অন্তর্বর্তী সরকারকে সবাই ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে, যাতে নির্বাচন না হয়
বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারবে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা হয়েছে। এর একটাই কারণ- যাতে নির্বাচনটা না হয়। কিন্তু এই নির্বাচনে বিএনপি কোন আপোষ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট ঈদগাঁ মাঠে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা শহরে যাওয়া যায়না, বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকাতে আন্দোলন আর আন্দোলন চলছে। এখন এই দুর্বল সরকারটা, মানে অন্তর্বর্তী সরকার; তার পেছনে কোন লোকও নাই। এই সরকারকে এত ব্যতিব্যস্ত করে রাখার কোন মানে আছে বলেন? সরকারকে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখার একটাই উদ্দেশ্যে যাতে নির্বাচনটা যেন না হয় তার ব্যবস্থা করা।তিনি বলেন, জনগণ নির্বাচন চায়, জনগণ ভোট দিতে চায় এবং তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। এই ভোটে আমরা কোন আপোষ করবো না। জনগণও কোন আপোষ করবে না। এজন্য ঐসব পিআর বাদ দিয়ে আসেন সঠিকভাবে নির্বাচনটা করে যেই জিতবে, মানুষ যাকে ভোট দিবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে এবং তারা সরকার গঠন করবে। আর বাকি সবাইকে নিয়ে আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবো।বিএনপির মহাসচিব বলেন, শিক্ষকরা আন্দোলন করতেছে, আমরা বলছি- শুধু শিক্ষক নয় আমরা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে জাতীয়করণ করবো। এই কাজগুলো আমরা করবো। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং আপনারা সমান অধিকার ভোগ করবেন।মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রতিষ্ঠা করবো। এখনই আলাপ করছিলাম- ভুট্টা নাকি ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসতেছে বা বাহিরে থেকে আনতেছে। আমার কৃষকরা ভুট্টার দাম পাচ্ছে না আর সরকার ভুট্টা বাহিরে থেকে নিয়ে আসতেছে। এটা এই অন্তর্বর্তী সরকার ভুল করছে। এসবের আগে কৃষকদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। ঠিক একি ভাবে ধানে মূল্যও দিতে হবে।জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সারের খুব সংকট, ডিসিদেরকে বলতে হবে- আপনার বাড়ি ঐ কিশোরগঞ্জে, ঐদিকে শুধু পানি আর পানি; আমাদের এদিক তো পানি বেশি নাই। আমাদেরকে কৃষি কাজ করে খেতে হয়, আর পানি ডিপটিউবওয়ের বা শ্যালো মেশিন থেকে নিতে হয়।তিনি বলেন, সারটা আমরা ঠিকমত চাই। এই কথাগুলো তো আপনারা বলেন না, মুখ বন্ধ করে রাখলে কেউ আপনাকে দিবে? মুখ বন্ধ করে থাকলে কেউ কথা শুনবে না। যদি কথা না শুনে ডিসি অফিস ঘেরাও আমি বলতেছি আপনাদেরকে। কৃষকদের দাবিতে বা সারের দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও করতে হবে। ঐ আমলাতন্ত্রগিরি এখানে বেশি করবেন না। আপনারা জনগণের কথা শুনবেন।মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, আমরা যদি আপনাদের ভোটে জয়ী হতে পারি তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে আমরা যে প্রতিজ্ঞাগুলো করেছি ৩১ দফার, সেই ৩১ দফার পুরোপুরি পালন করবো। আমরা বলেছি প্রত্যেকটি মায়ের হাতে আমরা একটা করে ফ্যামিলি কার্ড করে দিবো, এই ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে সে সবখানে যেতে পারবে- তার দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। মেয়েদের লেখাপড়া আমরা গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত ফ্রি করে দিবো। আমরা বেকার সমস্যার সমাধান করবো, এই কাজগুলো আমরা করবো এবং মানুষের কাছে যাবো।তিনি বলেন, আমরা ভোট একটাই বুঝি- আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো। সেটা এক ব্যক্তি- এক ভোট। আর পিআরটা হচ্ছে- ওটা কোন ব্যক্তিকে ভোট দিবো না, দলকে ভোট দিবো। সর্বনাশ কাকে ভোট দিচ্ছি আমি জানবো না! দলটাকে ভোট দিলে সেটার কি হবে সেটাও বলতে পারবো না ঠিকমত। তাহলে সেই ব্যবস্থায় আমি যাবো কেন?ফখরুল বলেন, যদি পিআরের জন্য সবাই একমত হয় তাহলে মানুষ চিন্তা করে দেখবে। ঐজন্য আমরা বলেছি যে- আগামী নির্বাচনটা হোক, পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত হবে- জনগণ ভোট দিয়ে ঠিক করবে কারা যাবে এবং পিআর হবে কি হবেনা। কারণ দেশটার মালিক তো জনগণ, সেই জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা পিআর করবে কি করবে না।তারজন্য আমরা বলেছি যে- পিআরের সিদ্ধান্তটি সঠিক নয়, আসুন আমরা সবাই মিলে নির্বাচনটা করি; যারাই জিতি সবাইকে নিয়ে একসাথে তখন আমরা এই আলোচনাগুলো করবো, তর্ক-বিতর্ক করবো কিন্তু মারামারি আর করতে চাইনা ভাই। আর প্রাণ দিতে হবেনা বাচ্চাদেরকে। এ অবস্থা আর তৈরি করবেন না।মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়মটা যখনই হাসিনা বন্ধ করো দিলো, কেন বন্ধ করলো- তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে তো জিততে পারবে না। ভালো কাজ করিনাই, জনগণ ভোট দিবে না। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ, দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন হবে। এলা শেয়ালের কাছত যদি মুরগীডা দেন, ঐডা কি থাকিবে? এমন কাজ করছে যে- নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে শেষ করে দিয়েছে। শুধু জাতীয় সংসদ ভোট না, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একই কাজ করেছে।সবখানে হস্তক্ষেপ করেছে এবং সবখানে নিজের দলকে জিতাতে হবে। বন্ধুগণ সেই ব্যবস্তার অবসান হচ্ছে, আল্লাহ আমাদের এতদিন সাহায্য করেছেন, আবারও সাহায্য করবেন। আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। সেই সঠিক সিদ্ধান্তগুলোই আমাদেরকে নিতে হবে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেই গণতন্ত্রকে আমরা যেন প্রতিষ্ঠা করতে পারি; এই আহ্বান আমি সকলের কাছে জানাবো।তিনি বলেন, আমাদেরতো টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠানোর ইচ্ছা থাকবে না। আমরা সেটা করিনাই। কেউ বলতে পারবে না আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ টাকা নিয়েছি কোন কাজ করার জন্য।গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে সাংবাদিকরা, কষ্ট করে রোদে দাঁড়িয়ে তাদের কাজ করছেন; তারপরও তাদের শান্তি এখন তারা যা পাঠাবে সেটাই প্রকাশ হবে। কিন্তু তখন কাট কাট আর কাট। অর্থাৎ কোনটা সংবাদ যাবে আর কোনটা সংবাদ যাবেনা ঐটা ঠিক করতো আওয়ামী লীগের লোকেরা। এইযে ব্যবস্থা এটাকে আমরা পরিবর্তন করবো অর্থাৎ সাংবাদিকদের যা খুশি ইচ্ছা হবে লিখবে সত্য কথা- বস্তুনিষ্ঠ কথা।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, প্রফেসর ইউনূস, বিশ্বিবিখ্যাত ব্যক্তি; তিনি বলেছেন- ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আমরা চাই সেই নির্বাচনটা হোক, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার একটা পথ খুঁজে পাবো।তিনি বলেন, আজকে যে সুযোগটা আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছে, একটা মুক্ত বাতাস, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। নিজের ভোট নিজে দেওয়ার এবং আপনার পার্লামেন্ট আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন; আপনার সরকার আপনি গঠন করবেন। এই সুযোগটা এখন আমরা পেয়েছি।মির্জা ফখরুল বলেন, আমার এখন ৭৮ বছর বয়স, আপনাদের সামনে আবার আসছি। গত ১৫ বছরে আপনাদের সামনে আসার সুযোগ তারা দেয়নি, আপনাদের সেবা করার সুযোগ তারা দেয়নি। আমরা আসছি- এবার আপনাদের কাছে আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই সুযোগটুকু আপনাদের কাছে চাই। আমরা পরিক্ষিত দল, সরকারে ছিলাম, আল্লাহ যদি সুযোগ করে দেয় তাহলে আবার সরকারে যাবো এবং জনগণের জন্য কাজ করবো।এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিনসহ বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।ভোরের আকাশ/জাআ