নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫ ০১:০১ পিএম
বিলুপ্তির পথে তিন শতাব্দীর ধরমপুরের মসজিদ
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ধরমপুর গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এক শৈল্পিক ও নান্দনিক কারুকাজে নির্মিত একটি মসজিদ। যেটি বর্তমানে এলাকাবাসীর কাছে ‘ভাঙা মসজিদ’ নামে পরিচিত। স্থাপত্য কৌশল ও নির্মাণশৈলীতে অনন্য এই মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
এই মসজিদটি কত বছর আগে নির্মিত হয়েছিল, তার নির্ভরযোগ্য তথ্য মেলেনি। তবে প্রাচীন এক শিলালিপির ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, ১৭০০ সালের দিকে মসজিদটি নির্মিত হয়। অনেকে মসজিদের নকশা দেখে একে মোগল আমলের স্থাপত্য বলে মনে করেন। আবার গ্রামের প্রবীণদের মতে, এই মসজিদটির নির্মাণকাল ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদের সময়কালেই পড়ে।
১৯২০ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটির নয়টি গম্বুজ ভেঙে পড়ে। এর পর থেকেই উপরের অংশ ফাঁকা হয়ে যায় এবং শুরু হয় ধ্বংসের যাত্রা। আশির দশক থেকে মসজিদটির অবস্থা আরও নাজুক হতে থাকে। দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে, চারপাশে গজিয়েছে আগাছা। নামাজ পড়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এলাকাবাসী পরে পাশেই একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন।
ধরমপুর পাইকপাড়া-মন্ডলপাড়া হাফিজিয়া মাদরাসার সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন আলী বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের জমির পরিমাণ ১৩ শতাংশ। ২০ বছর আগেও এটি অনেক সুন্দর ছিল। শুধু দুই ঈদের নামাজ এখানে আদায় হতো। শেষ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে। বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি, ১৯২০ সালের ভূমিকম্পে ৯টি গম্বুজসহ মসজিদের কিছু অংশ ধসে পড়ে। এরপর থেকেই এটি ভাঙা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। মসজিদের বড় বড় পাথর ৩০-৩৫ বছর আগে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আনিছুর রহমান জানান, বিভিন্ন সময় কিছু কর্মকর্তা এসে মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। গত বছর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন এবং ছবি তোলেন। তবে এরপর আর কোনো খোঁজখবর নেই।
এক সময়ের স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য এ মসজিদটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হোক, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এর গৌরবময় অতীত সম্পর্কে জানতে পারে।
ভোরের আকাশ/আজাসা