দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০১:৪৮ পিএম
ছবি : ভোরের আকাশ
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনাজপুরে শুরু হয়েছে আগাম আলু চাষ। কৃষকেরা হালচাষ, বীজ বপন ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে এবার আগাম জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধারণা করা হচ্ছে।
তবে চাষের শুরুতেই সার সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আলু বীজের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় কৃষকের সাময়িক সুবিধা হলেও, সার ও কীটনাশক সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
জানা যায়, কৃষকেরা এবার বিনা-৭, সানসাইন ও স্টারিজের মতো আগাম জাতের আলুর বীজ বপন করছেন। বিগত বছরগুলোতে যে আলুবীজ জাতভেদে ৫৭ টাকা থেকে ৬৬ টাকা পর্যন্ত সরকার মূল্য নির্ধারণ করলেও কৃষককে কিনতে হতো ৮০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজিতে, সেই বীজ এবার বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে।
চাষিরা জানিয়েছেন, সামনে এই দাম আরও কমতে পারে। বীজের এই অবিশ্বাস্য কম দাম আলু চাষের খরচ কিছুটা কমালেও, সারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো।
কৃষকদের অভিযোগ, ডিলাররা সরকার-নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো দামে সার বিক্রি করছেন। সারের মূল্যে অতিরিক্ত মুনাফার স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছেন কৃষকরা: টিএসপি: সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকায়। ডিএপি: সরকারি মূল্য ৯৫০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকায়। এমওপি: সরকারি মূল্য ৯০০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। ইউরিয়া: সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকায়। এ ছাড়াও, বিদেশি সার যেমন তিউনেশিয়ার টিএসপি ২০০০ টাকা, দেশি টিএসপি ২৪০০ টাকা; মরক্কোর ডিএপি ১৭০০-১৮০০ টাকা, দেশি ডিএপি ২০০০ টাকা; কানাডার এমওপি ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও মারাত্মক অভিযোগ হলো, কৃষকেরা সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার কিনলেও ডিলাররা কোনো ভাউচার দিচ্ছেন না। সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জুয়েল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ডিলাররা সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। আবার রশিদ চাইলে সার নেই বলে ফেরত দেন। তাই বাধ্য হয়ে রশিদ ছাড়াই বেশি দামে সার কিনছি। এর ফলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সার কিনেও কৃষকদের কাছে কোনো আইনি প্রমাণ থাকছে না।
তবে আশার কথা, মজুরের দাম গত বছরের মতোই রয়েছে। কৃষকেরা আশা করছেন, ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে তাদের ফলন ঘরে উঠবে এবং একরপ্রতি ১৪০-১৫০ মণ আলু উৎপাদন হতে পারে। অগ্রহায়ণ মাসের মূল মৌসুমের আগেই আশ্বিন মাসে আগাম চাষের মূল কারণ প্রথম দিকের ফসলের ভালো দাম পাওয়া।
এ ব্যাপারে ডিলারদের কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এক নেতা স্বীকার করেন, আলু বীজের দাম এবার বাজারে অনেক কম। তবে একটি সিন্ডিকেট আছে, যে কারণে সার বেশি দামে বিক্রি হয়। ইচ্ছে করলেও কেউ একা কিছু করতে পারে না।
এদিকে, সার বরাদ্দ ও বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, যদি বেশি দামে সার বিক্রি হয়ে থাকে, তাহলে খবর নিয়ে তদন্ত করে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠে আমাদের তদারকি টিম কাজ করছে।
কৃষকদের প্রশ্ন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কেনা গেলে যেখানে আলু উৎপাদনের খরচ আরও কমত, সেখানে সার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কেন তারা লোকসানের ঝুঁকিতে পড়বেন? সরকারের উচিত দ্রুত এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করা।
ভোরের আকাশ/মো.আ.