নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ০২:২২ এএম
ছবি সংগ্রহীত
ভবিষ্যৎ প্রজন্মই দেশ পরিচালনা করবে, তারা যেন কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে সমাজের বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়, সে জন্য প্রতিটি শিশুর টিকাদান নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকালে জেলা সদর উপজেলার হাজীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি সরকারের এই জনস্বাস্থ্য উদ্যোগকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে বলেন, “৯ মাস বয়স থেকে ১৫ বছরের নিচের শিশু-কিশোররা এই টিকা পাবে। একজনও যেন টিকাদান কর্মসূচি থেকে বাদ না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে আরও বলেন, “কোনো শিশু যদি কোনো কারণে বাদ পড়ে, তবে তারা পরবর্তীতে উপজেলা হাসপাতালের স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে টিকা নিতে পারবে। কেউ যদি টাইফয়েড টিকা থেকে বঞ্চিত হয়ে ভবিষ্যতে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, তাহলে সেই দায় আমাদের নিতে হবে।”
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আরও বলেন, “আমরা চাই আমাদের সন্তানরা যেন শক্তিশালী, সুস্থ ও কর্মক্ষম হয়ে দেশের সম্পদে পরিণত হয়। সরকার এই টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুস্বাস্থ্যে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।”
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ৫ লাখ ১ হাজার ৭২১ জন শিশুকে আগামী ১৮ কর্মদিবসের মধ্যে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয়। টিকাদান কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে, যারা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নির্ধারিত স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে টিকা প্রদান করবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহাম্মদ মুশিউর রহমান। উদ্বোধনী মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আলমগীর হোসাইন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা শিরিন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিশুকে প্রতীকীভাবে টাইফয়েড টিকা প্রদান করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি টিকাদান কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নেন।
উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, “এই টিকাদান কর্মসূচি শুধু একটি স্বাস্থ্য উদ্যোগ নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিনিয়োগ। আমাদের দায়িত্ব প্রতিটি শিশুকে নিরাপদ রাখা। যেসব পিতা-মাতা এখনো সচেতন নন, তারা যেন দ্রুত তাদের সন্তানদের এই টিকা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহাম্মদ মুশিউর রহমান জানান, সরকার ঘোষিত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “টাইফয়েড একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। কিন্তু সময়মতো টিকা না নিলে তা মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে। আমরা আশা করি, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জেলার লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন সম্ভব হবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়ক র্যালিতে অংশ নেয়। রঙিন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে তারা টাইফয়েড প্রতিরোধে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেয় আশপাশের এলাকাজুড়ে।
নারায়ণগঞ্জে শিশুদের জন্য শুরু হওয়া এই টিকাদান কর্মসূচি জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এক বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, এই ক্যাম্পেইনের সফল বাস্তবায়ন হলে আগামী প্রজন্ম হবে টাইফয়েডমুক্ত—একটি সুস্থ ও নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ গঠনের পথে এটি হবে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।
ভোরের আকাশ//হ.র