গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫ ০৩:৩৯ পিএম
কোরবানির ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত গাইবান্ধার কামার শিল্পীরা
কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধার কামার শিল্পীরা। তাদের টুংটাং শব্দে জানান দিচ্ছে কোরবানি ঈদ আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই। তাই প্রয়োজনীয় দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি তৈরিতে এখন দিনরাত কাজ করছেন তারা।
গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও কামারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যন্ত জনপদের কামারিদের দোকানগুলোতে লাল আগুনের লোহায় তাদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে। তাই তো টুংটাং শব্দটি এখন তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ।
জানা যায়, জেলা শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে তাদের এই শিল্প।
সদর উপজেলার তুলসিঘাট এলাকার কামারী নিরঞ্জন কর্মকার (৫৮) বলেন, সারা বছর এই কোনবানির ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এ সময়টিতে যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা অনেকেই চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি পাওয়া যায়। বাপ দাদা এই পেশায় তিনি ৪০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এবছর লোহা আর কয়লার দাম বেশি থাকায় মজুরিও একটু বেশি নিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের পরিচিত কিছু গ্রাহক দা, বটি, ছুরি বানানোর অর্ডার দিয়ে গেছেন এবং ধার দেওয়ার অর্ডার পেয়েছি। পাশাপাশি নতুন বটি, ছুরি তৈরি করছি। বিশেষ করে কোরবানির ৩-৪ দিন আগে গ্রাহকের আনাগোনা আরও বেড়ে যায়।
সদর উপজেলার কামারজানী বন্দরের কামারী রিদয় কর্মকার (৪৫) বলেন, এক সময় এ পেশার কদর থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই। শুধু ধান কাটামারি আসলে আর এই কোরবানি ঈদ আসলে কাজ কিছুটা পাওয়া যায়। এই সব মৌসুমে কাজ করে তো আর সারা বছর চলে না। নিজেরা কি খাই বউ বাচ্ছা কি খাওয়াই এসব চিন্তা করতে জীবনটা অতিবাহিত হয়ে গেল। তার পরেও বাপ দাদার পেশা দেখে কাজ করে খেতে হয়। এবয়সে আর অন্য কাজ করে খেতেও পারবো না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দিনে ২-৩ হাজার টাকার কাজ করা গেলেও খরচ ছাড়া ৭০০-৮০০ টাকা ইনকাম করা যায়।
কথা হয় দা বানাতে আসা আফছার উদ্দিনের সঙ্গে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোহার তৈরি জিনিসের দামও অনেক বেড়েছে। দা ২৫০-৩৫০ টাকা, ছুরি ১৫০-৪০০ টাকা, বটি ৩০০-৫০০ টাকা, চাপাতি ১,০০০-১৫০০ টাকা করে বেচা-কেনা হচ্ছে। তার পরেও কোনো উপায় নেই কোরবানি দিব তাই বানাতেই হবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা