ঈশ্বরদী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫ ০১:১৮ পিএম
হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা
ঈশ্বরদীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বেড়েছে। সোমবার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো প্রায় দেড় শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
সরেজমিন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বেড ছাপিয়ে বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। স্বজন ও উৎসুক মানুষের ভিড়ে হাসপাতালে তিল ধারনের জায়গা নেই। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রতি মুহুর্তে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হুহু করে। ডায়রিয়া আক্রান্ত সব রোগীই ঈশ্বরদী ইপিজেডের নাকানো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী, আইএমবিডি কোম্পানি, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও লি. (এ্যাবা) ও রেনেসা বারিন্দ লি: নামের ৪টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে দুপুরের খাবার শেষে শ্রমিকরা অসুস্থ্য হতে থাকেন। শুক্রবার শতাধিক শ্রমিকরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার পর গতকাল সোমবার পর্যন্ত আরও দেড় শতাধিক শ্রমিক নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনসহ ডায়রিয়া উপকরণের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকেরও সংকটের কারণে হাসপাতালে আসা রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে নার্স এবং চিকিৎসকদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী এহসান জানান, কিছুক্ষণ পরপরই নতুন রোগী আসছেন। ফলে রোগীর সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে তাতে পরিসংখ্যান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস জানান, চিকিৎসায় যেন কোন ক্রটি না হয় প্রশাসনকে সে ব্যবস্হা নিতে বলা হয়েছে। তারপর ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামোগত অবস্থা ভয়াবহ রকমের নাজুক হয়ে পড়েছে। গত ৬ বছর ধরে কোনো ধরনের রং কিংবা সংস্কার কাজ না হওয়ায় হাসপাতাল ভবনের ছাদ থেকে নিয়মিতভাবে পলেস্তরা খসে পড়ে রোগী ও স্বজনদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রং ও রিপেয়ারের কাজ করা হয়। এরপর দীর্ঘ সময়েও কোনো সংস্কার হয়নি। পুরনো ভবনের ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেখান থেকে মাঝে মধ্যে পলেস্তরা খসে পড়ছে রোগীদের শরীরে ও বিছানায়। তবে এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নার্স বা স্টাফদের মাঝে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন জানান, আমার বাবাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। ভর্তির পরদিন সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে তার শরীর ও বিছানায় পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা এভাবে বিছানায় ময়লা পড়ে থাকলেও হাসপাতালের কোন ষ্টাফ তা পরিষ্কার করেনি। বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই পরিষ্কার করি। এমন ঘটনার কথা অন্যান্য রোগীরাও নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোছা. নাজনীন আফরোজ বলেন, করোনার সময় সর্বশেষ কিছুটা সংস্কার কাজ হয়েছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো রং বা সংস্কার করা হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বলেন, আমি চার মাস আগে এখানে যোগ দিয়েছি। আমার অফিস রুমের ছাদের অবস্থাও ভয়াবহ। মাঝে মধ্যে পলেস্তরা খসে পড়ে। রোগীদেরে ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে অবহিত করেছি।
ভোরের আকাশ/আজাসা