ব্যাংক খাত স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে আরও কঠোর ও সুসংগঠিত পদক্ষেপ নিতে পারবে। এ লক্ষ্যে ৬৭ পৃষ্ঠার ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে গত শুক্রবার (৯ মে), ছুটির দিনেই।
এর আগে ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন করে। নতুন বিধানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে কোনো ইসলামী ধারাসহ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তর আদেশ জারি করতে পারবে। তবে শেয়ার গ্রহণকারী অবশ্যই সরকারি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান হতে হবে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের মালিকানা যদি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যাংকের সম্পদ অপব্যবহার করে, বা প্রতারণার আশ্রয় নেয়- তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে রেজুলেশনের মাধ্যমে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রয়োজনে ওই ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ, মূলধন পুনর্বিনিয়োগ, সম্পদ ও শেয়ার তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর এবং কার্যক্রম আংশিক বা পুরোপুরি স্থগিত করার সুযোগও থাকবে।
ব্রিজ ব্যাংকের ধারণা ও অবসায়ন প্রক্রিয়া দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ‘ব্রিজ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে বিক্রিও করা যাবে। ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের মাধ্যমে অবসায়নের উদ্যোগ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অবসায়ক নিয়োগ ও দায় নিষ্পত্তির সময়সীমাও নির্ধারিত করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত দায় ও জরিমানা : ব্যাংকের ব্যর্থতায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণ করে বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তির কর্মকাণ্ড বা সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকের ক্ষতি হয়, তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। এছাড়া অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা হারে দণ্ড আরোপের বিধান রাখা হয়েছে।
সংকট ব্যবস্থাপনায় আন্ত-প্রাতিষ্ঠানিক কাউন্সিল
ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবিলায় গঠিত হবে সাত সদস্যবিশিষ্ট ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল, যার নেতৃত্বে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। অন্য সদস্যরা হলেন- অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিএসইসি চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইজন ডেপুটি গভর্নর। এই কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে বৈঠক করবে এবং আপৎকালীন সংকট পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
পর্বতসম খেলাপি ঋণের জেরে বড় নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। যে হারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সেই হারে মুনাফা করতে না পারায় দুর্বল-সবল মিলিয়ে বেশ কিছু ব্যাংক পর্যাপ্ত প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি। এই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় গুণ বেশি যা দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বল ভিত্তি নির্দেশ করছে।বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, বিতরণকৃত প্রতিটি ভালো ও মন্দ ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংক প্রতিবছর যে পরিচালন মুনাফা করে সেখান থেকে প্রভিশন রাখতে হয়। পরিচালন মুনাফা থেকে প্রভিশন রাখা ও কর্পোরেট ট্যাক্স পরিশোধের পর নিট মুনাফা প্রকাশ করে ব্যাংক।প্রভিশন সংরক্ষণের মাধ্যমে মূলত সঞ্চয়কারীদের আমানতের নিরাপত্তা বিধান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্ত সঞ্চিতি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে থাকা আমানতকারীদের অর্থ আরও ঝুঁকিতে পড়ছে। এই তালিকায় দুর্বল ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু সবল ব্যাংকও রয়েছে। তারা নিট বা প্রকৃত মুনাফা বেশি দেখাতে গিয়ে প্রভিশন সংরক্ষণ করছে কম।নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো প্রতি বছর যে পরিচালন মুনাফা করে সেখান থেকে সাধারণ ক্যাটাগরির বা ভালো মানের ঋণের বিপরীতে ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। বিতরণকৃত ঋণের ঝুঁকির ওপর প্রভিশনের হার বাড়ে-কমে।এছাড়া যেসব ঋণ নিম্নমানের খেলাপি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হয় সেগুলোর বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ খেলাপি ঋণ রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং করার বিধান রয়েছে। এসব ঋণ ফিরে আসার সম্ভাবনা কম থাকায় শতভাগ প্রভিশন রাখার নিয়ম।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রভিশন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথমত যাতে আমানতকারীদের সঞ্চয় নিরাপদ থাকে। পাশাপাশি খারাপ ঋণ দিয়েও যাতে ব্যাংকের মালিকপক্ষ মুনাফা তুলে নিতে না পারে। কিন্তু ব্যাংকগুলো নানা অজুহাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি না রেখে পার পেয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা সঞ্চিতি পরে রাখা হবে (ডেফার্ড সুবিধা) এই অজুহাত দিয়ে নিট মুনাফা বেশি দেখিয়ে ডিভিডেন্ড নিচ্ছেন কিছু ভালো ব্যাংকের মালিকরাও।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ টাকা। এর আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতের প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। তারও আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা।এছাড়াও গত বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চে প্রভিশন ঘাটতি ছিল মাত্র ২৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। যা এক বছরের বেড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় গুণ। তথ্য বলছে, মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। তারও আগে গতবছরের সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ২০৪ কোটি টাকা।তথ্যানুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুরোর প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৫৮ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা বা দ্বিগুণেরও বেশি। তারও আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। তবে বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪৩২ কোটি টাকাও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রবিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা।এদিকে ২০২৫ সালের মার্চ শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যা তৎকালীন বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক ভোরের আকাশ’কে বলেন, প্রভিশন হলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে রক্ষাকবচ। ব্যাংক নিজের অর্থ ঋণ দেয় না। সঞ্চয়কারীরা যে আমানত রাখেন সেখান থেকেই ঋণ বিতরণ করে থাকে। তাই যেসব ব্যাংক বছরের পর বছর ধরে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পর্যাপ্ত প্রভিশন রাখছে না তাদের ঋণ কার্যক্রম স্থগিত বা সীমিত করে দেওয়ার পরামর্শ দেন মাজেদুল হক।প্রভিশন ঘাটতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, মূলত তিনটি কারণে প্রভিশন ঘাটতি হতে পারে। যখন ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তখন ব্যাংক সেই ঋণের জন্য প্রভিশন রাখে। যদি প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ প্রভিশনের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঘাটতি দেখা দেয়।এছাড়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ভবিষ্যত ঝুঁকির জন্য পর্যাপ্ত তহবিল গঠন না করে, তাহলে প্রভিশন ঘাটতি হতে পারে। পাশাপাশি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণের ঝুঁকি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে বা প্রভিশন কম ধরে, তাহলেও ঘাটতি তৈরি হয়। প্রভিশন ঘাটতির ফলে ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা কমে যায় বলে জানান মাজেদুল হক। এ পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসতে নিয়মিত ঋণের মান মূল্যায়ন করা সহ ঋণ আদায়ের কঠোর নীতি প্রয়োগ করার পরামর্শ এই বিশ্লেষকের।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দীর্ঘদিন পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাচ্ছে বেসরকারি খাতে দেশের অন্যতম বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংক এশিয়ার সাবেক কর্মকর্তা আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী আগামী জুলাই মাস থেকে ন্যাশনালের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকের অনুমোদন মিলেছে। আদিল চৌধুরীর মেয়াদ হবে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। তিনি ২০২০ সালের আগস্টে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ব্যাংক এশিয়ায় যোগ দেন। এরপর তিনি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। একই ব্যাংকে তিনি এমডি পদে বসেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। তবে আট মাসের মাথায় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি।এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে সরে দাঁড়ান তৌহিদুল আলম খান। তার সঙ্গে পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আব্দুল মতিনও। বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের (এনবিএল) এমডি পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ইমরান আহমেদ।ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ও কর্মকর্তাসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কাগুজে বিল সৃষ্টি করে ঋণের ৪৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়। আসামি করা হয় দীর্ঘদিন ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণে থাকা সিকদার পরিবারের কয়েক সদস্যকে।সিকদার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিবাদের জেরে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে। তার সময়ে ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে এনবিএলকে একীভূত করার আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে সেই আলোচনা আর এগোয়নি।এর মধ্যে ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মে ধুঁকতে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ে। অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়, তার আগ পর্যন্ত পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের হাতে। পরে এ ব্যাংকের পুরনো উদ্যোক্তা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরে আসেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দখলদার ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাবে বিশ্ববাজারে ক্রমেই বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলার পর শুক্রবার এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছিল। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬ সেন্ট বা দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৪ দশমিক ২৯ ডলারে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ২১ সেন্ট বা দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ৭৩ দশমিক ১৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে।এর আগে দিনের শুরুতে ব্যারেল প্রতি ৪ ডলার পর্যন্ত দাম বেড়েছিল জ্বালানি তেলের। তারও আগে শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৭ শতাংশ বেড়ে যায়, যা গত জানুয়ারির পর থেকে সর্বোচ্চ দর।গত শুক্রবার ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। জবাবে সেদিন থেকেই ইসরায়েলের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সোমবারও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিব ও হাইফা পোর্ট সিটিতে অন্তত দু’টি ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বের মোট তেল ব্যবহার্যের এক-পঞ্চমাংশ প্রায় ১৮-১৯ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন এই প্রণালী দিয়ে যাতায়াত করে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
নতুন করে আরও চারটি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে। এতে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪৮টি। পরিবেশবান্ধব সনদ পাওয়া নতুন কারখানাগুলো হচ্ছে মানিকগঞ্জের অ্যাডভান্স অ্যাটায়ার, নরসিংদীর আমানত শাহ ফেব্রিকস (ওভেন কম্পোজিট), গাজীপুরের কটন ফিলড বিডি (প্রোডাকশন বিল্ডিং), ঢাকার উত্তরখানের কেএম অ্যাপারেল নিট।যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে এই পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে চারটি কারখানা। এ সনদ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পরিপালন করতে হয়। মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনো কারখানা ৮০-এর বেশি পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ পেলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ নম্বর পেলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেওয়া হয়।নতুন সনদ পাওয়া চারটির কারখানার মধ্যে তিনটি লিড প্লাটিনাম পেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে অ্যাডভান্স অ্যাটায়ার, আমানত শাহ ফেব্রিকস ও কটন ফিলড বিডি। অন্যদিকে কেএম অ্যাপারেল নিট লিড গোল্ড সনদ পেয়েছে। বাংলাদেশের যে ২৪৮টি কারখানা এখন পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে, তার মধ্যে ১০৫টি কারখানা প্লাটিনাম সনদ, ১২৯টি গোল্ড সনদ পেয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের কারখানাগুলো সর্বোচ্চ মানের পরিবেশবান্ধব কারখানার শর্ত পূরণ করতে পারছে। বাকি ১৪টি কারখানার মধ্যে সিলভার সনদপ্রাপ্ত কারখানা ১০টি এবং সার্টিফায়েড সনদপ্রাপ্ত কারখানা ৪টি।তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ভোরের আকাশকে বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৬৮টি কারখানাই এখন বাংলাদেশের।ভোরের আকাশ/এসএইচ