন প্রশিক্ষিত প্রশিক্ষকের মাধ্যমে শিশুদের সাঁতার শেখানোর কর্মসূচি পরিচালনা করছে এই সংস্থা। এছাড়াও জেলার ৫৫টি শিশু যত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রারম্ভিক শিশু শিক্ষা ও বিকাশে অবদান রেখে চলছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যা একটি জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ দূর্ঘটনাই ঘটে বাড়ির আশপাশের পুকুর, খাল বা ডোবায়। বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে- যখন অভিভাবকরা গৃহস্থালি বা কর্মক্ষেত্রের কাজে ব্যাস্ত থাকেন। এ অবস্থায় শিশুদের সাঁতার শেখানো এবং জলাশয়গুলোর আশেপাশে সতর্ক নজরদারি বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় অভিভাবকরাও উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন। তাদের মতে, এই প্রশিক্ষণ শিশুদের শুধু সাঁতার শেখাচ্ছে না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাস ও শারীরিক বিকাশেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণকেও গুরুত্ব দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। বরগুনা জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, “সরকারের ICBC প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। আমরা তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছি।”
এ বিষয়ে আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার ইসিসিডি অফিসার ফারজানা সিকদার বলেন, “সাঁতারের কার্যক্রম শিশুদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই সাঁতারের মতো জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা অর্জন করে, যা ডুবে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। এ ধরনের কার্যক্রম শিশুদের নিরাপদ ও সুস্থ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ’’
তিনি আরও জানান, এবছর ১০টি সাঁতার কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ শিশুকে সাঁতারের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সুইমিং সুপারভাইজার মো. শিমুল খান বলেন, পানিতে ডোবা প্রতিরোধে প্রত্যেক শিশুকে সাঁতার শেখানো উচিত। প্রতিটি শিশুর জীবনে সাঁতার শেখানো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রতিটি শিশুকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা; এটা প্রত্যেক বাবা মায়ের দায়িত্ব। পানিতে ডোবা প্রতিরোধে প্রত্যেক বাবা-মায়ের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অভিভাবকদের জন্য সচেতনতা সেশনও আয়োজন করা হচ্ছে, যাতে তারা জানতে পারেন, কীভাবে বাড়ির আশেপাশের জলাশয় নিরাপদ রাখা যায় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো যায়।
সচেতনতা, প্রশিক্ষণ ও অভিভাবক অংশগ্রহণ- এই তিন উপাদানের সমন্বয়ে বরগুনায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার এই উদ্যোগ এখন এক অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠছে।
ভোরের আকাশ/জাআ